বিশেষ বিধান ও বিশেষ বিদ্যালয়

জন্ম ও ধর্ম কোনটি ‘পরম’ মানুষের জীবনে?-আমরা কি একবারও ভেবে দেখেছি? মনুষত্ব কি আগে নাকি ধার্মিকতা আগে?-আসুন আমরা ভাবি গভীরভাবে।
জীবন শব্দটি নিয়ে বিশ্লেষন করা যাক, ‘জীব’ শব্দটি দিয়ে বুঝায় সচল, বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন ও বায়ু আদান-প্রদানকারী একটি দেহ যাতে ‘অন’ তথা পানিপ্রবাহ ধাবিত হয় এবং যে দেহে একের স্বত্বার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ পরা প্রকৃতি ও অপরা প্রকৃতি মিলিত অবস্থার বিধান মোতাবেক সময় অতিবাহিত করে পুনরায় মূল একের স্বত্ত্বায় অথবা নতুন কোন গর্ভযোনীতে নিজেকে প্রকাশ করে, এটাই এই ভূলোকে জীবের জীবন বলা হয়। আর জীবন যেরূপে নিজেকে প্রকাশিত করে তাকে জনম বা জন্ম বলা হয়। জন্মলাভের পর, জীব তার অপরা প্রকৃতির প্রভাবে জীবন ব্যবস্থা সুসৃঙ্খল রূপে পরিচালনার জন্যে যা ধারণ করে তাকেই ধর্ম বলে। এখানে পরম শব্দটি বুঝায়, যার নিয়ম অতিক্রম করা যায় না। আমার মতে, জন্ম বা জনম তা পরম আর ধর্ম জন্মের অবিচ্ছেদ্য হাতিয়ার। আর বর্ণব্যবস্থা, বর্ণ (কৃঞাঙ্গ, শ্বেতাঙ্গ) অপরা প্রকৃতির সৌন্দর্য্য। জীবের শরীরে অবস্থিত পানি প্রবাহ তথা রক্তের রং প্রায় একই। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশরূপে সকল দেহে একই স্বত্বার অংশ বিরাজমান। মানুষের জীবনে মানুষ পরমকে প্রাধান্য না দিয়ে, পর হতে প্রাপ্ত হাতিয়ারকে প্রাধান্য দেয়। শুধু এই জ্ঞান নিজের ভিতরে চব্বিশ ঘন্টা ধারণ করতে পারেনা বিধায় আজকের সমাজে ধর্মীয় বিধিবিধান নিয়ে, শ্রেষ্ঠত্ব লাভ নিয়ে, নিজ হাতিয়ার দিয়ে অপরকে আঘাতের মাধ্যমে পথ চলা। পুরো পৃথিবীতে আজ দুটি ধারায় ধর্ম ব্যাপ্তি লাভ করেছে। এক, সাকারবাদ, দুই, নিরাকারবাদ। আর তৃতীয় চতুর্থ হিসাবে আরও দুটি ধারায় ধর্ম ব্যপ্তি লাভ করেছে। তার তৃতীয়টি হল প্রকৃতিবাদ-যাতে বিধিবিধান শূন্যবাদে রূপ দান করে এবং চতুর্থটি হল সানিকারবাদ যাতে সাকার ও নিরাকারের মিশ্রিত মূল অবিনশ্বর-স্বত্বায় বিশ্বাসবাদ। এই চারটি ধারার যেটাতে মানুষ সুবিধা ও সুযোগ পাচ্ছে, শান্তি পাচ্ছে বা সুখ পাচ্ছে সেটাই গ্রহন করছে। সমস্যাটা হল জোরাজোরি, লোভ দেখানো, ভয় দেখানো, হাতিয়ারের অযথা ও ঘৃণিত প্রয়োগ যা মানুষের মনুষত্বের পরিবর্তে হিংস্র পশুর মতন খুনে ও বিধ্বংসী আচরণ যা একসময় তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ বিস্ফোরণে মানব জাতির ব্যাপক বিনাশের কারণ হতে পারে। আমি চাই, পৃথিবীতে মনুষত্ব প্রতিষ্ঠা হোক, মানুষে মানুষে আত্মিক ভালোবাসা প্রতিষ্ঠা হোক, মানুষ ধর্মবাদের সৌন্দর্য্যকে সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিক। এবং তাদের হাতিয়ার দিয়ে শুধু ভালবাসার ও কল্যানের আদান-প্রদান করুক। কিন্তু হাতিয়ারের প্রয়োগ যেন কাউকে মানসিক ও শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে। পুরো