কামরুল হাসান দর্পণ: দেশে তরুণ জনগোষ্ঠী এখন সর্বোচ্চ সংখ্যক। বলা হয়, এই তরুণরাই দেশের চেহারা বদলে দিতে পারে। অর্থনীতিতে দেশকে দ্রুত এগিয়ে নিতে পারে। সমস্যা হচ্ছে, তরুণদের বেশিরভাগই যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ পাচ্ছে না। কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত এবং তাদের কাজে লাগানোও যাচ্ছে না। ফলে ব্যাপক সংখ্যক তরুণ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। পারিবারিক ও সামাজিক বোঝায় পরিণত হচ্ছে। অথচ বলা হয়, এমন তরুণ ও তারুণ্য এই উপমহাদেশ তো বটেই উন্নত বিশ্বের অনেক দেশেই নেই। উন্নত বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ তারুণ্য সংকটে ভুগছে। তারা উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে তরুণদের আমদানি করে অর্থনীতির চাকা সচল রাখছে। অন্যদিকে বাংলাদেশে তারুণ্য উপচে পড়ছে। কয়েক বছর আগে ইউএনডিপি তার এক প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশ এখন তরুণদের দেশ। তারুণ্যে ভরপুর। দেশের ৪৯ শাতাংশ মানুষের বয়স ২৪ বছর বা তার নিচে। কর্মক্ষম মানুষ আছে ১০ কোটি ৫৬ লাখ, যা মোট জনসংখ্যার ৬৬ শতাংশ। প্রতিবেদনে ভবিষ্যদ্বাণী করে বলা হয়েছে, ২০৩০ সালে কর্মক্ষম জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ১২ কোটি ৯৮ লাখ, যা মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ। আর দেশে বয়স্ক বা ৬০ বছরের বেশি বয়সী মানুষ রয়েছে মাত্র ৭ শতাংশ। ২০৩০ ও ২০৫০ সালে তা বেড়ে দাঁড়াবে যথাক্রমে ১২ ও ২২ শতাংশে। তার অর্থ হচ্ছে, তরুণের সংখ্যা দুর্বার গতিতে বৃদ্ধি পাবে, আর প্রকৃতির নিয়মে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা কমতে থাকবে। বলা যায়, বাংলাদেশ তারুণ্যে ঝলমল একটি দেশ। প্রশ্ন হচ্ছে, তারুণ্যের এই ঔজ্জ্বল্য কতদিন টিকে থাকবে? যদি তরুণদের তারুণ্য যথাসময়ে যথাযথভাবে কাজে লাগানো না যায়, তবে একটা না একটা সময় তা অনুজ্জ্বল হয়ে পড়বে। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় ‘আধমরা’য় পরিণত হবে। বিশ্লেষকরা ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, যদি দেশের তরুণদের কাজে লাগানো না যায়, বা কাজে লাগানোর দ্রুত উদ্যোগ না নেয়া হয়, তবে তাদের তারুণ্য আগামী ৩০ বছর পর্যন্ত টিকে থাকবে। তারপর বুড়িয়ে দেশের বোঝায় পরিণত হবে।
দুই.
