মজিদ সাহেব!

গ্রাম থেকে একটু দূরে ই বাজার । বাজারের চায়ের টং দোকান থেকে ২৫ টাকার গরম দুধ নিলেন  মজিত সাহেব।বড়লোক নামডাক অনেক। হাতে দুধের সাদা পলিথিন নিয়ে ঢুকলেন বাজারের খাবার হোটেলে। টিনের চালার ছোট্ট হোটেল। সামনে আবার কাপড়ের পর্দা ঝুলানো।  খোলা জানালা দিয়ে নরোম শীতল হাওয়া আসে অবিরাম ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে। খাবার টেবিল আছে মোটে পাঁচটা। কোনোটার পা ভাঙ্গা, কোনটা ভেঙ্গে গেছে, কোনোটা পোঁকায় কাটছে, হোটেলটি বন্ধ হওয়ার উপক্রম। বেশ খদ্দর ভিড়ে জমেছে।জমবে না কেনো। রান্নার সুনাম আছে যে। মজিদ সাহেব একটি বেঞ্চে বসলেন। দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বললেন- কমলা, শুধু একপ্লেট ভাত দে আমারে। আর কিছু লাগবে না।
- কেন ভাইজান, তরকারি লাগবে না।
- নারে কমলা, দুধ নিয়া আসছি ঐ চায়ের দোকান থেকে।
- বাসায় দুধ রাখে নাই?
- রাখে। রাখে।
 - শুধু আপনাকে খেতে দেয় না?
মজিদ সাহেব আর কোন  কথা বল্লেন না। চুপ হয়ে হোটেলে বাহিরের দিকে  দূরের ওই রৌদ্রোজ্জল আকাশ দেখেন। আকাশে রোদ নাচে। রোদ ভাসে চোখে। রোদে চোখের পানি শুকোয়। শুকোয় না হৃদয় চোখের পানি। হৃদয়ে ব্যথায় ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। পোঁকা মাকড় কামড়াচ্ছে ক্ষতের বীভৎস শরীর ভেতর মনটাকে। কামড়ের জ্বালা বড্ড ব্যথা দেয়। ব্যথায় ব্যথায় স্মৃতিরা জেগে ওঠে। স্মৃতিরা আঘাত করে। এ আঘাত ভয়ংকর। অসহনীয়।

লোকজন আসছে হোটেলে ভাত খাবে বলে। বাজারের ব্যবসায়ী  আতা মিয়া  ও আসছেন। আতা মিয়ার চোখ পড়ে মজিদ সাহেবের দুধভাতের বাসনে উপর। তখনি  কথা বলে শুরু করেন । চাচা, শুনলাম আপনার ছেলেরা আলাদা সংসার পেতেছে, আপনি কার সঙ্গে আছেন? কে আপনাকে খাওয়ায়??
-১০-১৫ দিন ধরে ছোট বউ মার সাথে আছি।
-আগে কার সাথে ছিলেন?
-বড় বউমার সাথে। সে বাপের বাড়ি গিয়েছে। আমার নাতি হবে বোধহয়। তাই ছোট বউ মার সাথে খাচ্ছি। এ জীবনে আর স্বাধীনতা নেই। আজ এ ঘরে তো, কাল ও ঘরে। ভাতিজা, এ জীবন বড় জ্বালার। বুইড়া মানুষের দাম নেই জগতে। আর বিপত্নীক জীবনের মতো অসহনীয় জীবন বোধহয় জগতসংসারে আর নেই। বোঝলে ভাতিজা।  আতা মিয়ার মন খারাপ হয়। তবুও প্রবল উচ্ছাসে জিজ্ঞেস করে- চাচা, একটা কথা আপনাদের বড় মাটিরঘর! ঘরের বারান্দাটা আছে না? মজিদ সাহেব  কোথায় যেন হারিয়ে গিয়ে জবাব দিলেন, নেই। সেখানে বড় ছেলে বিল্ডিং করেছে। বলেছিলাম, তার দাদার স্মৃতি ধরে রাখতে; শুনেনি আমার কথা। আমারে কত কি বুঝাইল! কষ্ট পেলাম সেবার বোঝলে আতা মিয়া।

