ঈদের দুই দিন আগে সকাল নয়টায় আজিমপুরের বাসা থেকে বের হন নীলা ইসলাম। সঙ্গে তিন মাসের শিশুসন্তান। ২৫ ঘণ্টার যাত্রা শেষে পরের দিন মাগুরার শ্রীপুরে শ্বশুরবাড়ি পৌঁছান। এ দীর্ঘ ভ্রমণে তাঁকে সবচেয়ে বেশি বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে শিশুসন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানো নিয়ে।
নীলা ইসলামের পুরো যাত্রাই ছিল ভোগান্তির। তিনি বললেন, ‘প্রচণ্ড যানজট, ভাঙাচোরা রাস্তা ঠেলে যেতে হয়েছে। কিন্তু সবকিছুকে ছাপিয়ে সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানোই সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। বাসে তা-ও কাপড় আড়াল করে কোনোভাবে খাওয়ানো যায়। কিন্তু বাসস্ট্যান্ডে-কাউন্টারে অপেক্ষার সময় সেই সুযোগও থাকে না।’
শিশুপুষ্টি বিশেষজ্ঞদের মতে, সুষ্ঠু শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য শিশুকে জন্মের পর থেকে দুই বছর পর্যন্ত বুকের দুধ খাওয়ানো খুব জরুরি। আর প্রথম ছয় মাস শিশুকে কেবলই বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। অন্য সম্পূরক খাবার তো দূরের কথা, এ সময় পানিও দেওয়া যাবে না। এই ছয় মাস বুকের দুধ থেকেই শিশু যাবতীয় পুষ্টি পেয়ে থাকে।
কিন্তু আমাদের দেশে ঘরের বাইরে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সুযোগ খুব কম। দীর্ঘ ভ্রমণের সময় সে সমস্যা আরও প্রকট হয়। আর ঈদযাত্রার সময় গরম, যানজটের তীব্রতা, শিশুর কান্না, বুকের দুধ খাওয়াতে না পারা—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি অসহনীয় হয়ে পড়ে।
গৃহিণী রাশেদা বেগমের ক্ষেত্রে এ অভিজ্ঞতা আরও তিক্ত। বাবার বাড়ি চট্টগ্রামে যাতায়াতের জন্য তিনি ট্রেন পছন্দ করেন। ভ্রমণের সময়টা তিনি চান সন্তান ঘুমিয়ে থাক। প্রস্রাব যাতে না করে এ জন্য কম পানি খাওয়ান। তবে না খাইয়ে শিশুকে দীর্ঘক্ষণ ঘুম পাড়িয়ে রাখা শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য খুব ক্ষতিকর বলেছেন স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা।
রাশেদা বলেন, ‘রেলস্টেশনে হাজারো মানুষের ভিড়। এর মধ্যে শিশুকে দুধ খাওয়ানো খুব বিব্রতকর। তবুও বাচ্চার কথা ভেবে কয়েকবার চেষ্টা করেও পারিনি।’ তিনি বলেন, ঈদযাত্রায় বাসা থেকে বের হয়ে যানজট পেরিয়ে রেলস্টেশনে গিয়ে ট্রেনের জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। স্বামী সঙ্গে থাকলে আড়াল করে কোনোভাবে শিশুকে দুধ খাওয়ানো যায়। কিন্তু একা চলাফেরায় খুব বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়।
নবজাতক বা ছোট শিশুদের নিয়ে চলাফেরা করেন, এমন বেশ কয়েকজন নারীর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাঁরা বলেন, জনসমাগমস্থলে বুকের দুধ খাওয়ানোর ব্যবস্থা না থাকায় বেশ কষ্টকর অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। কিন্তু দীর্ঘ ভ্রমণে বাসস্টেশন, রেলস্টেশন, লঞ্চঘাট, ফেরিতে কোথাও বুকের দুধ খাওয়ানোর কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে এ সময় শিশুকে ঠিকমতো খাওয়ানো যায় না। এর পাশাপাশি শিশুর ডায়াপার পরিবর্তন, পোশাক পরিবর্তনসহ শৌচাগার নিয়েও বেশ সমস্যার কথা জানান তাঁরা।
যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের মতো উন্নত দেশে জনসমাগমস্থলে শিশুদের দুধ খাওয়ানো সংক্রান্ত আইন রয়েছে। শৌচাগারের সঙ্গে স্বল্প পরিসরে বুকের দুধ খাওয়ানো, ডায়াপার পরিবর্তনের ব্যবস্থা রয়েছে। পাশাপাশি সেসব দেশে দুই-আড়াই ঘণ্টা পর পর বেশ খানিকটা সময়ের জন্য পরিবহন যাত্রাবিরতির ব্যবস্থা আছে; সে সময় মায়েরা সন্তানকে দুধ খাওয়াতে পারেন। এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে ২০১৭ সালে দেশের রেলস্টেশনগুলোয় ১০০টি কক্ষ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যেখানে মায়েরা তাঁদের সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারবেন।
