সাংবাদিক ও সাংঘাতিক দুটি শব্দই বহুল প্রচলিত। শব্দ দুটি প্রায় সমউচ্চারিত কিন্তু অর্থ অনেক ভিন্ন। বাংলা একাডেমীর ব্যবহারিক বাংলা অভিধানে ‘সাংবাদিক’ শব্দের বর্ণনায় বলা হয়েছে, সংবাদ সর্ম্পকীয়। সংবাদপত্রের সম্পাদকীয় বিভাগে কাজ বা পেশা করেন যিনি ; সংবাদপত্রে প্রকাশের জন্য সংবাদ সংগ্রাহক। সাংবাদিকের কাজ বা বৃত্তি ইত্যাদি। অপর শব্দ ‘সাংঘাতিক’ সম্পর্কে বলা হয়েছে ভয়ানক; ভীষণ: মারাত্মক। বর্তমান সময়ের পেক্ষাপটে দুটি শব্দের অর্থ প্রায় সমপর্যায়ে চলে এসেছে।
মফস্বল সাংবাদিকতা পেশা না নেশা এ নিয়ে বিতর্ক চলে আসছে আনেক আগে থেকেই। যদিও সাংবাদিকতা একটি কাজ বা বৃত্তি। কিন্তু পারিশ্রমিক ছাড়া কোন না করলেও সাংবাদিকতার কাজটি আমরা পারিশ্রমিক ছাড়াই বছরের পর বছর ধরে করে আসছি। কিছু পত্রিকা অবশ্য এখন পারিশ্রমিক দিচ্ছে তাও অনিয়মিত। মফস্বলে বৈধ উপায়ে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে নেয়ার সুজোগ এখনো অনেকটাই হয়ে উঠেনি। তার পরও সাংবাদিকতা আজ অধিকাংশের পেশা। কিছু পেশা আছে একবার ধরলে আর ছাড়া যায় না , তারমধ্যে এই পেশাটি অন্যতম। অলাভজনক কোনকাজ সাধারণত দিনদিন কমে যাওয়ার কথা। কিন্তু ব্যতিক্রম এ পেশাটি বিস্তার লাভ করছে। একটি জেলায় বা উপজেলায় কত প্রকার সংবাদপত্র আছে আর কত জন সাংবাদিক আছে তার হিসাব কেউ রাখে না। পকেটে একটি পরিচয় পত্র থাকলেই তিনি সাংবাদিক বনে যান। কারো পকেটে তিন তেকে পাঁচটি গণমাধ্যমের পরিচয়পত্র রয়েছে।
অসংখ্য সাংবাদিকের ভিড়ে এখন আর জনসমক্ষে অনেকেই বলতে চাননা আমি সাংবাদিক। সাংবাদিকের কথা শুনলে সাধারণের মনে দ্বিতীয় শব্দটির কথা মনে পড়ে যায়। আর এই মনে পড়ে যাওয়া যে খুব বেশি অমূলক তা কিন্তু নয়। সাংবাদিক মানেই এখন আতঙ্ক। কিন্তু একটা সময় ছিল, মফস্বলের সাংবাদিকরা সমাজে অত্যন্ত সম্মান পেতেন। এ পেশায় আসতেন শিক্ষিত ও সজ্জন ব্যক্তিরা। এখন সাংবাদিকতার অর্থ দাড়িয়েছে অবৈধ সুযোগ-সুবিধা নেয়া সর্বোপরি অর্থ উপার্যন। সেটা হোক বৈধ আর অবৈধ। এতে এ পেশাটি দিন দিন তাঁর কৌলিন্য হারাচ্ছে। কোন ভালো মানুষ এখন আর এ পেশায় আসতে চান না। আপনি হয়ত বলবেন সবাই কি এক? ভালো দুই একজন হয়ত থাকতেও পারেন। কিন্তু তাঁরা বড়ই অসহায়। মানুষ যখন গালি দেয় তখন সাংবাদিক বলে গালি দেয়। তখন তাঁর ভাগ সবাইকে নিতে হয়।