বড় মাটির ঘর গ্রামের প্রাচীন ঐতিহ্য। বহু পুরনো। সত্তর দশকে নির্মিত হয়েছিল। তখনকার দিনে, বড় মাটির ঘরের উঠোন জুড়ে পাড়ার বাচ্চারা শৈশবের খেলায় মেতে ওঠত। গ্রামের পুরুষেরা বৃষ্টির দিনে বারান্দায় জমাত লুডু, কড়ি আর মাটিতে দাগ কেটে গাছের শুকনো ডাল ভেঙ্গে ঘর বানিয়ে ষোল অথবা বত্রিশ গুটির খেলা। সন্ধ্যা হলে খেলা ভাঙ্গত। বাচ্চারা ঘরে ফিরত। কিন্তু হৈচৈ কানাকানি থামত না। যুবক এবং বৃদ্ধরা দলবেধে আসতে শুরু করত সূর্যডুবার সাথে সাথে ঘরে ঘরে। বড় মাটির ঘরের বারান্দার দিকে মুখ করে উঠোনে বিছানো সাদা কাগজের চটে সবাই ভালোমত বসত। বারান্দার বাম দিকের কোণায় জ্বলত প্রদীপ। ঠিক মাঝখানের চিয়ারে বসানো হত সাদাকালো টিভি। মজিদ সাহেবের বাবা কিনেছিলেন। তখন অনেক জমি ছিল গ্রামের । মানুষ বর্গা চাষ নিত। গ্রামের সবচে বেশি জমির মালিক ছিলেন তিনি।

মানুষ সংবাদ শুনতে অপেক্ষা করত উঠোনে। মনে আছে  ইরাক যুদ্ধের সময়কালে মানুষের কী ভিড়ছিল! কী চাপা শব্দ ছিল! কী নিদারুণ কান্নার ধ্বনি। সাদ্দামের জন্য আকাশে উত্থিত হতো বৃদ্ধাদের দোহাত। বুশকে গালি দিত। সাদ্দাম বুশের কাহিনী সম্বলিত টেপ রেকর্ড-এ অধীর থাকত মুরুব্বিরা।  পাড়ার অনেক অনুষ্ঠান সম্পাদন হত এই স্মৃতির উঠোনে। ভালোবাসা ভালোলাগা আর ভীষণ বিষাদের স্মৃতি জড়িয়ে আছে উঠোনের সর্বত্র জুড়ে।

মনে পরে তখন  বিটিভিতে বৃহষ্পতি আর শুক্রবার বাংলা সিনেমা সম্প্রচার হতো। মজিদ সাহেবের পুত্রবধু আর মেয়েরা সমস্ত কাজকর্ম শেষ করে সিনেমা দেখতে বসত। মাঝেমধ্যে গিন্নি রিনা বেগমও বসতেন। সিনেমা তাকে অতটা টানত না। মানুষের সঙ্গে গল্প বলাটা তার পছন্দ। কিছু মানুষ আছেন, যাদের জীবনের গল্প ভাগাভাগি করতে পারাটা অ্যালোপ্যাথিক ঔষধের মতো সু-স্বাস্থের জন্য কাজ করে। তারা জীবনের সুখের কিংবা দু:খের গল্প না বলে থাকতে পারে না।

মজিদ সাহেবের একমাত্র মেয়ে আনিকা। ১৫ বছর বয়স তার।  বলাচলে দিনের বেলা টিভির পরিচালক সে। কাকে ঘরে জায়গা দিবে, কাকে খাটে বসতে দিবে, কে টেবিলে বসবে,কে মাটিতে বসবে, কে পাটিতে বসবে, কাকে বের করে দিবে- এসবের দায়িত্ব সে খুশি মনে পালন করত।  হঠাৎ এক বৃহস্পতিবার, সিনেমার এই ঘরে ইলিয়াসকে সে প্রথম দেখে। পাড়ার পরিচিত মামুনের সঙ্গে। মামুনের সঙ্গে তার ভালো খাতির। মসজিদে একসঙ্গে সকালের মক্তব পড়েছে। ইলিয়াস ডানপিটে ছেলে। নানাবাড়িতে বড় হয়েছে। সেখানের এক কলেজে সদ্য ভর্তি নিল। আনিকা তাকে কাঠের চিয়ারে বসতে দিয়েছে।
মামুনকেও বেশ খাতির করছে আজ। টিভিতে তখন প্রেমের প্রথম সাক্ষাতের দৃশ্য চলছে। আনিকা মিটমিট করে ইলিয়াসকে দেখছে। ইলিয়াসের সে দিকে খেয়াল নেই। মামুন বিষয়টা ধরতে পেরে ইলিয়াসকে টিপ্পনি কাটে। কানে কানে ফিসফিসও করেছে বার কয়েক। তারপর চোখে চোখ পড়েছে। লজ্জায় সে চোখ জড়োসড়ো হয়ে মাটির রেখাকেই আবিস্কার করেছে অনেক সময়। ছবি সমাপ্ত হল। আসর ভাঙ্গল। সবার শেষে তারা বের হল। ইলিয়াস আনিকার দিকে তাকায়নি। বারান্দার পা দানিতে পা পড়লে মামুনের ডাক পড়ে। সে বারান্দায় আসে। ইলিয়াস পা দানিতেই দাঁড়িয়ে আছে।