বর্তমান সরকারের সময় অর্থনৈতিক উন্নতি নিয়ে বেশ গর্ব করা হয়। এ নিয়ে শাসক দলের উচ্ছ্বাসের কমতি নেই। তার অনুকূলে বিদেশের কোনো প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে তো কথাই নেই। অথচ দেশের এই যে বিশাল তরুণ জনসংখ্যা, তাদের কাজে লাগানোর কি কোনো কার্যকর উদ্যোগ আছে? সরকার ভাল করেই জানে, সে দেশে যথেষ্ট পরিমাণ কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারেনি বা পারছে না। সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বা বিবিএস-এর মতে, যেখানে বছরে ১৩ লাখ কর্মসংস্থান হওয়ার কথা, সেখানে বছরে গড়ে কর্মসংস্থান হয় মাত্র ৬ লাখ। অর্থাৎ কর্মসংস্থান বৃদ্ধি দূরে থাক নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকেরও কম মানুষের কর্মসংস্থান হয়। বিবিএস এ কথাও বলেছে, গত দেড় দশকের মধ্যে বেকারের সংখ্যা এখন সবচেয়ে বেশি। বেকারের মধ্যে ৭৪ শতাংশই তরুণ-তরুণী। সরকারের সামনে এই পরিসংখ্যান যেখানে জ্বলজ্বল করছে, তখন উন্নয়নের বিষয়টি প্রশ্নবোধক হয়ে দাঁড়ায়। আমরা যারা সাধারণ মানুষ, তারা তারুণ্যে সয়লাব হয়ে যাওয়া বাংলাদেশ নিয়ে গর্ব করতে পারি। আরও বেশি গর্ব হতো যদি তাদের দ্রুত কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হতো। আমরা কেবল বলতে পারি, এই তারুণ্য কাজে লাগাতে হবে। অবশ্য বললেই তো হবে না, সরকারের দায়িত্ব এদের কাজে লাগানো। ক্রিকেটে দর্শক সবসময়ই ব্যাটসম্যানের কাছে প্রত্যাশা করে সে চার-ছক্কার বন্যা বইয়ে দিক। দর্শক এটা বুঝতে চায় না, যে ব্যাটসম্যানের কাছে এই প্রত্যাশা, সে সবচেয়ে ভালো জানে চার-ছক্কা মারা কতো কঠিন! চার-ছক্কা মারতে পারলে তো তারও আনন্দ লাগে। এ আনন্দ দর্শকের আনন্দের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। দর্শকেরও মাথায় রাখা উচিত, চার-ছক্কা এমন ব্যাটসম্যানের কাছেই প্রত্যাশা করতে হবে, যে তা মারার কায়দা-কানুন জানে। দশ নম্বর ব্যাটসম্যান যিনি মূলত বোলার এবং কদাচ ব্যাট করেন, তার কাছ থেকে চার-ছক্কা আশা করা একটু বেশি প্রত্যাশা হয়ে যায়। মাঠে খেলা আর গ্যালারি বা টেলিভিশনের সামনে বসে খেলা দেখা এক কথা নয়। হ্যাঁ, অবশ্যই যারা ক্রিকেট খেলে তাদের দক্ষতা ও যোগ্যতা দিয়ে ক্রিকেটার হতে হয়। তাদের লক্ষ্যই থাকে দর্শকের প্রত্যাশা পূরণ করা। দর্শকের প্রত্যাশা পূরণ তারা তখনই করতে পারে, যখন খেলাটা খেলার জন্য যথেষ্ট দক্ষতা ও যোগ্যতা অর্জন করে। সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। দক্ষতা ও যোগ্যতায় ঘাটতি থাকলে, কোনো সরকারের পক্ষেই সঠিকভাবে দেশ পরিচালনা করা সম্ভব নয়। কথার ফুলঝুরি দিয়ে উন্নয়নের কথা বলা, আর বাস্তব পরিস্থিতি উপলব্ধি করা এক কথা নয়। আমরা বলছি না, বর্তমান শাসক দলের দক্ষতা-যোগ্যতার অভাব রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই তাদের সাফল্য রয়েছে। তবে যে জায়গাটায় সবচেয়ে বেশি দক্ষতা ও যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখার দরকার, সে জায়গাটায় যথেষ্ট ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। দেশের অর্থনীতির দিকে যদি আমরা তাকাই, তবে দেখব, সেখানে মানুষের প্রকৃত উন্নতির চেয়ে শ্লোগানের উন্নতি অনেক বেশি। এর মাঝে বিরাট শুভংকরের ফাঁকি লুকিয়ে আছে। এই ফাঁকিঝুকি নিয়েই শাসক দলের পক্ষ থেকে এক ধরনের গর্ববোধ করার প্রবণতা রয়েছে। এই গর্ব বিশাল সংখ্যক বেকারের কাটা গায়ে নুনের ছিঁটার মতো মনে হওয়া স্বাভাবিক। তারা প্রশ্ন করতেই পারে, দেশে লাখ লাখ বেকারের বোঝা নিয়ে অর্থনীতির উন্নতি হচ্ছে কিভাবে? ইউএনডিপি’র প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে, দেশের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর বিরাট অংশ বেকার। যুব জনগোষ্ঠীর একটি অংশ মা-বাবার আয়ের ওপর নির্ভরশীল। এরা কাজ চায়। না পেলে পরিবারিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এটাই তো বাস্তবতা! কোনো তরুণ কি চায় সে মা-বাবার বেকার ছেলে হয়ে থাকুক? বেকারত্বের অসম্মানজনক জীবনযাপন করুক? আমরা প্রতিনিয়ত সম্ভাবনার বাংলাদেশের কথা বলি। এই কয়েক বছর আগেও বাংলাদেশকে ‘এশিয়ার ইমার্জিং টাইগার’ হিসেবে অহরহ বলা হতো। সে সময় এ কথাও শোনা গেছে, এখন আর বাসা-বাড়িতে কাজ করার মতো কোনো লোক পাওয়া যায় না। বাসা-বাড়িতে চাকর-বাকরের কাজ কেউ করতে চায় না। এর যুক্তিও ছিল। বাংলাদেশে গার্মেন্ট শিল্প যেভাবে প্রসারিত হয়েছিল, তাতে একজন অনভিজ্ঞ কাজের লোকও সেখানে চাকরি পেয়ে যেত। তারা বাসা-বাড়ির দাসত্ব থেকে সম্ভাবনাময় চাকরিকেই প্রাধান্য দিত। একের পর এক গার্মেন্ট শিল্প প্রতিষ্ঠার কারণে দেশের বেকারের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ছিল। এখন এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি খাতে পরিণত হওয়া এই গার্মেন্ট শিল্পে একের পর এক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, আর কর্মজীবীরা বেকার হয়ে পড়ছে। পত্র-পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত কয়েক বছরে শত শত কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। লাখ লাখ শ্রমিক ও কর্মকর্তা বেকার হয়েছে। তারা এসে যুক্ত হয়েছে, চাকরি প্রত্যাশী বেকারের মিছিলে। অর্থনীতির অন্যতম বড় স্তম্ভ জনশক্তি রপ্তানি খাত। এই খাতটিও এখন করুণ দশায় উপনীত। জনশক্তির সবচেয়ে বড় বাজার মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে এই রপ্তানি সর্বকালের সর্বনি¤œ পর্যায়ে পৌঁছেছে। কোনো কোনো দেশ লোক নেয়াই বন্ধ করে দিয়েছে। প্রায় প্রতিদিন শত শত শ্রমিক দেশে ফিরছে। সউদী আরব ও মালয়েশিয়া থেকে এ মাসের মধ্যেই কয়েক হাজার শ্রমিক ফেরত আসবে। এমনিতেই কর্মসংস্থানের ঘাটতি রয়েছে, তার ওপর তারাও প্রভাব ফেলবে। ফলে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রটি আরও সংকুচিত হবে। দেশে বেকারদের কর্মসংস্থানের অন্যতম প্রধান এই দুইটি খাতে যখন কর্মসংস্থান হওয়ার পরিবর্তে বন্ধ হচ্ছে এবং বেকারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তখন আমরা কীভাবে বলি, অর্থনীতিতে আমরা শনৈশনৈ উন্নতি করছি?
তিন.
