মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে মাঠে নামছেন সোহেল তাজ



মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে মাঠে নামছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ। আওয়ামী লীগ নয়, অরাজনৈতিক সামাজিক সংগঠনের ব্যানারে যুবসমাজকে সচেতন করে তুলতে চান তিনি। এ লক্ষ্যে একটি সংগঠন গড়ে তুলবেন। শিগগির সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কর্মসূচি ঘোষণা করবেন সোহেল তাজ। এরপর সারা দেশ চষে বেড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। তিনি নিজেই এসব তথ্য জানিয়েছেন।
বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের একমাত্র ছেলে তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ গতকাল বৃহস্পতিবার  বলেন, ‘পঁচাত্তরপূর্ব সময় থেকেই ধারাবাহিকভাবে তাজউদ্দীন পরিবারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এর পেছনে একটি শক্তিশালী চক্র জড়িত রয়েছে। কুচক্রী মহলটি আওয়ামী লীগ পরিবার থেকে তাজউদ্দীন আহমদের পরিবারকে বিচ্যুত করতে কাজ করে যাচ্ছে।’ তবে যারা ষড়যন্ত্র করছে তারাই বিতাড়িত হবে এবং তাদের মুখোশ উন্মোচিত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
সোহেল তাজ ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে গাজীপুরের কাপাসিয়া থেকে টানা দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে তাঁকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও দেওয়া হয়েছিল। তরুণ এই প্রতিমন্ত্রী তাঁর উদ্যম, স্পষ্ট কর্থাবার্তার জন্য শুরুতেই সব মহলে প্রশংসিত হন। কিন্তু ২০০৯ সালের ১ জুন তিনি হঠাৎ করেই প্রতিমন্ত্রীর পদ ত্যাগ করেন। পরে ২০১২ সালের এপ্রিলে সংসদ সদস্যপদও ত্যাগ করেন সোহেল তাজ। সেই থেকে অনেকটা নিভৃতে জীবন যাপন করছেন তিনি।
সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে বসবাসকারী সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী গত বুধবার বুলগেরিয়া হয়ে দেশে ফিরেছেন। দুই মেয়েকে তাদের নানির কাছে রাখতে বুলগেরিয়া গিয়েছিলেন বলে জানান তিনি। সোহেল তাজ গতকাল দুপুরে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে তাঁর পরবর্তী পরিকল্পনা ও করণীয় নিয়ে কথা বলেছেন। ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দেশে মাদক ও দুর্নীতির বিস্তার নিয়ে। তিনি বলেন, ‘আজকের বাস্তবতা হচ্ছে একটা মেধাবী ছাত্র ছোটবেলা থেকে যা শিখে এসেছে তা ভুল প্রমাণিত হচ্ছে। তারা শিখেছে ভালো কাজ করা ভালো। অনেস্টি ইজ দ্য বেস্ট পলিসি। নীতি ও আদর্শের কথা শুনেছে। কিন্তু বাস্তবতার ধাক্কা হচ্ছে, ভালো রেজাল্টের কোনো মূল্য নেই। ঘুষ দিয়ে চাকরি নিতে হচ্ছে। চাকরির ক্ষেত্রে মেধাবী ছাত্রের মূল্য নেই। এই থেকে হতাশা সৃষ্টি হচ্ছে। এরপর মাদক নিচ্ছে তারা।’ এভাবে যুবসমাজকে অঙ্কুরেই নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
এ অবস্থায় একটি সামাজিক সংগঠন গড়ে তুলে সারা দেশ চষে বেড়ানোর পরিকল্পনা করছেন সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী। নিজের ইমেজ কাজে লাগিয়ে যুবসমাজকে সচেতন করতে চান তিনি। এ বিষয়ে তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ বলেন, ‘বাংলাদেশসহ বিশ্বের যেখানেই আমি গেছি, সেখানেই মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। সেই ভালোবাসা আমাকে অভিভূত করেছে। অনুপ্রাণিত হয়েছি কিছু করার ব্যাপারে। সেই থেকেই এ ভাবনা।’
