জিবনে অনেক ইলেকট্রনিক ডিভাইজ ব্যবহার করেছি, অবশ্যই আপনিও করেছেন, কিন্তু পোর্টেবল ডিভাইজ গুলো মধ্যে সবচাইতে ব্যাড ব্যাটারি লাইফ ল্যাপটপ ব্যাটারির হয়ে থাকে। দেখেছি যতো দামী ল্যাপটপই কিনুন না কেন, কয়েকমাস পরে আপনার ব্যাটারি ধীরেধীরে ব্যাকআপ কমে যেতে শুরু করে। বেশিরভাগ ব্যাটারি গুলো লিথিয়াম-আয়ন টেকনোলোজির উপর হওয়ার কারণে মাত্র কয়েকটি নির্দিষ্ট রিচার্জ সাইকেল পরে ল্যাপটপ ব্যাটারি ডেড হতে শুরু করে।
উইন্ডোজ ১০ কম্পিউটারে অনেকভাবে ব্যাটারি ভালো রাখা যেতে পারে, এমনকি ব্যাটারি ভালো রাখার কিছু ট্রিক্স ও রয়েছে — কিন্তু একবার ব্যাটারি সম্পূর্ণভাবে ডেড হয়ে গেলে কোন ট্রিক্সই আর কাজ করবে না। তবে সম্পূর্ণ ডেড হওয়া ব্যাটারি কি আবার পুনরুজ্জীবিত করার কোন উপায় রয়েছে? যদিও আজকের শেয়ার করা উপায় গুলো ১০০% কাজ করবেই এরকম কোন গ্যারান্টি নেই তবে অবশ্যই ট্রায় করে দেখা প্রয়োজনীয়।
আপনার ব্যাটারি বরফে পরিণত করুণ
জানি, ব্যাপারটা শুনতে অনেকটা আজব লাগার কথা কিন্তু এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা রয়েছে। আপনার ব্যাটারিটি যদি NiMH (নিকেল মেটাল হাইড্রাইড) বা NiCd (নিকেল-ক্যাডমিয়াম) এর হয়ে থাকে, তো ফ্রিজে ঢুকিয়ে আপবার ব্যাটারিকে জমিয়ে বরফ বানিয়ে ফেলুন, এতে ব্যাটারির মধ্যের ইলেক্ট্রোলাইট গুলো আবার জান ফেরত পেতে পারবে এবং হয়তো আবার রিচার্জ সাইকেল গ্রহণ করতে শুরু করতে পারবে। আবার এই প্রসেস ব্যাটারির মধ্যের ইলেকট্রন গুলোর চলাফেরা খানিকটা স্লো করে ফেলবে, এতে আরো ইলেকট্রন যুক্ত হয়ে প্রবাহ ধারা বাড়াতে সাহায্য করবে, ফলে ব্যাটারিটি আবার কাজ করতে শুরু করতে পারে।
তবে আপনার ল্যাপটপ ব্যাটারি যদি নতুন হয়ে থাকে, মানে লেটেস্ট লিথিয়াম টেকনোলোজির ব্যাটারি হলে আমি কখনোই এটা করতে রেকমেন্ড করবো না। সাথে আপনার ল্যাপটপ ব্যাটারি যদি অনেক পুরাতন হয়ে থাকে এবং ব্যাটারিতে যদি কোন লিকেজ থাকে, সেক্ষেত্রেও এটা করা উচিৎ হবে না।
তো এই কাজ করার জন্য প্রথমে আপনার ল্যাপটপ ওয়াল সকেট থেকে ডিস্কানেক্ট করে ফেলুন, তারপরে ল্যাপটপ থেকে ব্যাটারি খুলে নিন। আর হ্যাঁ, আপনার ল্যাপটপ ব্যাটারি যদি নন-রিমুভেবল হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে ল্যাপটপ খুলতে হতে পারে যার জন্য ম্যানুয়াল দেখা বা সামান্য টেকনিক্যাল নলেজ প্রয়োজনীয়, তাই এই বিষয়টি মাথায় রাখবেন আর হ্যাঁ, ল্যাপটপ খুললে ওয়ারেন্টি কিন্তু আর কাজ করবে না। যাই হোক, ব্যাটারি খোলার পরে একটি কাপড়ের ব্যাগের মধ্যে রেখে দিন তারপরে ঐ কাপড়ের ব্যাগটি আরেকটি মুখ বন্ধ করা পলিথিন বা ঐ জাতীয় প্ল্যাস্টিক ব্যাগের মধ্যে রেখে দিন, এবার এভাবে ব্যাটারিটি ফ্রিজারে ১০ ঘণ্টার মতো রেখে দিন।
১০ ঘণ্টা পরে ব্যাটারিটি ফ্রিজার থেকে বের করুণ এবং ব্যাটারিটি আপনার রুমের তাপমাত্রার সমান হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুণ, এরপরে কম্পিউটারে লাগিয়ে দেখুন সেটা কাজ করছে কিনা। যদি ব্যাটারি ভালো অবস্থায় ফেরত আসে, তো আপনার ভাগ্য খুবই ভালো! যদি ব্যাটারি ফিক্স না হয় সেক্ষেত্রে নিচের উপায় গুলো ট্রায় করতে পারেন।
কম্পিউটার ঠাণ্ডা রাখুন