পৃথিবীতে যতো ধর্ম আছে তা যেন মানুষের কর্ম জীবনে যেমন ব্যবসা, অফিস আদালতে, খাদ্যদ্রব্য গ্রহনে, সভ্য পোশাক-পরিচ্ছদে, বিষয়-সম্পত্তিতে ও আসবাবপত্রে বিরূপ আঘাত না হানতে পারে তা জাতিসংঘের তরফ হতে ‘বিশেষ বিধান’র মাধ্যমে ও প্রত্যেকটি দেশে কঠোর মনিটরিং এর মাধ্যমে মনুষত্বের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। আর পরম প্রভুর সহিত জীবের প্রেম বা ধ্যান বা ধর্মীয় সংস্কৃতি যথাযথ ভাবে পালনে যেন কারো কোন উদ্দেশ্যপ্রনোদিত হিংসুটে আচরণ বা অযথা আঘাত যেন না হয় তা মানুষের মাঝে ‘বিশেষ বিদ্যালয়’র মাধ্যমে সবাইকে শিক্ষা দিতে হবে। আমরা আমাদের ব্যবহৃত সমস্ত বস্তু যদি নিজের (কমপক্ষে ২০ বছর বা গ্র্যাজুয়েট ব্যাক্তিরা) ইচ্ছামত পছন্দ করে নিয়ে ব্যবহার করতে পারি তবে ধর্মকে নিজের পছন্দমত নিজের মনে-দেহে গ্রহন করতে পারব না কেনো? এই ব্যাপারটি যদি স্বাধিনতার বাহিতে যায় তবে কিভাবে মহান প্রভুর সহিত পরম প্রেম লাভ হবে বা আধ্যাত্মিক উন্নতি হবে তা বোধগম্য নয়! আজকের সমাজে ধর্মত্যাগ করলে সমাজ-পরিবার হতে অত্যাচারিত হতে হয়, সমাজের এই বিধিনিয়ম যা মানুষ মনুষত্বের ছায়া না নিয়ে পশুত্বের ছায়া নিয়ে অত্যাচার করে থাকে, সহজে মেনে নিতে চায় না, সমাজচ্যুত করা হয়, হত্যা করা হয়, তাকে মানুষ-হৃদয় দিয়ে নির্মুল করতে হবে। কারো হয়ত গোলাপ, কারো হয়ত রজনীগন্ধা, কারো গন্ধরাজ, কারো বেলি ইত্যাদি ভালো লাগতে পারে কিন্তু সবই তো প্রকৃতির বিধানে সৃষ্ট একই বাগানের ফুল। সুতরাং ফুলকে ঘৃনা করে সুগন্ধ ফেলে দুর্গন্ধ গ্রহন করা হতে বিরত হতে হবে। তবেই সৌন্দর্য্য প্রতিষ্ঠা হবে। ভালোবাসতে হবে একে অন্যকে, তবেই শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে। একের কল্যানের জন্য অপরকে নিবেদন করতে হবে তবেই আনন্দ প্রতিষ্ঠা হবে। সব চেয়ে বড় কথা হল, “স্টপ মার্ডার হিউম্যান এন্ড এনিম্যাল”। কারণ হত্যা শুধু হত্যা করতেই শিক্ষা দেয় না, একটি হিংসার আগুন জ্বেলে দেয় যা বছরের পর বছর ধরে মানুষ হৃদয়ে বহন করে। একসময় বিস্ফোরিত হয়। তাই বিশেষ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে এই শিক্ষা দিতে হবে যে, আমরা প্রথমে জীবনে মনুষত্ব প্রতিষ্ঠা করব, পষুত্বকে পরিহার করব ও প্রত্যেক মানুষ তার পছন্দমতন ধর্মকে গ্রহন করে নিজের স্পিরিচুয়াল ট্রিটমেন্ট করে অপরের মুখের হাসি নিজের মনের আনন্দে রূপ দান করব আর নিজের জীবনে প্রাপ্ত সৎ, জ্ঞান ও আনন্দ সকলকে বিলিয়ে দিব। স্নেহ, শ্রদ্ধা, প্রেম, ভক্তি ও আদর আপ্যায়ন বজায় রাখব। সকল জীবের প্রতি ভিন্ন স্বত্বার অদর্শনপূর্বক, মমতা নিশ্চিত করব। সাবধানতা শিক্ষা দিব, কর্মঠ হতে বলব। বিজ্ঞান সম্মত কর্ম ও ধর্ম ধারন করতে বলব। শুধু এইটুকুন কাজই মানুষের জন্য, মনুষত্বের অবক্ষয় হতে সকলকে রক্ষা করবে বলে আশা করি।

Post a Comment

0 Comments