ডিজিটাল মার্কেটিং কী,কেন,কিভাবে,কার জন্য?

ডিজিটাল মার্কেটিং কী?
আগামি মাসে একটি সার্কাস হবে। এই কথাটা সবাইকে জানাতে হবে। চিন্তা করলাম টিভিতে এবং পত্রিকাতে এটা প্রচার করা যায় কিনা, তাদের সাথে কথা বললাম, তারা আমাকে একটা প্রাইসিং ধরিয়ে দিল। আমি রাজি হয়ে গেলাম। এবং তারা প্রচার শুরু করলো, এটি আসলে বিজ্ঞাপন।
তারপর একটি হাতি নিয়ে রাস্তায় বের হয়ে গেলাম। হাতির গায়ে বিস্তারিত লিখে পুরো শহর ঘুরতে থাকলাম। এটা আসলে প্রমোশন।
এই প্রমোশন দেখে অনেক মিডিয়া এবং পত্রিকা সার্কাস সম্পর্কে লিখা শুরু করলো, এটি হচ্ছে পাবলিসিটি।
মানুষ সার্কাস নিয়ে কথা বলা শুরু করলো। এটি হচ্ছে পাবলিক রিয়েকশন।
সবার শেষে লোকজন সার্কাস দেখতে গেল, টিকেট কাটল। এটি হচ্ছে সেলস।
আর এই পুরো প্রসেসটাই হচ্ছে মার্কেটিং। আর এই পুরো প্রসেসটা যখন ডিজিটাল চ্যানেলে হয় তখন তা ডিজিটাল মার্কেটিং।
সহজ ভাবে যদি বলতে হয়, আপনার পণ্য অথবা সেবা বিক্রির জন্য, আপনি যত গুল প্রসেসের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন তা পুরাটাই মার্কেটিং এর অংশ।
ইন্টারনেট মার্কেটিং আসলে দুই রকম হয়ে থাকে।
১) ইনবাউন্ড মার্কেটিং
২) আউট বাউন্ড মার্কেটিং
ইনবাউইন্ড মার্কেটিংঃ যেখানে কাস্টমার আপনার কাছে আসে। যেমন ধরেন সার্চ ইঞ্জিন থেকে।
আউটবাউন্ড মার্কেটিংঃ যেখানে আপনি কাস্টমারের কাছে যাবেন। যেমন ধরেন বিজ্ঞাপন।
ডিজিটাল মার্কেটিং এর জনপ্রিয় বিভিন্ন অংশঃ
ইন্টারনেট মার্কেটিং এর অনেক গুলো অংশের মধ্যে সবচাইতে বেশি জনপ্রয় মাধ্যমগুলো হচ্ছেঃ
  • সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন
  • সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং
  • কন্টেন্ট মার্কেটিং
  • ইমেইল মার্কেটিং
  • ডিজিটাল এডভার্টাইসিং (ফেসবুক, গুগল, ন্যাটিভ এডভার্টাইসিং)
  • এফিলিয়েট মার্কেটিং
  • অনলাইন প্রেস রিলিজ
  • স্পন্সরড কন্টেন্ট, ইত্যাদি।
ইন্টারনেট মার্কেটিং আপনাকে কিভাবে ক্রেতা পেতে সহায়তা করবেঃ
এই প্রশ্নের উত্তর আপনার কাছেই আছে।
ভাবুন, গত ৬ মাসে আপনি কী কী কিনেছেন?
কোথা থেকে কিনেছেন?
সন্ধান কিভাবে পেয়েছেন?