সরকারের তরফ থেকে দেশের মাথাপিছু আয় বছরে ১৯০৯ ডলার বলে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এ ঘোষণা নিয়ে অর্থনীতিবিদদের মধ্যে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। মাথাপিছু আয়ের এ হিসেব ধরলে দেখা যায়, ষোল কোটি মানুষের প্রত্যেকের মাসে গড় আয় প্রায় ১৪ হাজার। প্রশ্ন হচ্ছে, এই আয় কি প্রত্যেকে করতে পারছে? আবার এই গড় আয়ের মধ্যে যে আয় করে না বা বেকার তার আয়ও রয়েছে। ফলে মাথাপিছু আয়ের হিসাবটি যে পুরোপুরি সঠিক নয়, তা বলা বাহুল্য। আমরা যদি পাঁচ সদস্যর একটি পরিবারের কথা ধরি, তাহলে দেখা যাবে পরিবারটির গড় আয় প্রায় ৭০ হাজার টাকা। এর মধ্যে যে সদস্য কর্মপোযোগী নয়, তার আয়ও রয়েছে। এটা কি বিশ্বাসযোগ্য হতে পারে? মাথাপিছু গড় আয়ের এ হিসেব ধরলে বাংলাদেশে কোনো দরিদ্র ও ভাসমান পরিবার থাকার প্রশ্নই ওঠে না। প্রত্যেক পরিবারই সচ্ছল হওয়ার কথা। বেকারত্বের চিহ্ন থাকার কথা নয়। অথচ সরকারি- হিসেবে দেশে বেকারের সংখ্যা লাখ লাখ আর বেসরকারি হিসেবে কয়েক কোটি। ফলে মাথাপিছু আয়ের এ হিসাব যে শুভংকরের ফাঁকি, তা পাঠক মাত্রই বুঝতে পারছেন। বছর দুয়েক আগে ইউএনডিপি’র এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে যারা কর্মজীবী তাদের শতকরা ৮০ ভাগ প্রতিদিন উপার্জন করেন ৩১৩ টাকা। মাসে ৯৩৯০ টাকা। একজন কর্মজীবী, যার সংসারে তিন জন সদস্য রয়েছে, তার পক্ষে কি এই আয় দিয়ে মৌলিক চাহিদা পূরণ করে জীবনযাপন করা সম্ভব? শহরের একজন কর্মজীবীর কথা চিন্তা করলে তো তা অকল্পনীয় ছাড়া কিছু মনে হওয়ার কথা নয়। তাহলে সরকারের পক্ষ থেকে যে মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ও অর্থনীতির উন্নতির কথা বলা হচ্ছে, তা ঠিক না বেঠিক, তা বোধ করি বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে বলার অবকাশ নেই। জিডিপি’র প্রবৃদ্ধি নিয়েও রয়েছে নানা ধরনের হিসাব। সরকার জিডিপি নির্ধারণ করেছে ৮.২ শতাংশ। এ নিয়েও অর্থনীতিবিদসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার দ্বিমত রয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, জিডিপি বাড়লেও এর সুফল সাধারণ মানুষ পাচ্ছে না। এতে আয়বৈষম্য ব্যাপক হারে বেড়েছে। একটি শ্রেণী বিত্তশালী হয়ে উঠেছে, সাধারণ মানুষ দরিদ্র্যতার মধ্যে আছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এসব সংখ্যাতাত্ত্বিক জিডিপি দেশের উন্নয়নের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরে না। আবার অনেকে বলছেন, বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প দেখিয়ে উন্নয়নের ফিরিস্তি তুলে ধরলেই প্রকৃত উন্নয়ন বোঝায় না। প্রকৃত উন্নয়ন সেটাই যেখানে অর্থনৈতিক চাঞ্চল্য থাকে। ব্যাপক হারে বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। সাধারণ মানুষের হাতে স্বচ্ছন্দে চলার মতো অর্থ থাকে। বলাবাহুল্য, দেশে এখন এ পরিস্থিতি নেই। সরকারকে ঘিরে থাকা একটি শ্রেণী বা এর বাইরে কিছু মানুষের হাতে অগাধ অর্থকড়ি থাকাকে যদি সরকার মানুষের উন্নতি হয়েছে বলে মনে করে, তবে বলার কিছু নেই। বাস্তবতা হচ্ছে, দেশের বেশিরভাগ কর্মজীবী যে বেতন পায়, তা দিয়ে নিজের ও পরিবারের ন্যূনতম চাহিদা মেটাতে পারছে না।
চার.
