‘শুধু বাংলাদেশে নয়, সাইট হ্যাক সারা দুনিয়াতেই হয়’

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চলাকালে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ওয়েবসাইট হ্যাকারের কবলে পড়ে। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার পর সরকারের গুরুত্বপূর্ণ দফতরের ওয়েবসাইটগুলোর হোম পেইজ বদলে দেয় হ্যাকাররা। সেখানে বসিয়ে দেয় কোটা সংস্কার আন্দোলনের বার্তা। 
তবে রাতেই ওয়েবসাইটগুলো পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু করে সরকার এবং বুধবার সকালে এসে ওয়েবসাইটগুলো স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাইট হ্যাক করে টাকা উধাওসহ এ ঘটনা বাংলাদেশে মোটেও নতুন নয়। কিন্তু তা কেন? এ বিষয়ে পরিবর্তন ডটকমের এ প্রতিবেদকের সাথে বিস্তারিত কথা হয় ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের সাথে। তার বক্তব্য পাঠকদের জন্য বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।
প্রশ্ন: সরকারি বেশকিছু ওয়েবসাইট হ্যাক হওয়ার ঘটনা কেন? এসব ওয়েবসাইট কি খুব হালকা সিকিউরিটি দিয়ে করা?
মোস্তাফা জব্বার: প্রথমত হচ্ছে, শুধু বাংলাদেশে ওয়েবসাইট হ্যাক হয়নি বরং সারা দুনিয়াতেই এরকম ওয়েবসাইট হ্যাক হয়েছে। অতএব এখানে আলাদাভাবে শুধুমাত্র আমাদের সরকারকে দায়ী করার কারণ নেই। আর দ্বিতীয়ত হচ্ছে, বর্তমানে ওয়েবগুলো সম্পূর্ণভাবে আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে। এখানে যে আক্রমণগুলো হয়েছিল তা আমরা মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছি।
আবার এ ধরনের অ্যাটাক একেবারে বিরল নয়। এ ধরনের অ্যাটাক দুনিয়ার কোথাও না কোথাও কোন না কোন দিন হচ্ছে। সুতরাং এটি অপ্রত্যাশিত কোনো বিষয়ও নয়। আমাদের পক্ষ থেকে যে সক্ষমতা অর্জন করার তা আমরা চেষ্টা করছি। আমাদের যেই জায়গাগুলোতে দেখছি ভুলত্রুটি আছে, সে জায়গাগুলোতে সংশোধনের চেষ্টা করছি। সুতরাং আমি মনে করি এটা মোকাবেলা করার সক্ষমতা আমাদের তৈরি হয়েছে এবং যেটুকু সমস্যা সামনে আসবে তা মোকাবেলা করতে পারবো।
প্রশ্ন: বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইট হ্যাক করে হাজার হাজার কোটি টাকা নাই হয়ে গেল, এরপরও আমরা শিক্ষা নিতে পারিনি যে হ্যাক ঠেকাতে শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে?
মোস্তফা জব্বার: দেখেন এ কাজগুলো তো একদিনে হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘটনার আগে আমরা ওয়েবসাইট বানাইনি? সো, আমরা ওয়েবসাইট যখন বানিয়েছি তখন আমাদের এই দুর্বলতা থেকেই যেতে পারে। তার কারণ হচ্ছে, আমাদের এখন যে অবস্থা তৈরি হচ্ছে সে অবস্থা হয়তো তখন আমরা ভাবিনি। এখনকার বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, এখন যে অবস্থা তৈরি হচ্ছে সে অবস্থা মোকাবেলা করার চেষ্টা করছি।
আমাদের এখানে দুর্বলতা যেগুলো ছিল সেগুলো তৈরি করা হচ্ছে। যেমন এ ধরনের অপরাধ সংঘটিত হলে অপরাধের জন্য কোন আইন ছিল না। আমরা সংসদে আইন প্লেস করেছি এধরনের নিরাপত্তা বিধান করার জন্য। ইতোমধ্যে ইমেইল পলিসি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন পেয়েছি। আমরা ফরেনসিভ ক্লাব তৈরি করছি।
তবে ডিজিটাল সিকিউরিটির বিষয়টা আমাদের যে হারে ডিজিটাইজেশন হয়েছে তার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে তো আমাদের একটু সময় লাগবেই। কয়েক দিন আগে ব্রিটেনের হেল্থ সিস্টেম কলাপস করা হয়েছে। সুতারাং শুধুমাত্র আমাদের মতো দেশের নয় বরং উন্নত দেশগুলোতেও হচ্ছে। তাই নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করতে চাইলে ভিন্ন প্রযুক্তি গ্রহণ করতে হয়, সরকারের সে চেষ্টা আছে।
প্রশ্ন: এ ধরনের হ্যাক ঠেকাতে দেশীয় এক্সপার্টদের পাশাপাশি বিদেশি এক্সপার্টদের কাজে লাগানোর কোনো পরিকল্পনা আছে কি না?
মোস্তাফা জব্বার: যদি নিজের দেশের ছেলেরা কাজ করতে পারে তাহলে তো বিদেশিদের দরকার নেই। আমি এখন পর্যন্ত মনে করি আমার নিজের দেশেই নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞের অভাব নেই। আমাদের দেশের ছেলেমেয়েদের যদি সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারি তারা বিশ্বমানের দক্ষতা অর্জন করতে পারে।
আমরা বরং অন্য দেশের লোকদের ট্রেইনিং দেই। আমাদের দেশের প্রশিক্ষকরা জাপানে গিয়ে সাইবার নিরাপত্তা শিখিয়ে দিয়ে আসে। ফলে আমি আমার নিজের দেশের ছেলেদের উপর ভরসা করবো না কেন? বরং আমরা যদি অন্যের উপর ভরসা করি তাহলে বিপদের পরিমাণ বাড়বে।
প্রশ্ন: সরকারি এসব সাইট হ্যাক হওয়ার ঘটনায় অপরাধীদের ধরতে পেরেছেন কি না?
মোস্তাফা জব্বার: আমরা ফাইন্ডেড করতে না পারলে রিপিয়ার করলাম কেমনে? আমরা সমস্যা তৈরি হওয়ার পরপরই রিপিয়ার করতে পেরেছি তার অর্থ হচ্ছে, হামলার উৎস কোথায়, কিভাবে হামলা হয়েছে তা নির্ধারণ করতে পেরেছি। প্রসঙ্গত আপনাকে বলে রাখি সারা পৃথিবীতে গত তিন দিন ধরে বিভিন্ন দেশেই এ ধরনের হামলা হয়েছে।
প্রশ্ন: এ ধরনের হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে কি না?
মোস্তাফা জব্বার: আমরা অবশ্যই তাদের আইনের আওতায় আনবো। আমি আপনাকে এটুকু বলতে পারি ইতোমধ্যে আমরা কোত্থেকে কোত্থেকে কোথায় যে ধরনের ডিজিটাল অপরাধগুলো হচ্ছে এগুলোর উৎস অনুসন্ধান করে তাদেরকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনতে ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।

Post a Comment

0 Comments