-কিরে মামুন, ময়না আফার ছেলেটার কি অবস্থা?
-ভালো নারে। মনে হয়, বাঁচবে না। স্বাস্থ শুকিয়ে গেছে। পেট গিয়ে পিঠে লেগেছে। চোয়াল দেবে গেছে। ডাক্তাররা কিছু বলছে না। শুনলাম, ঢাকায় বড় ডাক্তার দেখাতে নিয়ে যাবে। টাকা পয়শা জোগাড় করছে। দোআ করিস। আল্লাহ্ যেন সুস্থ করে দেয়। 
- দোআ করব। আফারে তো অনেকদিন হল দেখি না। দুলাভাই কি আসতে দেয় না?
-ওদের তো অনেক কাজ। গোয়ালে দুধের গাভি আছে। কয়েকটা সবজির ক্ষেত করে। আফা আসলে না-কি কাম পড়ে থাকে।
- অহ! আচ্ছা ছেলেটা কে? আগে তো তোর সঙ্গে দেখেনি। আমার মনে হয় আগে এ গ্রামেও তাকে দেখি নাই।
-আমার বন্ধু ইলিয়াস।  ওর নানা বাড়ি গাজীপুর। সেখানে  থাকে এবং লেখাপড়া করে। বাড়িতে কম আছে। খুব ভালো ছেলে।
-কাল আসিস। তোর বন্ধুরে নিয়ে আসিস।মনে থাকবে।
-না। কাল আসতে পারবো না। ও পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে আমাদের ক্রিকেট খেলা আছে।

আনিকা বন্ধু এবং তার বন্ধুর জন্য অপেক্ষা করে। তারা আসেনি। সাময়িক খারাপ লেগেছিল। তিনদিন পর পথে আনিকার সঙ্গে মামুনের দেখা।

-কিরে, শুক্রবার তো আসলি না। তোর বন্ধু কই?
- সেদিন খেলা ছিল। বন্ধু চলে গেছে। তার ক্লাস আছে।
আনিকা আর কিছু জিজ্ঞেস করেনি। দু’পায়া পথ ধরে হাঁটতে শুরু করে। হৃদয়ে হঠাৎ করে চিন দিয়ে ব্যথা ওঠে। শূন্যতার অনুভবে মানুষের হৃদয়ে যেমন ব্যথা হয়। কখনো কখনো তেমন না জানা, না চেনা  মানুষটার অবহেলাও মনগহীনে দাগ দিয়ে যায়। আর সেটা যদি হয়, ভালো লাগার প্রথম পুরুষের থেকে! তাহলে দাগটা যন্ত্রণাও দিতে থাকে।

প্রতীক্ষার ৬১ দিন পর, এক শনিবারের বিকেলে  তাদের দেখা হয়। দুজনেই হাঁটতে বের হয়েছিল।ইলিয়াস একাএকা হাটছে সাথে কেউ নাই। আনিকার সঙ্গে চাচাতো বোন নাবিলা।এই ডিসেম্বর মাসে যার নয় বছর  পূর্ণ হলো। ইলিয়াসকে দেখে সে অস্থির হয়ে ওঠে। কথা বলতে মন অস্থির হয়ে পড়ে। আনিকা এগিয়ে গিয়ে কথা বলতে আরম্ভ করে। বড়লোক আর দাপটশালীর মেয়েরা বোধহয় একটু বেশিই সাহসী হয়।