বাংলাদেশের সম্ভাবনা অফুরন্ত। এদেশে সম্পদের অভাব নেই। সবচেয়ে বড় সম্পদ দেশের মানুষ। একটা সময় বিপুল জনসংখ্যাকে দেশের বোঝা মনে করা হতো। এখন এই জনসংখ্যা বিশেষ করে তরুণ শ্রেণী দেশের অমিত সম্ভাবনা হয়ে দেখা দিয়েছে। তাদের উদ্যম এবং উন্নয়নের তাকিদ গার্মেন্টস শিল্পসহ অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সরকার আজ যে রেমিট্যান্স নিয়ে গর্ব বোধ করছে, তা উদ্যমী তরুণদের বিদেশে হাড়ভাঙ্গা খাটুনির মাধ্যমে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের কারণেই হয়েছে। আমরা প্রতিনিয়তই দেখছি, তরুণরা প্রতিষ্ঠা লাভ করার জন্য কী স্পৃহা নিয়ে ছুটে চলেছে! তাদের বেশির ভাগই পথ খুঁজে পাচ্ছে না। তাদের এই পথ সৃষ্টি করার মূল দায়িত্ব যে সরকারের, তা বলাই বাহুল্য। দেশে যে স্বাভাবিক কর্মসংস্থান থাকার কথা, সরকার তাও টিকিয়ে রাখতে পারছে না। কর্মসংস্থানের পথ যদি ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসে, তাহলে এ বিপুল সংখ্যক বেকার তরুণ কী করবে? তাদের হতাশ হয়ে নুয়ে পড়া ছাড়া কি আর কোনো গতি থাকতে পারে? এর ফলে কি আমরা ক্রমেই একটি হতাশ জাতিতে পরিণত হতে যাচ্ছি না? এ কথা তো সবসময়ই বলা হয়, যে জাতির তরুণ সমাজকে উজ্জীবিত করা যায় না, হতাশার সাগরে ভাসতে হয়, সে জাতি কোনো দিন এগিয়ে যেতে পারে না। জাতিকে উজ্জীবিত করার দায়িত্ব যে সরকারের সে সরকারই যদি বাস্তব পরিস্থিতি আমলে না নিয়ে ফাঁকা বুলি আউড়িয়ে নিজেরাই উজ্জীবিত হয়, তবে সে জাতির দুঃখ মোচনের আশু কোনো সম্ভাবনা থাকে না। আমাদের কথা হচ্ছে, সরকারকে দেশের বাস্তব অর্থনৈতিক পরিস্থিতির দিকে নজর দিতে হবে। কথার ফুলঝুরি না ছড়িয়ে অসার আশার বাণী না শুনিয়ে প্রকৃত উন্নয়নে মনোযোগী হতে হবে। দেশের যে অমিত সম্ভাবনার তরুণ শ্রেণী তাদের কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিতে হবে। একটি শ্রেণীর উন্নয়নের দিকে না তাকিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের উন্নতির চিন্তা করতে হবে। বিনিয়োগ সংকটের সমাধান, বিদ্যমান কর্মসংস্থান ধরে রেখে বিপুল সংখ্যক তরুণের নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সবার আগে উপলব্ধি করতে হবে, দেশের মানুষই যদি ভাল না থাকে, তবে অর্থনীতির যত উন্নতির কথাই বলা হোক না কেন, তা কোনো কাজে আসবে না।
darpan.journalist@gmail.com
0 Comments