একজন নতুন সাইট ইঞ্জিনিয়ারের কাজের দায়িত্ব

Image result for সাইট ইঞ্জিনিয়ার
সংগৃহীত

অনেক নতুন সদস্য সংযুক্ত হয়েছেন আমাদের সাথে, যারা সদ্যপাশকৃত। আবার অনেক পুরাতন সদস্য আছেন, যারা সম্প্রতি সরকারী চাকরী পেয়েছেন,বা বেসরকারি কোম্পানীতে সাইট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে নিয়োগ হয়েছেন কিন্তু নির্মাণ কাজের সাথে সরাসরি তেমন যুক্ত হননি/ ছিলেন না। শুধু তাদের জন্যই একটু শিক্ষনীয় পোষ্ট তৈরি করলাম। আজ থাকছে কোম্পানীর "সাইট ইঞ্জিনিয়ারের" কাজের দায়িত্ব।
আপনি যখন কোন রিয়েল এস্টেট, হাউজিং কোম্পানী, ডেভলপার কোম্পানী, আদর্শ ঠিকাদারী কোম্পানী ইত্যাদির "সাইট ইঞ্জিনিয়ার" হিসাবে কর্মরত থাকবেন।

মূলনীতিঃ- "কোয়ালিটি ঠিক রাখতে নির্মাণ সামগ্রী যতটুকু লাগবে ততটুকু লাগাবো, কম বা বেশি দিব না" ।

