হে মন মরণকে কর স্মরণ

দুনিয়ার মায়া খ্যাতি ছেড়ে যেতে হয় না ফেরার দেশে। কত ক্ষমতাধর পরিণত হয় নিথর লাশে। আল্লাহ বলেন- তোমরা যেখানেই থাক না কেন, মৃত্যু তোমাদের নাগাল পাবেই, যদিও তোমরা কোনো শক্ত ও সুদৃঢ় দুর্গে অবস্থান কর।’ -সূরা নিসা : ৭৮
ছোট বড়, ধনী-গরিব, প্রভাবশালী, প্রতাপশালী কেউই মৃত্যুর হাত থেকে রেহাই পাবে না।
নবী (সা.) বলেন, ‘দুনিয়ার সঙ্গে আমার সম্পর্ক কী? আমি তো সেই মুসাফির ব্যক্তির মতো, যে কোনো গাছের ছায়ায় কিছু সময় বিশ্রাম নিয়ে চলে যায়।’ (তিরমিজি, মিশকাত-৫১৮৮)।
ধূলির সংসারে ইমারত বানিয়ে আমরা আসল ঠিকানা ভুলে যাই। এ দুনিয়া মুসাফিরখানা। এ দুনিয়া আমাদের চিরদিনের ঠিকানা নয়।
আল্লাহ বলেন- প্রতিটি প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। আর ‘অবশ্যই কিয়ামতের দিনে তাদের প্রতিদান পরিপূর্ণভাবে দেয়া হবে। সুতরাং যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে সে-ই সফল। আর দুনিয়ার জীবন শুধু ধোঁকার সামগ্রী। (সূরা আল-ইমরান-১৮৫)
আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, পৃথিবীর এমন কোনো মানুষ নেই যে সফলতা চায় না। এ সফলতা একেকজন একেক দৃষ্টিকোণ থেকে নির্ধারণ করে। কেউ দুনিয়ার প্রচুর সম্পদ, নারী, গাড়ি-বাড়ি, ক্ষমতা, প্রভাব-প্রতিপত্তি ইত্যাদির মাধ্যমে পেতে চায়। কেউ আবার অন্যকিছু। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মানুষের সফলতা কিসে তা আল্লাহতায়ালা এ আয়াতে বলে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে, ‘যাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে সেই সফল।’ (তাফসিরে কোরানুল কারিম)।
আল্লাহ বলেন- তোমরা জেনে রাখ, নিশ্চয় দুনিয়ার জীবন খেল-তামাশা, ক্রীড়া-কৌতুক, জাঁকজমক, পারস্পরিক গর্ব-অহঙ্কার, ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে প্রাচুর্য লাভের প্রতিযোগিতা ছাড়া আর কিছুই নয়। এর উপমা হল বৃষ্টি, যার উৎপন্ন শস্যসম্ভার কৃষকদের চমৎকার করে, তারপর সেগুলো শুকিয়ে যায়, ফলে আপনি ওগুলো পীতবর্ণ দেখতে পান, অবশেষে সেগুলো খড়কুটোয় পরিণত হয়। আর আখেরাতে রয়েছে কঠিন শাস্তি এবং আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি। আর দুনিয়ার জীবন প্রতারণার সামগ্রী ছাড়া কিছু নয় (সূরা হাদিদ-২০)।
আল্লাহ নবীজিকে বলেন, নিশ্চয়ই তুমি মরবে এবং তারাও মরবে’ (জুমার ৩৯/৩০)। শ্রেষ্ঠ মানুষটিকে আল্লাহ জিবরাইলকে পাঠিয়ে মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। অতএব, মৃত্যুর কথা স্মরণ করা ও স্মরণ করিয়ে দেয়া দুটিই মুমিনের কর্তব্য।
কেননা দুনিয়ায় ডুবে থাকা মানুষ মৃত্যুকে ভুলে যায়। এই ফাঁকে শয়তান তাকে দিয়ে অন্যায় করিয়ে নেয়।
মৃত্যুদেহের স্পন্দন থামিয়ে দেয়। চেনা জানা মানুষের কান্না সৃষ্টি করে। আল্লাহ বলেন, আর তিনিই জীবন দেন আর মৃত্যু দেন। (সূরা মু’মিনুন : আয়াত ৮০)।
মৃত্যুর কোনো নির্ধারিত ক্ষণ নেই। যিনি মৃত্যুর কথা স্মরণ করেন তার আমল সুন্দর হয়। দুনিয়ার জৌলুস তাকে ধোঁকায় ফেলতে পারে না। আমাদের সব সময় মৃত্যুর প্রস্তুতি নিতে হবে এতে আমাদের মুমিন জীবন অর্জন হবে।
লেখক :মেহেদী হাসান সাকিফ, শিক্ষার্থী

Post a Comment

0 Comments