আজ থেকে মাত্র ১৫ বছর আগের সাংবাদিকতায় ফিরে যাই। কাগজে কলমে একটি খবর লিখে ডাকে পাঠাতে হতো। তার পর খবর পাঠাতেন এনালগ টেলিফোনে। জেলা শহরে ফ্রাক্স আসলে খবর পাঠাতে একটু সুবিধা হয়। তাও ছবি পাঠানোর ব্যবস্থা ছিল না। পরে ক্যামেরায় ফ্লিম ভরে ছবি তুলে কেটে ডেভেলপ করে প্রিন্ট দিয়ে ডাকে পাঠাতে হতো। আর এখন হাইস্পীড ইন্টারেেনটের যুগে সাংবাদিকতা এখন সহজ থেকে সহজতর হয়ে পড়েছে। প্রযুক্তির এই সহজলভ্যতা একজন অসাংবাদিককে সাংবাদিক বানানোর সুযোগ করে দিয়েছে বলে আমরা মনে করি। এখন একজন লেখে আর দশ জনের দশ রকম পত্রিকায় সংবাদ পাঠিয়ে দেয়। যে একটু প্রযুক্তি জানে সে বলে, ভাই একটা সিসি দিয়েন। সিসি না হয় বিসি চেয়ে নিয়ে একটু ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পাঠিয়ে দেন। তবে অধিকাংশই সিসি হুবহু পাঠিয়ে দেন। একে অনেকে রসিকতা করে বলেন, ‘কাট কপি পেস্ট সাংবাদিকতা’। এমনো ঘটনা ঘটেছে যে, খবরের মধ্যে এক সাংবাদিক সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষের বক্তব্যে নিতে গিয়ে লিখেছেন, দৈনিক অমুক পত্রিকাকে জানান…..। সেই নিউজ যখন অন্য পত্রিকায় পাঠানোর সময় তিনি আর তার পত্রিকার নাম পরিবর্তন করেননি। সেই পত্রিকাওয়ালাও ছেপে দিয়েছেন হুবহু।
আর এক ধরণের সাংবাদিকতা চালু রয়েছে তার নাম ড্যামি সাংবাদিকতা। এটা হচ্ছে, ধরুন এক বছর আগে ইত্তেফাকে ছাপা হয়েছে ‘ পদ্মা পানি শূণ্য’। একই খবরের সবই ঠিক থাকবে, আমি শুধু পদ্মার জায়গায় লিখে দেব মধুমতি নদীর নাম। এ ভাবেই সংবাদ বেশি তৈরি হয়। এছাড়া কম্পিউটার থেকে খবর চুরির ঘটনাও ঘটছে অহরহ। ইন্টারনেট থেকে অন্য পত্রিকার ছবি ও লেখা নামিয়ে নিয়ে চালিয়ে দিচ্ছেন অনেকে।
এখন একটা বিষয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে, বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ সাংবাদিক হওয়ার দৌড়ে নেমেছেন। এ যেন যে কোন মূল্যে সাংবাদিক হতে হবে। আগে রাজনীতি ছিল লাভজনক। তাও এটা সব সময় নয়। দল ক্ষমতায় থাকলে। আর সাংবাদিকতা সারা জীবন। তাঁরা রংবেরঙের দৈনিক, সাপ্তাহিক, মাসিক, সান্মাষিক, সাংবাৎসরিক ও এক যূগ পরপর বের হয় এমন পত্রিকার পরিচয়পত্র নিয়ে চলে আসছেন। ধরুন আপনি অনেকদিন ধরে সাংবাদিকতা করে আসছেন। একটি অনুষ্ঠানে দাওয়াত পেয়েছেন। আসতে একটু দেরি হয়ে গেছে। বসার জায়গা নেই। এমন সময় আপনার চোখ আটকে গেল সাংবাদিক কাতারের একটি চেয়ারের দিকে। যে ছেলেটি স্কুল শুরু হওয়ার এক ঘন্টা আগ থেকেই বালিকা বিদ্যালয়ের আশপাসে দায়িত্ব পালন করত, সে আপনার জন্য নির্ধারিত চেয়ারে বসে আছে। পরে জানতে পারলেন, গত কালই সে ‘দৈনিক ….. খবর ’ পত্রিকার চাররঙা পরিচয়পত্র নিয়ে এসেছন। তখন আপনি কি করবেন , কদমতলা থেকে এক কাপ লাল চা খেয়ে বাড়ি চলে যাবেন। আর এরপর অন্যকোন অনুষ্ঠানে একটু আগে আসার চেষ্টা করবেন। সে দিন মনে হয় আর দূরে নয়, কেউ সাংবাদিকদের কোন অনুষ্ঠানে দাওয়াত করলে চিঠিতে লিখে দেবে, ‘আগে আসলে আগে বসতে পারবেন ’।