এ বিষয়ে শিশু ও পুষ্টিবিশেষজ্ঞ এম কিউ কে তালুকদার বলেন, শিশু জন্মের ছয় মাস পর্যন্ত শুধু বুকের দুধ দিতে হবে। দীর্ঘ সময় শিশুকে মায়ের দুধ না খাওয়ালে রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যায়; যা শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এর পাশাপাশি অন্য স্বাস্থ্য সমস্যাও দেখা দিতে পারে। শিশুর চাহিদার ভিত্তিতে দুধ খাওয়ানোর প্রয়োজনীয়তা বুঝতে হবে। ফলে জনসমাগমস্থলে দুধ পান করানোর ব্যবস্থা রাখার পাশাপাশি জনসচেতনতা তৈরির ওপর জোর দেন তিনি।
যত দিন পর্যন্ত জনসমাগমস্থলে শিশুদের দুধ খাওয়ানোর জন্য আলাদা স্থানের ব্যবস্থা না করা যায় তত দিন মায়েরা বুকের দুধ বোতলে বহন করতে পারেন। তবে শিশুকে কোনোভাবেই দুই ঘণ্টার বেশি টানা ঘুমাতে দেওয়া যাবে না। এরপর ঘুম থেকে তুলে খাওয়াতে হবে।
জেন্ডার বিশেষজ্ঞ ফেরদৌসি সুলতানা সন্তানকে বুকের দুধ পান করাতে এ ধরনের অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন। তাঁর শ্বশুরবাড়ি খুলনা যেতে তাঁকে চারটি ফেরি পার হতে হয়েছে। ফেরদৌসি সুলতানা বলেন, লোকলজ্জার কারণে ঘরের বাইরে শিশুদের দুধ খাওয়াতে সব সময় বিড়ম্বনা পোহাতে হয়। তবে যানজট বেড়ে যাওয়ায় ভোগান্তি আগের তুলনায় বেড়ে গেছে। এ জন্য কর্তৃপক্ষকে জনসমাগমস্থলে বুকের দুধ খাওয়ানোর ব্যবস্থা রাখার পাশাপাশি মায়েদের লোকলজ্জার ভয় দূর করে বাইরে শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ানোর চর্চা করা উচিত।
জনসমাগমস্থলে বুকের দুধ খাওয়ানোর ব্যবস্থা রাখার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি স্বীকার করে জাতীয় পুষ্টিসেবা কর্মসূচির ব্যবস্থাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাজেটে বরাদ্দ না থাকায় এ বছরের কর্মপরিকল্পনায় বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা যাচ্ছে ন
নীলা ইসলামের পুরো যাত্রাই ছিল ভোগান্তির। তিনি বললেন, ‘প্রচণ্ড যানজট, ভাঙাচোরা রাস্তা ঠেলে যেতে হয়েছে। কিন্তু সবকিছুকে ছাপিয়ে সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানোই সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। বাসে তা-ও কাপড় আড়াল করে কোনোভাবে খাওয়ানো যায়। কিন্তু বাসস্ট্যান্ডে-কাউন্টারে অপেক্ষার সময় সেই সুযোগও থাকে না।’
শিশুপুষ্টি বিশেষজ্ঞদের মতে, সুষ্ঠু শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য শিশুকে জন্মের পর থেকে দুই বছর পর্যন্ত বুকের দুধ খাওয়ানো খুব জরুরি। আর প্রথম ছয় মাস শিশুকে কেবলই বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। অন্য সম্পূরক খাবার তো দূরের কথা, এ সময় পানিও দেওয়া যাবে না। এই ছয় মাস বুকের দুধ থেকেই শিশু যাবতীয় পুষ্টি পেয়ে থাকে।
কিন্তু আমাদের দেশে ঘরের বাইরে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সুযোগ খুব কম। দীর্ঘ ভ্রমণের সময় সে সমস্যা আরও প্রকট হয়। আর ঈদযাত্রার সময় গরম, যানজটের তীব্রতা, শিশুর কান্না, বুকের দুধ খাওয়াতে না পারা—সব মিলিয়ে পরিস্থিতি অসহনীয় হয়ে পড়ে।
গৃহিণী রাশেদা বেগমের ক্ষেত্রে এ অভিজ্ঞতা আরও তিক্ত। বাবার বাড়ি চট্টগ্রামে যাতায়াতের জন্য তিনি ট্রেন পছন্দ করেন। ভ্রমণের সময়টা তিনি চান সন্তান ঘুমিয়ে থাক। প্রস্রাব যাতে না করে এ জন্য কম পানি খাওয়ান। তবে না খাইয়ে শিশুকে দীর্ঘক্ষণ ঘুম পাড়িয়ে রাখা শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য খুব ক্ষতিকর বলেছেন স্বাস্থ্যবিশেষজ্ঞরা।