হতে পারে আপনার ল্যাপটপ ব্যাটারি এখনো সম্পূর্ণ ডেড হয়ে যায়নি, তবে ধীরেধীরে ডেড হওয়ার পথে — সেক্ষেত্রে আপনার কম্পিউটারকে ঠাণ্ডা রেখে ব্যাটারি লাইফ বাড়ানো যেতে পারে। আপনার ল্যাপটপ যদি অনেক পুরাতন মডেলের হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে আপনার ল্যাপটপ যে ডিম সেদ্ধ করার মতো গরম হতে পারে এতে কোনই সন্দেহ নাই। লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি গুলোর সাথে সবচাইতে বড় সমস্যা হচ্ছে এই ব্যাটারি গুলো গরম সহ্য করতে পারেনা, যতোবেশি ডিভাইজ গরম হবে ল্যাপটপ ব্যাটারি লাইফ ততো কমে যেতে থাকবে।
এই সমস্যা সমাধানে একটি ল্যাপটপ কুলার ফ্যান ব্যবহার করতে পারেন। যেকোনো লোকাল শপ থেকে বা অনলাইন থেকে মাত্র কয়েকশত টাকা দিয়েই একটি ভালোমানের ল্যাপটপ কুলার কিনতে পারেন, আর এটি ব্যবহার করার মাধ্যমে ডেড হওয়ার পথে এমন ব্যাটারি গুলোতে কিছুটা নতুন জান ফেরত আসতে পারে।
ওভার ভোল্টেজ
যেকোনো ডেড বা ডেড হতে চলা লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি জাম্প স্টার্ট করার এটি বেস্ট পদ্ধতি, তবে সাবধান ব্যাটারি বেশি ওভার চার্জ করে ফেললে সেটা ফেটে গিয়ে বিস্ফোরিত হতে পারে, তাই এই প্রসেস করার সময় নিরাপদ গ্লাস পরিধান করতে হবে। আর হ্যাঁ, লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি লম্বা সময় ধরে ফেলে রাখলে সেটা এমনিতেই ডেড হয়ে যায়, তাই অবশ্যই ল্যাপটপ অন্তত দুই দিন পরপর একবার অন করে কিছুক্ষণ চালিয়ে আবার অফ করে রেখে দেওয়া ব্যাটারির জন্য ভালো।
এই ম্যাথড সত্যিই কাজ করে, বিশেষ করে একেবারে বাদ হয়ে যাওয়া ব্যাটারি গুলোও আবার কাজ করতে শুরু করে তবে আগেই বললাম কিছু সাবধানতা তো অবলম্বন করতেই হবে। প্রথমে ল্যাপটপ থেকে ব্যাটারি বের করুণ, যদি সেটা রিমুভেবল হয়, তারপরে এর (+) এবং (-) অংশ চিহ্নিত করুণ। এবার একটা পালতা তার নিন এবং তারের দুই প্রান্তের ইন্সুলেটর হালকা করে উঠিয়ে নিন। এবার তারের এক প্রান্ত ল্যাপটপ চার্জারের পিনের সাথে কানেক্ট করে দিন এবং আরেক প্রান্ত ব্যাটারির (+) এবং (-) এর সাথে কানেক্ট করিয়ে দিন। আর এভাবেই ঘণ্টা দুই এক রেখে দিন, ব্যাস এর পরে ব্যাটারি ল্যাপটপে লাগান এবং দেখুন ব্যাকআপ দেওয়া শুরু করেছে কিনা।
নির্দিষ্ট পরিমাণ চার্জের পরে প্লাগ খুলে ফেলুন
এই উপায়টি শুনতে অনেকটা আজব লাগতে পারে, কিন্তু এইটাই ব্যাটারি লাইফ বৃদ্ধি করার বেস্ট পদ্ধতি। ল্যাপটপ ব্যাটারি চার্জ ৭৫%-৮৫% হলে চার্জার আনপ্লাগ করে দিন তারপরে ব্যাটারি চার্জ ১০%-৫% হয়ে গেলে আবার প্লাগইন করুণ, বিশ্বাস করুণ এতে আপানার ব্যাটারি লাইফ অনেক বৃদ্ধি হবে, কেননা এতে লিথিয়াম ব্যাটারি ফুল রিচার্জ সাইকেল পুড়নই হবে না।
এই ম্যাথড একটু ঝামেলার, কেননা আপনাকে বারবার কাজ করতে হচ্ছে, কিন্তু মৃত্যুর পথে ব্যাটারিকে বাচাবার সবচাইতে উত্তম আইডিয়া এটিই!
আগে থেকে যদি ব্যাটারির ভালো যত্ন নেন সেক্ষেত্রে ব্যাটারি ডেড হওয়ার পর্যায়ে হয়তো আসবে না এবং আপনাকেও জাম্প স্টার্ট করতে হবে না। ভালো কুলার ব্যবহার করুণ, ৮৫% পর্যন্ত চার্জ করে প্লাগ খুলে ফেলুন, ল্যাপটপ গরম হওয়া দেওয়া যাবে না, ব্যাস আপনার ব্যাটারি লাইফ অনেক বৃদ্ধি পেয়ে যাবে। সাথে আপনার যেকোনো আলাদা প্রশ্নে আমাকে কমেন্ট করতে পারেন
0 Comments