নতুন সাংবাদিক তৈরির সাথে আবার সাংবাদিকরাই জড়িত। এক শ্রেণীর পত্রিকা চৌরাস্তার মোড়, গ্রাম, হাট-বাজার, ইউনিয়ন এমনকি খেয়াঘাট ফেরিঘাটে প্রতিনিধি নিয়োগ দিচ্ছেন। তারা অত্যন্ত সুচারুভাবে তাঁদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। চাকরি (?) দেয়ার সময় নিয়োগ কর্তার প্রধান শর্ত থাকে ‘কিছু খাও, কিছু দাও’। অনেকে কাগজের প্রচার চালিয়েও বড় পত্রিকার সাংবাদিক বনে যান। তাই, সব সাংবাদিক কাগজ বিক্রেতা নয়, তবে সব কাগজ বিক্রেতাই সাংবাদিক!
একটা বিজ্ঞাপনের কথা মনে আছে? অমুক বিড়ি কেন খাই , পয়লা নম্বরে তৃপ্তি পাই। তাই আমরাও সাংবাদিকতা করে তৃপ্তি পাই। একটা প্রশ্নের উত্তর দিনতো, পৃথিবীতে এমন কোন পেশা আছে যে, কাজ করলেও পয়সা আবার না করলেও পয়সা। সঠিক উত্তর সাংবাদিকতা। কেন ? অনেক ক্ষেত্রে আপনাকে দিয়ে একটি খবর লিখাতে হলে টাকা দিতে হবে আবার একটা খবর বন্ধ করতে হলেও টাকা দিতে হবে। আপনি সাংবাদিকতা করবেন টাকা নেবেন না এটা এক সাথে চলতে পারে না। আপনি সাংবাদিকতা কেন করবেন ? সাংবাদিকতা করলে পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ি সবাই আপনাকে সমীহ করে চলবে। আপনি অন্য পেশায় থাকলে ঐ পেশা সংশ্লিষ্ট সধুু অধস্তনেরা আপনাকে সালাম করবে। অন্যরা করবে না। সাংবাদিক হলে আপনি মন্ত্রী, আমলার গাড়িতে উঠতে পারবেন। পাশে বসে খেতে পারবেন। মাসে ১২৯ টা তদবীর করতে পারবেন। ২৪৫টা দাওয়াত পাবেন। অন্যরা টাকা দিয়ে দাওয়াত খায় আর আপনি দাওয়াত খাবেন টাকা নিয়ে । কারণ আপনার অতিথি আপ্যায়ন আইনের ধারা তো জানাই আছে….। সময় নেই অসময় নেই আপনি যেখানে সেখানে ঢুকে যেতে পারবেন। মোটর সাইকেল চালাবেন নিবন্ধন লাগবে না। সিনেমা যাত্রা সার্কাসে প্রবেশ করতে টিকিট লাগবে না। ডাক্তার দেখাবেন ফি লাগবে না। অন্যকোন পেশা থাকলে আপনি সেখানে কাজ না করেই বেতন তুলে নিতে পারবেন। সর্বপোরি শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকলেও চলবে। তবে আপনার প্রয়োজন হবে একজন সিসি বিসি দেওয়ার যোগ্য সাংবাদিক। তাহলে এই পেশা বিকশিত হবে না তবে কোন পেশা বিকশিত হবে? তাই আসুন সবাই মিলে সাংবাদিকতা পেশা ঘরে ঘরে পৌছে দিই।
এলেবেলে অনেক কিছুই লিখলাম। এবার শেষ করতে হবে। এতো কিছুর পরও কিছু মহৎ ব্যাক্তি মহান ব্রত নিয়ে সাংবাদিকতা করে যাচ্ছেন। সমসাজের প্রতি দেশের প্রতি নিরড় দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। অনেকে সত্য কথা লিখতে যেয়ে অনেক হয়রানি ও অপদস্ত হয়েছেন হচ্ছেন। তাদের কারণেই এই পেশাটি বা নেশাটি এখনো সমাজে অনেক সম্মানের। আমার এই লেখাটির উদ্দেশ্য কাউকে হেয় ও অসম্মান করা নয়। আমার লক্ষ্য এ পেশাটির গৌরবউজ্জল অতীত ফিরিয়ে আনা। আর এ জন্য সত্যিকারের সাংবাদিকদের ঐক্যমত্যে, একতাবদ্ধ হওয়ার কোন বিকল্প নেই। আমাদের পথ অনেক থাক কিন্তু গন্তব্য যেন সবার এক হয়। এটা আমাদের অস্তিত্ত্বের সার্থেই করতে হবে।
