কাজের প্রতি কীভাবে ভালোবাসা তৈরি করবেন জেনেনিন

ভালোবাসা জীবনে এলে কেমন লাগে বলুন তো? চারপাশের সবকিছুই সুন্দর লাগতে শুরু হয়, সবকিছুতেই যেন রঙ লেগে যায়। কিন্তু এই ভাবনাটা সব সময় সব ক্ষেত্রে থাকবে তেমনটা জরুরি নয়। তবে জীবনের যে ক্ষেত্রটি আপনাকে বাঁচিয়ে রাখছে, আপনার প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় জিনিসের যোগান দিচ্ছে সেই ক্ষেত্রকে ভালো না বাসলে কিছুটা ঝামেলায় পড়বেন বৈ কি। তাই কাজের জায়গা, কাজ দুটোকেই ভালোবাসতে হবে। কিন্তু কীভাবে ভালোবাসা তৈরি করবেন কাজের প্রতি? চলুন জেনে নিই কিছু পরামর্শ

শুনুন এবং প্রশ্ন করুন: অন্যের কথা শুনুন, প্রশ্ন করুন এবং আপনার সহকর্মীদের কাজের ব্যাপারেও আগ্রহী হোন। কাজের প্রতি স্বাভাবিক মনোভাব তৈরিতে এটি অন্য রকম পথপ্রদর্শক। আপনি যত মানুষের সাথে আগ্রহ নিয়ে মিশবেন তত তারা আপনার সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে। আর এতে তাদের সাথে আপনার সম্পর্কও আরও গভীর হবে।
অন্যের সাথে নিজের গল্প শেয়ার করুন: চাকরিস্থলে অনেকেই বেশ একক মনোভাবাপন্নের হয়ে থাকেন। সবার সাথে না মেশা, গল্প না করা, এমনকি নিজের বিষয়ে কিছু জানাতেও সংকোচে ভোগেন তারা। এমনটি হলে কাজকে মন থেকে ভালোবাসা কিছুটা কঠিনই হয়ে যাবে আপনার জন্য। অন্যের কাছে নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপনও কাজকে ভালোবাসার একটি অংশ।
এর মানে এই নয় যে সবকিছুই বলতে হবে বা সব সময়ই বলতে হবে। মাঝে মাঝে নিজের কিছু গল্প শেয়ার করা যেতেই পারে। ব্যক্তিগত জীবনের গল্প, কোনো কিছুর প্রতি আগ্রহ, অথবা যে কোনো বিষয় নিয়েই কথা হতে পারে। যখন আপনি অন্যের সাথে শেয়ার করা শুরু করবেন তখন অপর ব্যক্তিও তার নিজের বিষয়ে গল্প বলা শুরু করবেন, আর এটি যে কোনো সম্পর্কের ভিত্তি তৈরিতে বেশ জরুরি।
মতামত জিজ্ঞাসা করুন: অন্যের সাথে নিজেকে নিয়ে আলোচনা করা আরও একটি ভালো দিক আছে। গল্প করতে করতে আমরা আমাদের নিজের ব্যাপারে না জানা ক্ষেত্রগুলো সম্পর্কে জানতে পারি। না জানা ক্ষেত্রগুলো হচ্ছে, আমাদের নিজেদের অজান্তে করে ফেলা কিছু অভ্যাস যেগুলো অনিচ্ছাকৃত সত্ত্বেও হয়ে যায়, অথবা অনেকের মাঝে থাকলে না করতে চাওয়া অভ্যাসগুলোর কারণেও অন্যের নজরে পড়ে যেতে হয়। আমরা যত অন্যের কাছে নিজের মত প্রকাশ করব, তত আমরা নিজেকে জানতে পারব আর আচরণকে কিছুটা হলেও শুধরে নিতে পারব।
নিজের সাথে সাথে গ্রহণ করুন অন্যকেও: সম্পর্ক এবং বন্ধন তৈরি করতে নিজের সাথে সাথে অন্যেরও অসম্পূর্ণতা আর খামখেয়ালিপনা মেনে নিতে শিখুন। এটি অন্যকে সহজে গ্রহণ করার মানসিকতা তৈরি করবে আপনার মাঝে।
শেয়ার করুন অভিজ্ঞতা: কোনো একটি জায়গায় যখন আপনি বেশ অনেক দিন ধরে কাজ করছেন তার মানে সেই জায়গা সম্পর্কে কিছু অভিজ্ঞতা আপনার তৈরি হয়েছে। এই জ্ঞান বা অভিজ্ঞতাই আপনি শেয়ার করতে পারেন আপনার সহকর্মীর সাথে। কাউকে কিছু শেখানোর সময় পুরনো কাজটি যেমন নতুন করে ঝালাই হয় তেমনি আপনিও কীভাবে অন্যকে শেখাতে হয় সে বিষয়ে নতুন কিছু জানলেন।