রাশেদা বলেন, ‘রেলস্টেশনে হাজারো মানুষের ভিড়। এর মধ্যে শিশুকে দুধ খাওয়ানো খুব বিব্রতকর। তবুও বাচ্চার কথা ভেবে কয়েকবার চেষ্টা করেও পারিনি।’ তিনি বলেন, ঈদযাত্রায় বাসা থেকে বের হয়ে যানজট পেরিয়ে রেলস্টেশনে গিয়ে ট্রেনের জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। স্বামী সঙ্গে থাকলে আড়াল করে কোনোভাবে শিশুকে দুধ খাওয়ানো যায়। কিন্তু একা চলাফেরায় খুব বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়।
নবজাতক বা ছোট শিশুদের নিয়ে চলাফেরা করেন, এমন বেশ কয়েকজন নারীর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তাঁরা বলেন, জনসমাগমস্থলে বুকের দুধ খাওয়ানোর ব্যবস্থা না থাকায় বেশ কষ্টকর অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। কিন্তু দীর্ঘ ভ্রমণে বাসস্টেশন, রেলস্টেশন, লঞ্চঘাট, ফেরিতে কোথাও বুকের দুধ খাওয়ানোর কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে এ সময় শিশুকে ঠিকমতো খাওয়ানো যায় না। এর পাশাপাশি শিশুর ডায়াপার পরিবর্তন, পোশাক পরিবর্তনসহ শৌচাগার নিয়েও বেশ সমস্যার কথা জানান তাঁরা।
যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের মতো উন্নত দেশে জনসমাগমস্থলে শিশুদের দুধ খাওয়ানো সংক্রান্ত আইন রয়েছে। শৌচাগারের সঙ্গে স্বল্প পরিসরে বুকের দুধ খাওয়ানো, ডায়াপার পরিবর্তনের ব্যবস্থা রয়েছে। পাশাপাশি সেসব দেশে দুই-আড়াই ঘণ্টা পর পর বেশ খানিকটা সময়ের জন্য পরিবহন যাত্রাবিরতির ব্যবস্থা আছে; সে সময় মায়েরা সন্তানকে দুধ খাওয়াতে পারেন। এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে ২০১৭ সালে দেশের রেলস্টেশনগুলোয় ১০০টি কক্ষ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যেখানে মায়েরা তাঁদের সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারবেন।
এ বিষয়ে শিশু ও পুষ্টিবিশেষজ্ঞ এম কিউ কে তালুকদার বলেন, শিশু জন্মের ছয় মাস পর্যন্ত শুধু বুকের দুধ দিতে হবে। দীর্ঘ সময় শিশুকে মায়ের দুধ না খাওয়ালে রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যায়; যা শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এর পাশাপাশি অন্য স্বাস্থ্য সমস্যাও দেখা দিতে পারে। শিশুর চাহিদার ভিত্তিতে দুধ খাওয়ানোর প্রয়োজনীয়তা বুঝতে হবে। ফলে জনসমাগমস্থলে দুধ পান করানোর ব্যবস্থা রাখার পাশাপাশি জনসচেতনতা তৈরির ওপর জোর দেন তিনি।
যত দিন পর্যন্ত জনসমাগমস্থলে শিশুদের দুধ খাওয়ানোর জন্য আলাদা স্থানের ব্যবস্থা না করা যায় তত দিন মায়েরা বুকের দুধ বোতলে বহন করতে পারেন। তবে শিশুকে কোনোভাবেই দুই ঘণ্টার বেশি টানা ঘুমাতে দেওয়া যাবে না। এরপর ঘুম থেকে তুলে খাওয়াতে হবে।
জেন্ডার বিশেষজ্ঞ ফেরদৌসি সুলতানা সন্তানকে বুকের দুধ পান করাতে এ ধরনের অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন। তাঁর শ্বশুরবাড়ি খুলনা যেতে তাঁকে চারটি ফেরি পার হতে হয়েছে। ফেরদৌসি সুলতানা বলেন, লোকলজ্জার কারণে ঘরের বাইরে শিশুদের দুধ খাওয়াতে সব সময় বিড়ম্বনা পোহাতে হয়। তবে যানজট বেড়ে যাওয়ায় ভোগান্তি আগের তুলনায় বেড়ে গেছে। এ জন্য কর্তৃপক্ষকে জনসমাগমস্থলে বুকের দুধ খাওয়ানোর ব্যবস্থা রাখার পাশাপাশি মায়েদের লোকলজ্জার ভয় দূর করে বাইরে শিশুদের বুকের দুধ খাওয়ানোর চর্চা করা উচিত।
জনসমাগমস্থলে বুকের দুধ খাওয়ানোর ব্যবস্থা রাখার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি স্বীকার করে জাতীয় পুষ্টিসেবা কর্মসূচির ব্যবস্থাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাজেটে বরাদ্দ না থাকায় এ বছরের কর্মপরিকল্পনায় বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা যাচ্ছে ন
0 Comments