লেখক: শিক্ষক ও সংবাদকর্মী। ই-মইেল: shahinanwar76@gmail.com
শতাব্দীর এই বিশ্বায়নের যুগে তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যবহার সর্বত্র বিদ্যমান। যার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে কোটি কোটি মানুষের কর্মসংস্থান। বাংলাদেশে একটু দেরিতে হলেও এর ব্যবহার ব্যাপক ভাবে বিস্তৃতি লাভ করছে। একথা অনস্বীকার্য যে প্রযুক্তি ছাড়া গোটা পৃথিবীই আজ অচল। গবেষণা থেকে শুরু করে, ব্যবসা, শিক্ষা, কৃষি, চিকিৎসাসহ ঘরে-বাইরে, মহাকাশে, মহাসমুদ্রে সকল ক্ষেত্রেই আজ প্রযুক্তির ছোঁয়া। আর গতিশীল জীবন মানেই সেখানে থাকছে প্রযুক্তির ছোঁয়া। তথ্য-প্রযুক্তির ছোঁয়ায় আমরা বিশ্বকে হাতের মুঠোয় পেয়ে গেছি। আমরা অনেকেই বিশ্বগ্রাম কথাটির সঙ্গে পরিচিত। একটি গ্রামে যেমন সবাই একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে, তেমনি তথ্য-প্রযুক্তি বিশ্বের সব মানুষকে সংযুক্ত করে রেখেছে। তারা প্রতিনিয়ত একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আমাদের সার্বিক জীবনব্যবস্থায় নানামুখী প্রভাব ফেলছে। এর ইতিচাক ও নেতিবাচক দুই ধরনের প্রভাবই রয়েছে।
ডিজিটাল দুনিয়ায় আপনার বিজনেসকে এগিয়ে নিতে ওয়েবসাইটের কোন বিকল্প নেই। একটি ওয়েবসাইট আপনার বিজনেস কে ব্রান্ডমডেল হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করে এবং এটি একটি অন্যতম আস্থার জায়গা তৈরি করে আপনার কাস্টমারদের মধ্যে।
মানবকল্যাণে প্রযুক্তি নির্ভর সমাজ গড়ার লক্ষ্যে বাংলায় তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কে শেখার ও জানার জন্য " এম এস হাবিবুর রহমান " প্রযুক্তি বিষয়ক বইসহ বহু বই ও আর্টিক্যাল লিখেছেন ও আরো লেখা অব্যাহত রেখেছেন। যা বিভিন্ন পত্রিকা, ম্যাগাজিন, ওয়েবসাইট, নিউজ পোর্টাল ও ব্লগে প্রকাশিত হয়েছে।
এছাড়া প্রিন্ট ও পিডিএফ আকারে বইসমূহ প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন প্রকাশনা ও ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বইসমূহ বিনামূল্যে ডাউনলোড করতে অথবা বিভিন্ন পত্রিকা, ম্যাগাজিন, ওয়েবসাইট, নিউজ পোর্টাল বা ব্লগে প্রকাশিত আর্টিক্যাল একই ওয়েবসাইটে পড়তে ভিজিট করুনঃ www.mindger.com
0 Comments