অফিসে যদি নতুন কেউ জয়েন করে অথবা হতে পারে সে একজন ইন্টার্ন, তাকেও আপনি কাজের শুরুটা কীভাবে করতে হয় শিখিয়ে দিলেন। এতে আপনার হয়ত কিছুটা বাড়তি শ্রম গেলো, কিন্তু যিনি নতুন আসলেন তিনি কিন্তু কাজটা সুন্দরভাবে বুঝে গেলেন। আর নতুনের সুবাদে আপনার সাথে একটা সুন্দর সম্পর্কও তৈরি হয়ে গেলো।
অন্যকে কাজ শেখানোর মাঝে কিন্তু নিজের মস্তিষ্কেরও উন্নতি হয়। এই কাজগুলো ব্রেনের মেসোলিম্বিক পথকে চালু করে দেয়। এই মেসোলিম্বিক পথে তৈরি হয় আনন্দ আর ডোপামিন (একটি নিউরোট্রান্সমিটার যা ব্রেনের পুরস্কার আর আনন্দের বিষয়গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে)। সরাসরি মুখোমুখি কথা বললে ব্রেনের আনন্দময় এই অংশগুলো আরও দ্রুত কাজ করে।
নিজের শক্তিমত্তা সম্পর্কে জানুন: গবেষণা বলে, আমরা যত নিজেদের স্বভাবগত প্রতিভা নিয়ে কাজ করব, তত কাজের প্রতি উৎসাহী হব। আর সেই সাথে বাড়বে কাজের প্রতি ভালো লাগার সম্পর্ক। বন্ধু, সঙ্গী, সহকর্মী আর ম্যানেজার যে কারও সাথেই আপনার কাজ, প্রতিভা বা শক্তি নিয়ে কথা বলুন, জানতে চান আর কী কী করতে পারলে ভালো হয়। সেই হিসেবে কাজে আরও দক্ষ হয়ে উঠুন।
কাজে যুক্ত করুন ম্যানেজারকেও: অনেক ক্ষেত্রেই ম্যানেজারের সাথে ভালো সম্পর্ক আপনার কাজে আনন্দ এনে দেয়। কথায় বলে, আপনি আপনার কাজকে ছাড়ছেন না, ছেড়ে দিচ্ছেন আপনার ম্যানেজারকে। তাই কার কাছে কাজের রিপোর্ট জমা দিচ্ছেন, কী ধরনের কাজ করছেন সেটা নিয়ন্ত্রণ করা বেশ জরুরি।
সকল ভালো ম্যানেজারই কাজের রিপোর্ট চায়। বস-কর্মী সম্পর্ক মূলত দুই পক্ষের সহযোগিতা আর কাজ দিয়েই তৈরি হয়। বসের কাছে আপনি কাজের ব্যাপারে কৈফিয়ত দিতে বাধ্য, কিন্তু তার আগে নিজের কাছে নিজেকেও কৈফিয়ত দেওয়া শিখতে হবে। কাজ করতে গিয়ে আপনি আসলে কী চাচ্ছেন আর কী পাচ্ছেন সে বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে আপনার ম্যানেজারের কাছে সহায়তা চাইতে হবে।
কাজে প্রমোশন পাওয়া সব সময় সহজ নয়- অথবা পেলেও যে কাজে সন্তুষ্টি চলে আসবে তাও নয়। তাই বস বা ম্যানেজার যার সাথেই কথা বলতে আপনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তাকেই জানান আপনি কীভাবে কাজের ফলাফল চাচ্ছেন বা কীভাবে নতুন কাজ শিখতে চাচ্ছেন।
পেশাদার সেমিনারে যুক্ত হোন: নিজেকে সবসময় বিভিন্ন কাজে যুক্ত রাখতে, নতুন নতুন তথ্য জানতে যুক্ত হোন পেশাদার সেমিনারে। সব সময় প্রস্তুত থাকুন পরবর্তী ধাপের জন্য।
নতুন বন্ধু তৈরি করুন: কাজের জায়গায় সবচেয়ে জরুরি নতুন বন্ধু তৈরি করা। ধীরে ধীরে বন্ধু তৈরি করুন, সম্ভব হলে কলিগদের সাথে নিয়ে ঘুরতে যান। নতুন পরিবেশের সাথে অভ্যস্ত হয়ে গেলে কাজের প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয়ে যায় দ্রুত।
সূত্রঃ- অনলাইন থেকে নেওয়া  

Post a Comment

0 Comments