আওয়ামী লীগে বহিরাগত অনুপ্রবেশ নিয়ে শঙ্কা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেন সোহেল তাজ। তিনি বলেন, ‘আমার পিতা নিজের রক্ত দিয়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আওয়ামী লীগকে গড়ে তুলেছেন। সেই পরিবারের একজন সন্তান হিসেবে, আওয়ামী লীগের শুভানুধ্যায়ী হিসেবে আমার পর্যবেক্ষণ—মাঠপর্যায়ের ত্যাগী নেতাকর্মীরা উপেক্ষিত। নীতি-আদর্শ বিচ্যুত হয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। এর পরিণতি সংগঠনের জন্য ভালো হবে না। যখন সুবিধাবাদী ব্যক্তিরা একটি সংগঠনে ঢুকে যায় তখন অনুপ্রবেশকারীদের কাছে নীতি-আদর্শ মুখ্য বিষয় থাকে না।’ এই সমস্যা চিহ্নিত করে এখনই ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ এবং আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়তার কারণ জানতে চাইলে সোহেল তাজ বলেন, ‘প্রতিমন্ত্রীর পদটাকে আমি পবিত্র মনে করে প্রথম দিন অফিসে যাই। ধারণা ছিল আমরা জনগণকে দেওয়া ওয়াদা পূরণ করতে পারব। বিএনপি-জামায়াত জোটের দুঃশাসনে মানুষ অতিষ্ঠ ছিল। সেই সময় (নির্বাচনের আগে) আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার দিনবদলের সনদে দেওয়া প্রতিশ্রুতি আমাকে অনুপ্রাণিত করে। প্রশাসনে বিরাজনীতিকরণ, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ ও মেধাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা দিনবদলের সনদে ছিল। আমি চেয়েছিলাম মৌলিক পরিবর্তন। হয়তো পরিবর্তনে সময় লাগবে। কিন্তু শুরু করতে হবে। আমার চাওয়াটা হয়তো বেশি ছিল।’
তখন পারেননি, এখন কিভাবে আশা করছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে সোহেল তাজ বলেন, ‘তখন পারিনি বলে এখন পারব না তা নয়।’ তিনি মনে করেন, তাঁর ইমেজ নিয়ে যুবসমাজের কাছে গেলে পরিবর্তন আসবে। মাদক-দুর্নীতির বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে সরকারকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত বলেও জানান তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার রাজনৈতিক পরিচয় আছে। কিন্তু আমি তো রাজনীতি করছি না। এটা একটা সামাজিক উদ্যোগ। সামাজিক উদ্যোগ সবার জন্য।’
প্রতিমন্ত্রীর পদ ছাড়ার পর ওই বছর জুলাইয়ে রাজনীতি ও মন্ত্রিত্ব নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে সোহেল তাজ এই প্রতিবেদককে বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশে কোনো কিছুরই পরিবর্তন হবে না। খেলা একই আছে, খেলোয়াড় বদলেছে মাত্র।’ তিনি আরো বলেছিলেন, ‘আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে মন্ত্রিত্ব করার লোক আমি নই।’ তিনি রাজনীতি করবেন না বলেও তখন জানিয়েছিলেন। সোহেল তাজের ওই সিদ্ধান্ত ও বক্তব্যে সরকার ও আওয়ামী লীগের ভেতরে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল তখন। সরকারের পক্ষ থেকে তাঁকে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার জন্য নানাভাবে অনুরোধ জানানো হলেও তিনি অনড় থাকেন।   
পদত্যাগ করার পর থেকে সোহেল তাজ যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে আসা-যাওয়ার মধ্যে থাকলেও কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত হননি। মাঝেমধ্যে কাপাসিয়ায় গিয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে দেখা করে আসেন। সেখানকার বর্তমান সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি তাঁর মেজ বোন। এ কারণে বোনের কিছু কর্মসূচিতে সোহেল তাজকে উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে। ওই সব কর্মসূচিতে তিনি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাঁর বোনকে জয়ী করার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি নিজে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
সূত্র: কালের কন্ঠ

Post a Comment

0 Comments