লিভার ক্যানসারের ঝুঁকিপূর্ণ উপসর্গ

লিভার ক্যানসার তেমন একটা কমন না হলেও বর্তমানে এ ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা বেড়ে চলেছে। সাধারণত অগ্রসর পর্যায়ে না পৌঁছা পর্যন্ত লিভার ক্যানসারের উপসর্গ প্রকাশ পায় না, তাই নিয়মিত স্ক্রিনিং (মেডিকেল টেস্ট) হতে পারে বেঁচে থাকার হার বাড়ানোর মূল চাবিকাঠি।

মেমোরিয়াল স্লোয়ান কেটারিং ক্যানসার সেন্টারের মেডিক্যাল অনকোলজিস্ট আবু-আলফা বলেন, ‘যদি আমাদের কাছে নিয়মিত স্ক্রিনিং করে এমন কারো মধ্যে ক্যানসারের মতো কিছু দেখি, তাহলে তা আমরা নিরাময় করতে পারি। কিন্তু ক্যানসারটি অগ্রসর পর্যায়ে চলে গেলে অথবা লিভারের বাইরে ছড়িয়ে পড়লে নিরাময় করা সম্ভব হয় না। আমরা চাই না যে কোনো রোগী উপসর্গ নিয়ে আমাদের কাছে আসুক, আমাদের পরামর্শ হলো- নিয়মিত স্ক্রিনিং করা।’

এ প্রতিবেদনে লিভার ক্যানসারের ৪ রিস্ক ফ্যাক্টর (ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়) এবং ৪ উপসর্গ উল্লেখ করা হলো।

* লিভার রিস্ক ফ্যাক্টর: হেপাটাইটিস সি
কিছু বিষয় আপনাকে লিভার ক্যানসারের ঝুঁকিতে রাখতে পারে। ভাইরাস হেপাটাইটিস সি’র ইতিহাস থাকা লোকদের এ ইনফেকশন শনাক্তকরণের ১০ বছর পর লিভার ক্যানসার বিকশিত হতে পারে, বলেন ডা. আবু-আলফা। যদি আপনার হেপাটাইটিস সি এর ইতিহাস থাকে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে লিভার ক্যানসারের জন্য নিয়মিত স্ক্রিনিং করুন। ডা. আবু-আলফা বলেন, ‘হেপাটাইটিস সি নিরাময়ের জন্য চিকিৎসা রয়েছে এবং এভাবে লিভার ক্যানসার প্রতিরোধ হবে।’

* রিস্ক ফ্যাক্টর: হেপাটাইটিস বি
হেপাটাইটিস বি-ও লিভার ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে। যাদেরকে শৈশবে হেপাটাইটিস বি ভ্যাকসিন দেওয়া হয়নি, তারা লিভার ক্যানসারের ঝুঁকিতে রয়েছে, বলেন ডা. আবু-আলফা। তিনি যোগ করেন, ‘হেপাটাইটিস আছে এমন যে কারো চিকিৎসকের মনিটরে থাকা উচিত।’ তিনি হেপাটাইটিস সি অথবা বি ধরা পড়েছে এমন লোককে লিভার ক্যানসার স্ক্রিনিংয়ের জন্য প্রতিবছর অন্তত একবার আল্ট্রাসাউন্ড করতে পরামর্শ দিচ্ছেন। রক্তে প্রোটিন আলফা-ফেটোপ্রোটিন টেস্টও লিভার ক্যানসার শনাক্ত করতে পারে, কিন্তু এটি নির্ভুল টেস্ট বলে প্রমাণিত নয়, বলেন ডা. আবু-আলফা।

* রিস্ক ফ্যাক্টর: অত্যধিক অ্যালকোহন সেবন
নিয়মিত অত্যধিক অ্যালকোহল পান লিভারের কোষকে ড্যামেজ করতে পারে, যা স্কার টিস্যু দ্বারা প্রতিস্থাপিত হতে পারে। তারপর এ অবস্থা লিভার ক্যানসারের দিকে ধাবিত হতে পারে, আমেরিকান ক্যানসার সোসাইটি অনুসারে।

* রিস্ক ফ্যাক্টর: স্থূলতা
ডা. আবু-আলফা বলেন, ‘লিভার ক্যানসারের নিউ ড্রাইভার বা নতুন ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় হলো নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে লিভার ক্যানসারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত প্রধান ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় ছিল স্থূলতা ও ডায়াবেটিস।’ কিন্তু অতিরিক্ত ওজন থাকলেই যে অবধারিতভাবে লিভার ক্যানসার হবে এমন কোনো কথা নেই। যুক্তরাষ্ট্রে অনেক লোক স্থূল, কিন্তু সেখানে লিভার ক্যানসার বিরল। আপনার যত বেশি রিস্ক ফ্যাক্টর থাকবে, লিভার ক্যানসারের ঝুঁকি তত বেড়ে যাবে- তাই আপনার মধ্যে রিস্ক ফ্যাক্টর বিদ্যমান থাকলে ‍চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন।

* নীরব উপসর্গ: অস্বাভাবিক পেট ব্যথা
ডা. ব্রলি বলেন, ‘লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত বেশিরভাগ লোকের পেটের উপরিভাগে ডানপাশে ব্যথা অনুভূত হয়। যখন আমি উপসর্গ নেই এমন রোগীকে পরীক্ষার সময় যেখানে লিভার অবস্থিত সেখানে চাপ দিই, তারা বলে যে ব্যথা অনুভব করছেন। কিন্তু স্থানটিতে ব্যথা অবধারিতভাবে লিভার ক্যানসারের ইঙ্গিত দেয় না। অন্যান্য স্বাস্থ্য দশার কারণেও এ ব্যথা হতে পারে, যেমন- হেপাটাইটিস, পিত্তথলি অথবা অগ্ন্যাশয়ের সমস্যা।’

* নীরব উপসর্গ: চেষ্টা ছাড়াই ওজন হ্রাস
অনেকগুলো রোগের একটি সাধারণ উপসর্গ হলো ওজন ও ক্ষুধা হ্রাস, যাদের মধ্যে বিভিন্ন ক্যানসার ও ভাইরাস অন্তর্ভুক্ত, বলেন ডা. ব্রলি। কিছু ওজন কমে যাওয়ার মানে এটা নয় যে আপনার ক্যানসার আছে, কিন্তু এর সঙ্গে লিভার ক্যানসারে অন্যান্য উপসর্গ থাকলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন।

* নীরব উপসর্গ: দ্রুত পেট ভরে যাওয়ার অনুভূতি
ডা. আবু-আলফা বলেন, ‘পেটে অত্যধিক তরলের কারণে আপনার সচরাচরের চেয়ে দ্রুত পেট ভরা অনুভূতি হবে। এটা মনে রাখা ভালো যে, ক্যানসার সবসময় আপনার ক্ষুধা হ্রাস করবে।’

* নীরব উপসর্গ: চোখ অথবা ত্বকের বর্ণ হলুদ হওয়া
ডা. আবু-আলফা বলেন, ‘জন্ডিসের এসব উপসর্গ ইঙ্গিত দিতে পারে যে আপনার লিভার ক্যানসার রয়েছে। যদি আপনার চুলকানি ও জন্ডিস থাকে, তাহলে এটি ভালো গল্প নয়।’ জন্ডিস কিন্তু অগ্ন্যাশয় ক্যানসারেরও একটি লক্ষণ হতে পারে।

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট

Post a Comment

0 Comments