1. ফ্লোর টু ফ্লোর এর উচ্চতা কত দেওয়া আছে, ড্রইং দেখে জেনে নিতে হবে। 
2. কলাম ঢালাই করার আগে ফ্লোর টু ফ্লোর উচ্চতা থেকে উক্ত কলামের উপর অবস্থান করবে এমন বীমসমূহের মধ্যে সর্বোচ্চ উচ্চতার বীম বিয়োগ করে কলামের ঢালাইয়ের উচ্চতা নির্ধারন করতে হবে। 
3. স্লাবে এবং বীমের জন্য (1"x 1"x 3/4"), (1.5" x 1.5"x 1.5"), (Pipe Block) প্রয়োজনীয় সাইজের ব্লক (1:2) অথবা (1:1) তৈরি করে কিউরিং করতে দিতে হবে। 
4. স্লাব ও বীমের সাটারের পরিমাণ হিসাব করতে হবে। সমস্ত সাটারিং মালামালের জন্য প্রয়োজনে দক্ষ সাটার মিস্ত্রিকে সাথে নিয়ে হিসাব করতে হবে। সেই মোতাবেক কাঠ, বাঁশ, স্টীল প্রভৃতি ক্রয় করার জন্য চাহিদা পত্র দিতে হবে। 
5. প্রয়োজনীয় রড এবং সিমেন্ট, বালি, খোয়া, ইলেকট্রিক পাইপ প্রভৃতি নির্মাণ সামগ্রীর পরিমান হিসাব করে চাহিদাপত্র পাঠাইতে হবে। 
6. পরিমাপ অনুযায়ী বীম ও স্লাবের তলা ও পার্শ্বের সাটার সেট করতে হবে। ভালোমানের প্লেনসীট বিছাইতে হবে। প্লেনশীট এর উপর ডিজেল দিয়ে পাতলা আস্তরন দিতে হবে, এবং শুকাইতে হবে। সমস্ত সাটারিং এর কাজ মজবুত, নিচ্ছিদ্র ও ঝুকিমুক্ত হতে হবে। 
7. স্লাব ও বীমের ড্রইং দেখে বীম সাজাতে হবে। সাধারণত লম্বা বীমগুলোর রড আগে প্লেসমেন্ট করা হয়, তারপর লম্বা বীমের উপরে শর্ট বীমগুলো চাপানো হয়। বীমের সাইজ মোতাবেক রিং তৈরি করতে হবে এবং স্পেসিং ড্রইং মোতাবেক সেট করতে হবে। 
8. স্লাব এর বেলায় বটম লেয়ারে শর্ট ডিরেকশন এর রড নীচে বসবে, এবং উপরে লং ডিরেকশনের রড বাইন্ডার রুপে বসবে। টপ লেয়ারের রড উপরে বসবে, বাইন্ডার নীচে বসবে, তবে কলামস্ট্রিপে লং বীমের উপরের টপ রড গুলোকে সেইম লেয়ার ফলো করে বসাতে হবে। এইক্ষেত্রে কলামস্ট্রিপে শর্ট বীমের উপরের টপ রড গুলো বাইন্ডার লেভেলে থাকবে। 
9. রড বিছানোর কাজ শেষ হলে বীম ও স্লাবে পর্যাপ্ত পরিমান ব্লক বিছাইতে হবে। এবং রেফারেন্স লাইনের সমস্ত সুতাগুলো টানিয়ে দিয়ে বীম ও স্লাবের তলার ফাইনাল লেভেল দেখে পরীক্ষা করতে হবে। 
10. ইলেকট্রিক মিস্ত্রিদেরকে দিয়ে পাইপ বিছাইয়ে নিতে হবে।
11. স্লাবের উপর সমস্ত বাধায় কাজ শেষ হওয়ার পরে, স্লাব ও বীমকে পানি দ্বারা ধৌত করে দিতে হবে। কোন আবর্জনা থাকতে পারবেনা। 
12. ধৌত করার পর কলামের সাইড গুলো আটকিয়ে দিতে হবে। 
13. প্রকল্প প্রকৌশলী বা ডিজাইনবীদ স্লাব এর রড প্লেসমেন্ট সহ যাবতীয় বিষয় পরীক্ষা ও নীরিক্ষা করে দেখবেন। কোন সমস্যা থাকলে পরামর্শ দিবেন।
14. স্লাব ঢালাইয়ের তারিখ ঠিক করার পূর্বে অবশ্যই মালামাল সাইটে হাজির করতে হবে। 
15. মিক্সার মেশিন, ভাইব্রেটর মেশিন, রুপ হয়েষ্ট, টাওয়ার হয়েষ্ট প্রভৃতি নির্মাণ যন্ত্রপাতী সঠিক আছে কিনা আগে থেকেই তৈল মবেল দিয়ে চালিয়ে পরীক্ষা করে রাখতে হবে। ভাইব্রেটিং নজেল অবশ্যই নূন্যতম দুইটি থাকতে হবে। 
16. ঢালাইয়ের আগের দিন সন্ধার ভিতরেই সমস্ত জনবলের সাথে কথা বলে ঢালাই শুরুর সময়টা ঠিক করতে হবে ও দায়িত্ব বন্টন করতে হবে। 
17. ঢালাইয়ের আগেরদিন রাত্রে একজনকে দিয়ে খোয়াতে পানি দিতে হবে, পর্যাপ্ত পরিমানে। 
18. ঢালাইয়ের দিন সকালে পুনরায় স্লাবকে ভিজিয়ে নিতে হবে। ভাইব্রেটর মেশিন, নজেল, পানির ড্রাম, মাচা, কাঠের তক্তা, পাট্টা প্রভৃতি জিনিসগুলো স্লাবের উপরে তুলে নিতে হবে। 
19. সব কিছু ঠিকমত থাকলে এবং জনবল উপস্থিত থাকলে যত সকাল থেকে ঢালাই শুরু করা যায়, ততই মঙ্গল।
20. ঢালাইয়ের পূর্বে কলামের উপর সিমেন্টের ঘণ গ্রাউটিং গুলিয়ে ঢেলে দিতে হবে। ঢালাই শুরু হতে শেষ পর্যন্ত একজন মিস্ত্রি ও দুইজন হেল্পার সার্বক্ষনিক স্লাবের নীচে প্রয়োজনীয় কাঠ, বাঁশ, পেরেক, হাতুরী, হ্যান্ডেল প্রভৃতি নিয়ে সাটারের নড়াচড়া খেয়াল করবেন। 
21. অনেকে প্রথমে বীমগুলো আগে ঢালায় করে নেন, তারপর স্লাব ঢালায় করেন। আবার অনেকেই বীম ও স্লাব একসাথে ঢেলে পায়া করে নেন, পরে মাঝের অংশের স্লাব ঢালাই করেন। ঢালাইয়ের লেভেল ঠিক রাখতে কলামের রডের সাথে রেফারেন্স লেভেল টানানো থাকবে। সচরাচর 12" উপরে থাকে। 
22. বীমের ভিতরে মসলা বিছানোর পূর্বেই বীমের দুইপার্শে তক্তা বিছাইতে হবে। যেন খোয়া ছিটকে দূরে না যায়। মসলা বিছানোর সাথে সাথেই ভাইব্রেটর করে লেভেল করে দিতে হবে।

সব দিকে খেয়াল রেখে কাজ করতে হবে। এবং প্রয়োজনে খাতায় নোট করে রাখতে হবে। সময় মত কাজ শেষ করার চেষ্টা করতে হবে।সবার সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে কাজ করতে। অনিয়ম করা যাবে না কখনোই...

লেখাটি অনলাইন থেকে নেওয়া। ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
আর কমেন্ট করে জানাবেন কোন বিষয়ে লেখা চান...

Post a Comment

0 Comments