অভিযোগ গ্রহণকারী কেন নেই? জবাব দিতে হবে হোয়াটসঅ্যাপকে

একটি দেশে একটি প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল সেবা দেবে, কিন্তু ওই দেশে তাদের কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তির উপস্থিতি থাকবে না, তা কি হয়? ভারতে বিষয়টি নিয়ে একটি পিটিশন দায়ের হয়েছিল। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট গতকাল সোমবার ম্যাসেজিং অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপকে সমন জারি করেছেন। পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি ও অর্থ দপ্তরকেও তলব করেছেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত। দেশে সবচেয়ে বড় মেসেজিং অ্যাপ হোয়াটসঅ্যাপের কেন কোনো অভিযোগ গ্রহণকারী নেই? সে প্রশ্নই করেছেন সুপ্রিম কোর্ট। চার সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও মন্ত্রণালয়ের কাছে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন চেয়েছেন শীর্ষ আদালত ৷

ওই পিটিশনে বলা হয়, ভারতের টেলিকম মন্ত্রণালয় হোয়াটসঅ্যাপকে কেবল ‘ওভার দ্য টপ’ (ওটিটি) হিসেবে বিবেচনা করছে। তবে পুরো বাস্তব উদ্দেশ্য বিবেচনায় এটি টেলিকম সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের মতোই কাজ করছে। তাই প্রতিষ্ঠানটিকে টেলিকম অপারেটরদের মতোই সব শর্ত মেনে চলতে হবে।

ভারতে ইতিমধ্যে ফেসবুক ও গুগল স্থানীয় অভিযোগ গ্রহণকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করেছে। কিন্তু হোয়াটসঅ্যাপ ফেসবুকের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান হলেও এর কোনো অভিযোগ গ্রহণকারী কর্মকর্তা ভারতে নেই। ওই পিটিশনে বলা হয়, অভিযোগকারী কর্মকর্তা না থাকলে ২০১৯ সালের নির্বাচনের সময় যখন প্রচার-প্রচারণা স্থগিত হয়ে যাবে, এ ধরনের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ভোটারদের প্রভাবিত করার ঘটনা ঘটতে পারে।

পিটিশনে বলা হয়, হোয়াটসঅ্যাপ অবশ্য স্বীকার করেছে, তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ভুয়া অ্যাকাউন্ট প্রতিরোধের মতো সমস্যা সৃষ্টিকারী কনটেন্ট প্রতিরোধ করতে পারে। এর অর্থ, প্রতিষ্ঠানটি অগ্রহণযোগ্য কনটেন্ট ঠেকাতে পারে এবং এ ধরনের কনটেন্ট তাদের প্ল্যাটফর্মে প্রকাশ হলে তারাই দায়ী। এ ধরনের প্রক্রিয়া দেশে একজন অভিযোগ গ্রহণকারী কর্মকর্তা নিয়োগের মাধ্যমে শুরু করা যায়।

ভারতের সেন্টার ফর অ্যাকাউন্টিবিলিটি অ্যান্ড সিসটেমিক চেঞ্জের আইনজীবী অর্চনা পাঠক দেব এ পিটিশন দায়ের করেন।

ওই বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার পক্ষে আইনজীবী বিরাগ গুপ্ত যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। গত ফেব্রুয়ারি থেকে ভারতে হোয়াটসঅ্যাপের শুরু করা পেমেন্ট সেবা বন্ধ করার আরজি জানানো হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি আইন ২০১১ অনুযায়ী, ভারতে যেহেতু প্রতিষ্ঠানটির কোনো অফিস নেই, তাই তাদের আর্থিক কার্যকলাপে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়েছে।


ভারতে বেশ কিছুদিন ধরেই আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে হোয়াটসঅ্যাপ। গত কয়েক মাসে হোয়াটসঅ্যাপে গুজব ও ভুয়া খবর ছড়ানোর জেরে দেশটিতে ২০ জন গণপিটুনিতে প্রাণ হারিয়েছেন। হোয়াটসঅ্যাপের ভূমিকা নিয়ে অনেকেই সোচ্চার হয়েছেন। এ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দেশের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে হোয়াটসঅ্যাপকে চিঠি পাঠানো হয়।

হোয়াটসঅ্যাপের কর্মকর্তা ক্রিস ড্যানিয়েলস ভারত সফর করেন। তাঁকে উদ্বেগের বিষয়টি তুলে ধরেন কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ। হোয়াটসঅ্যাপকে এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি ভুয়া খবরে উৎস সম্পর্কে জানানোর দাবি তোলেন তিনি।

হোয়াটসঅ্যাপের পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হয়, ভারতের দাবি অনুযায়ী হোয়াটসঅ্যাপ বার্তার কোনো উৎস তারা জানাতে পারবে না। এতে হোয়াটসঅ্যাপের তথ্য সুরক্ষার মূল নীতি প্রশ্নবিদ্ধ হবে। ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য গোপন রাখার বিষয়টির লঙ্ঘন করা হবে।

তবে ভারতে চাপের মুখে থাকা হোয়াটসঅ্যাপ বেশ কিছু ক্ষেত্রে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে। সর্বোচ্চ কতজনকে একটি বার্তা ফরওয়ার্ড করা যাবে, সেই সংখ্যা কমানো হয়েছে। কোনো মেসেজ ফরোয়ার্ডেড হয়ে আসছে কি না, তা ব্যবহারকারীরা যাতে বুঝতে পারেন, সে ব্যবস্থা করেছে। ভুয়া খবর আটকাতে জনসচেতনতা বাড়ানোর কাজে উদ্যোগ নেওয়ার কথাও জানিয়েছে।

উল্লেখ্য, হোয়াটসঅ্যাপের ১৫০ কোটি ব্যবহারকারীর মধ্যে ২০ কোটি ভারতের। এটি হোয়াটসঅ্যাপের বড় বাজার। এ বাজারে হোয়াটসঅ্যাপকে টিকে থাকতে হলে অনেক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। ভারতের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষও মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটিকে যতটা সম্ভব চাপে রেখে স্থানীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাবে। তবে হোয়াটসঅ্যাপকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টায় ভারত কতটুকু সফল হবে, তা সময়ই বলে দেবে। তথ্যসূত্র: ইকোনমিক টাইমস, আনন্দবাজার, টাইমস অব ইন্ডিয়া।

Post a Comment

0 Comments