একটা সময় তারা জীবনের  অজানা এক স্রোতে মিশে যায়। ভেসে বেড়ায় নতুন পৃথিবীর ছবি বুকে নিয়ে। জীবন আরও সুন্দর হয়ে ওঠে তাদের। যেমন প্রেমে পরলে মানুষ সুন্দর হয়। বছর দুই পর আনিকার বিয়ের পয়গাম আসে। মজিদ সাহেব ব্যস্ত হয়ে পড়েন মেয়ের বিয়ে দিতে। বড় ভালোবাসেন মেয়েকে। একমাত্র মেয়ে তার। মায়ের মতো অবিকল চেহারায় জন্মেছে। মেয়েই তার আরেক পৃথিবী।  আনিকা বিয়েতে রাজি হয় না। ভাবি তাকে কারণ জিজ্ঞেস করে। কিছু বলে না। পাছে ভয় করে। যদি ইলিয়াসকে দেশান্তর করে দেয়। ইলিয়াসও বাপের বড় ছেলে। তাকে বিয়ে দিবে না এখন। তবে বড়ঘরের জন্য নিশ্চয় বাবা অমত করবেন না। তাদেরকে অজানা ভয় প্রতিদিন তাড়া করতে লাগল। প্রতিদিন তারা ভেঙ্গে পড়ছে। সাহস দেবার কেউ নেই তাদের পাশে। একমাত্র মামুনটাও ঢাকা থাকে। এলাকায় কম আসে ।আনিকা বাবাকে কিছু বলতে সাহস পায়নি। একদিন বিয়ে ঠিক হলো। বিয়ের আগের রাতে বড়ঘরের অন্ধকারাচ্ছনে উঠোনে তারা বিষ খায়। কেউ বাঁচেনি।আনিকা ইলিয়াস এখানেই সমাপ্ত হয়ে যায়।রেখে যায় কিছু স্মৃতি কথা।

তারপর মজিদ সাহেব আর স্বাভাবিক হয়ে ওঠতে পারেননি। বছর দুই পর গিন্নিও মেয়ে শোকে মারা গেল। প্রচণ্ড ধাক্কা খেলেন। সবকিছু থেকে নিজেকে ভিন্ন রকমভাবে গুছিয়ে নিলেন। জগত সংসারের কোনো কিছুই তাকে আর টানে না। ছেলেরা সুবিধেমতো বিয়ে করল। জমি বেচে দিল। বিল্ডিং করল। এক ছেলে ঢাকায় জমি কিনল। বড়ঘর ভেঙ্গে ফেল্ল। সবকিছুতে নিরব রইলেন। কারো অমতে গেলেন না। আনিকা কোন এক রাতে বাসায় ফিরে। খুব উদাস। এলোকেশে চুল। মুখে চিন্তার রেখা। মজিদ সাহেবের হাত চেপে ধরে অনুনয় বিনয় করে বললেন- ‘বাবা মাফ করে দিও। তোমাকে অনেক ভালোবাসি। বাবা, একটি কথা বলি। পারলে রাখিও; ইলিয়াস তো ঘরের বড় ছেলে ছিল। সে আমার সঙ্গে চলে এসেছে। আমিই তাকে নিয়ে এসেছি। সংসারটা অভাবে পড়েছে। সম্ভব হলে তার বাবারে সহযোগিতা করিও। আমি আসি।’ মজিদ সাহেব ধুরুধুরু বুকে ঘুম থেকে লাফিয়ে ওঠলেন। আনিকাকে ডাকে। সে নেই।

গভীর রাতের নিথর বাড়ি। ঘরটা হালকা নীল আলোয় ভাসছে। জানালা দিয়ে রাস্তার সাদা আলোর বাতিটা চোখে পড়ে। মেয়েটার ছবি সারাক্ষণ চোখে ভাসতে লাগল। মেয়েটা কি আর একটু সময় থাকতে পারত না! আজ কত বছর পর এলো। কত বছর পর বাবা ডাকটি শুনলাম।  আমি কেমন আছি, জানতেও চাইল না। আহ্, দুনিয়ার সবাই স্বার্থপর। নাহ, প্রিয় মেয়ের ক্ষেত্রে স্বার্থের প্রশ্ন জড়ানো যাবে না। এতটুকুন মেয়ে বুঝেই বা কি? আমিই তো বোঝে উঠতে পারি না এখনো।

 সেই রাতে আর ঘুম হয়নি মজিদ সাহেব এর। মসজিদের মাইকে মুয়াজ্জিনের আজানের ধ্ধনি পড়তেই ইলিয়াসদের  বাড়ির পথে রওনা দিলেন। বাড়িন পাশে গিয়ে ডাক দিলেন, ইলিয়াসের বাপ। ও ইলিয়াসের বাপ।

