সম্ভাবনাময় অটোমোবাইল শিল্প



সারা পৃথিবীতে অটোমোবাইল শিল্প উন্নতি লাভ করিতেছে। বাংলাদেশেও এই শিল্প অত্যন্ত সম্ভাবনাময়। এই ব্যাপারে আমাদের নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি দেওয়া সময়ের দাবি। বর্তমানে দেশে ৪০ হাজারেরও বেশি অটোমোবাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কারখানা গড়িয়া উঠিয়াছে। ইহাতে প্রত্যক্ষভাবে ছয় লক্ষাধিক লোকের কর্মসংস্থান হইয়াছে। ইহার সহিত পরোক্ষভাবে জড়িত রহিয়াছে ৬০ লক্ষাধিক মানুষ। এই দেশে দেশীয় মোটরসাইকেলের বাজার যেমন ক্রমবর্ধমান, তেমনি তাহা এখন রফতানিও হইতেছে। অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ গাড়ি রফতানিকারক দেশে পরিণত হইবে বলিয়া অনেকে আশাবাদ ব্যক্ত করিতেছেন। তাই এই বিষয়টি সবিশেষ তাত্পর্যপূর্ণ। গত শুক্রবার প্রকাশিত ইত্তেফাকের একটি রিপোর্টে যশোরের অটোমোবাইল ও বডি বিল্ডার্স (মোটর গাড়ির আসনসহ কাঠামো নির্মাণ) শিল্প সম্পর্কে সম্যক ধারণা দেওয়া হইয়াছে। এই শহরের মণিহার, আরএন রোড, মুড়লী, বকচর, হুশতলা ও চাঁচড়া চেকপোস্ট সংলগ্ন বিশাল এলাকা জুড়িয়া অসংখ্য অটোমোবাইল ও বডি বিল্ডার্স ওয়ার্কশপ গড়িয়া উঠিয়াছে। এইসকল ওয়ার্কশপে শ্রমিকরা সারাদিন গাড়ি মেরামতের কাজে ব্যস্ত। তাহাদের ওয়ার্কশপে রি-মডেলিং করা গাড়ি টেকসইও হইতেছে। বিশেষ কোনো প্রশিক্ষণ বা কারিগরি জ্ঞান না থাকিলেও এই কারিগররা আমাদের উন্নত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখাইতেছেন। ইতোমধ্যে ভারতের সহায়তায় বাংলাদেশি ব্র্যান্ডের গাড়ি তৈরির পথে আছি আমরা।

যশোরের অটোমোবাইল শিল্পের বিকাশ আরেকটি কারণে উল্লেখযোগ্য। তাহা হইল— ইহার মাধ্যমে মফস্বল বা গ্রামীণ অর্থনীতিতেও গতির সঞ্চার হইতেছে। এখানকার অটোমোবাইল ওয়ার্কশপের মালিকরা বলিতেছেন, একটি হিনো বাসের কাঠামো তৈরিতে ঢাকায় যেখানে খরচ পড়ে প্রায় ১৩ লক্ষ টাকা, সেখানে এখানে খরচ হয় সাত হইতে আট লক্ষ টাকা। টাটা গাড়ির কাঠামো তৈরিতেও এখানে অন্তত পাঁচ লক্ষ টাকা কম খরচ হয়। সুতরাং এই শিল্প ক্রমান্বয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়াইয়া পড়াটাই সুবিধা ও লাভজনক। এইজন্য এই শিল্পটির বিকাশ ও উন্নয়নে যথাসম্ভব সরকারি সহায়তা দরকার। বিশেষ করিয়া মালিকরা ব্যাংক ঋণ ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত্ সরবরাহের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়াছেন। বাজেটে প্রণোদনা দেওয়ার দাবিও আছে। আর শ্রমিকরা নিয়মিত ও প্রত্যাশিত পারিশ্রমিক লাভের পাশাপাশি প্রশিক্ষণ ও স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার কথা বলিতেছেন। মালিক-শ্রমিকদের এইসকল চাওয়া-পাওয়ার সমন্বয় সাধন করিতে পারিলে নিঃসন্দেহে এই শিল্প বাংলাদেশে উত্তরোত্তর উন্নতি লাভ করিবে। শুধু যশোরে এই শিল্পের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাইতে পারিলে বত্সরে কমপক্ষে ৫০০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় করা সম্ভব।

উল্লেখ্য, যেকোনো শিল্পোন্নয়নে সরকারের নিকট হইতে প্রণোদনা চাওয়া রীতিতে পরিণত হইয়াছে। কিন্তু শিল্পোদ্যোগ ও কল-কারখানা চালাইবার ক্ষেত্রে আমাদের দেশে যেসকল প্রতিবন্ধকতা আছে তাহা দূর করিতে পারিলেও অনেক উপকার হইবে। শিল্পের ক্ষেত্রে অগ্রিম আয়কর পৃথিবীর আর কোনো দেশে আছে কিনা আমাদের জানা নাই। এখানে ব্যাংক সুদের হারও বেশি। তবে আশার কথা হইল, সমপ্রতি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে আমাদের দেশে শিল্পঋণে সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়া আসিতেছে। জ্বালানি সংকটসহ নানা কারণে আমাদের দেশে শিল্পের প্রত্যাশিত বিকাশ ঘটিতেছে না। তবে বিভিন্ন সরকারের আমলে যাহা ঘটিতেছে তাহা হইল ‘লোপাটশিল্প’। ইহার অবসান ঘটাইয়া প্রকৃত শিল্পোন্নয়নে মনোযোগ বৃদ্ধি করা দরকার।

Post a Comment

0 Comments