দরজা খোলে বাড়ির বাহিরে আসলেন ইলিয়াসের বাবা। মজিদ সাহেবকে দেখে ভয়ংকরভাবে চমকে ওঠলেন। তিনি তো কখনও এ পথে আসেনি। পা রাখেনি এ বাড়িতে। ‘ভাইজান, বাড়িতে আসেন। ঘরে আসেন।’
- পরে আসমু নে। কথা আছে ....
মজিদ সাহেব ইলিয়াসের বাবার হাত চেপে ধরে বললেন, আমারে মাফ কইরা দিও। আমার মেয়েটার জন্য তোমার ছেলেটা......।’
ইলিয়াসের বাবা ‘ভাইজান’ বলে কেঁদে ওঠলেন। বাড়ির ভিতর থেকে এক নারী কণ্ঠের কান্নার আওয়াজ সকালের বাতাসে বেদনা লেখে দিল।
মজিদ সাহেব ইলিয়াসের বাবার হাতে পঞ্চশ হাজার টাকা দিয়ে ফেরার পথে পা দিলেন। মসজিদে গেলেন। নামাজের বিছানায় অনেক কাঁদলেন। সেখানেই ঘুমিয়ে পড়লেন। আনিকা স্বপ্নে আসেনি। আর কোনোদিন স্বপ্নে আসেনি। কতদিন গিন্নি ও মেয়ের স্মৃতি বুকে নিয়ে ঘুমিয়েছেন, রাতে তাদের দেখার বাসনা তীব্র শীষ দিয়ে মনে জেগেছ, তারপরও আসেনি। তিনি আশ্চর্য হন, গিন্নির কথা ভেবে। মানুষটা চলে যাওয়ার পর একদিনও ঘুমের ঘরে আসেনি। মানুষ ছেড়ে গেলে কি একবারেই যায়!আর কখনো আসে না ফিরে আসে না দেখার জন্য...।

দিন যায়। দুঃখ বাড়ে। ছেলে বউদের বিরক্তির কারণ হয়। সমাজের মানুষরাও আগের মতো তেমন ডাকে না। তার পিছন ঘোর ঘোর করা মানুষগুলোও আজ তার থেকে যোজন যোজন দূরে থাকে। শেষ বয়সে সব কিছু থেকেই কি বৃদ্ধদের প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়! ভেঙ্গে যায় জীবনের সব ঘর!

শীতের সকাল। নিজের ছোট ঘরে একা বসে আছেন মজিদ সাহেব। সেই কত বছর হলো একা একা থাকেন। বৃদ্ধ বয়সে বড় বেমানান লাগে একা থাকাটা। কিছুই ভালো লাগছে না আজ। একরকম গোসল সারলেন। নতুন পাঞ্জাবি পায়জামা পরলেন। কাউকে কিছু না বলে চললেন নয়নপুর এর পথে। পাশের গ্রাম নয়নপুর। মজিদ সাহেবের শুশুরবাড়ি। সেখানেই যাবেন ঠিক করলেন।  বেশ বছর হলো সেদিকে যাননি। গিন্নি মরেছে আজ আট বছর; তার মৃত্যুর তিন বছর পূর্ব থেকেই সেদিকে যাতায়াত বাদ দিয়েছিলেন। কেন যাবেন আজ, তা তিনি নিজেও জানেন না। হাঁটার পথ। খুব যত্নে পা ফেলছেন পথে। হঠাৎ মনে হলো, সেখানে তো মনের মানুষ নেই। আমার জন্য অপেক্ষা করার বা পথ চেয়ে থাকার কিংবা পুকুর পাড়ে বসে আড্ডা দেবার কেউ নেই। তবে আমি সেখানে কেন যাব? তাহলে মনের মানুষ কোথায়?  আমি কি তাকে পেছনে ফেলে এসেছি! আমার কি কোনো জীবনে মনের মানুষ ছিল? এ ভাবে নিজে নিজের সাথে কথা বলতে বলতে কোথায় যে হারিয়ে গেলেন কেউ জানে না। এভাবেই চলতে থাকে মজিদ সাহেবের জীবন প্রদীপ।

লেখক- হাতিম।

এখানে যে নাম, ঠিকানা , প্রকাশ করা হয়েছে তা কাল্পনিক। কারো সাথে মিলেগেলে লেখক দায়ি নয়।ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন বিষয়টাকে।

Post a Comment

0 Comments