মূলত মানুষ তিনভাবে কোন পণ্য/সেবা সম্পর্কে জেনে থাকে।
১) ওয়ার্ড অফ মাউথঃ
আমি আমার পরিচিত কারো কাছ থেকে শুনেছি এবং তারপর আমার আগ্রহ বেড়েছে, আমি আরও রিসার্চ করে দেখেছি এবং কিনে ফেলেছি।
আমার পরিচিত কেউ হতে পারে আমার সোশ্যাল মিডিয়া কানেকশন, হতে পারে ফ্রেন্ডস এন্ড ফ্যামিলি, হতে পারে কলিগ, অথবা কোন ইনফ্লুয়েন্সার, যাকে আমি ফলো করি। শুনেছি মানে ভার্বালি শুনেছি এমনটাই না,আমি তার ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে পেয়েছি, অথবা ব্লগ পোস্ট, ভিডিও থেকে। ধরেন আমি যদি এখন কোন টুলস এর কথা এই ব্লগ পোস্টে উল্ল্যেখ করি, তাহলে সেটা হবে ওয়ার্ড অফ মাউথ।
আবার কন্টেন্ট আপনার ভাল লেগেছে, আপনি আপনার পরিচিত কাউকে বললেন আমার লিখা পড়তে,আমার গ্রুপে জয়েন করতে, তাহলে তা হবে ওয়ার্ড অফ মাউথ। আমি প্রতিনিয়ত অনেক মেম্বার রিকোয়েস্ট পাই আমার গ্রুপে যা ওয়ার্ড অফ মাউথ চ্যানেল থেকে আসে। আর এর পার্সেন্টেইজ হচ্ছে ৩৫%।
২) সার্চ ইঞ্জিনঃ
মানুষের যখন কোন তথ্য/পন্য/সেবা দরকার হয় তখন সে ওটা খুঁজে থাকে। আর ডিজিটাল চ্যানেল নির্ভর এই যুগে মানুষ যে কোন কিছু খুঁজতে চাইলে সার্চ ইঞ্জিন ব্যাবহার করে। এটা যেমন গুগল হতে পারে, আবার অন্য কোন সার্চ ইঞ্জিন হতে পারে। যেমন আমাজন।
তাই আমার পণ্য, সেবা অথবা তথ্য যদি সার্চ ইঞ্জিন এর প্রথম দিকে থাকে, তাহলে আমি প্রতিনিয়ত নতুন ক্রেতা পেতে থাকবো। যেমন ধরেন কেউ যদি ফেসবুক মার্কেটিং লিখে গুগলে সার্চ দেয়, তাহলে আমার একটি পোষ্ট সবার প্রথমে র‍্যাঙ্ক করে আছে। যা আমাকে প্রতিদিন নতুন নতুন পাঠক পেতে সহায়তা করে।
৩) বিজ্ঞাপন দেখেঃ
ধরেন আমি কারো কাছ থেকে শুনি নাই, অথবা কখনো সার্চ ও দেই নাই। কিন্তু যখন ফেসবুক ব্যাবহার করছিলাম তখন হঠাৎ করে একটি বিজ্ঞাপন চোখে পরল, আমার আগ্রহ তৈরি হল। আমি বিস্তারিত দেখার জন্য বিজ্ঞাপন এর লিঙ্কে ক্লিক করলাম, ভাল লাগলো এবং কিনে ফেললাম।
এটা যে কোন ধরনের বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রেই হতে পারে।
মূলত  আমরা আমাদের ক্রেতা পাবার সোর্স কে এই তিনটি মাধ্যমে ভাগ করতে পারি। তাই ডিজিটাল মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে এই তিন মাধ্যমকে কিভাবে ইউটিলাইজ করা যায় তার দক্ষতা অর্জিন করতে হবে। তাহলেই একজন মার্কেটার হিসেবে সঠিক রিটার্ন জেনারেট করা সম্ভব হবে।
বিভিন্য ক্যাম্পেইন সম্পর্কে ধারনাঃ
যেহেতু ডিজিটাল মার্কেটিং মানেই শুধু বিজ্ঞাপন নয়, তারমানে এর মধ্যে অনেক কিছু কানেক্টেড। এক এক টা অংশের অথবা কাজের লক্ষ্য এক এক রকম হয়ে থাকে। কোনটা হয়তো ডিরেক্ট সেল জেনারেট করার জন্য, কোনটা হয়ত ব্র্যান্ড পরিচিতি বৃদ্ধির জন্য। আর একজন দক্ষ্য ডিজিটাল মার্কেটার হতে চাইলে বিভিন্ন ক্যাম্পেইন সম্পর্কে বিস্তারিত ধারনা থাকতে হবে।
নিচে কিছু ক্যাম্পেইনের ধরন দেয়া হলঃ
  • ব্র্যান্ড এওয়ারনেস
  • লিড জেনারেশন
  • প্রোডাক্ট লাউঞ্চিং
  • ব্র্যান্ড লাউঞ্চিং
  • রিব্র্যান্ডিং
  • সিসনাল পুশ
  • সেল জেনারেশন
  • আপসেলিং
  • রিসেলিং
  • ক্রস সেলিং
  • ডিমান্ড জেনারেশন
ডিজিটাল মার্কেটিং কিভাবে শেখা যায়?
অনলাইন মার্কেটিং শেখার অনেক গুলো উপায় আছে। শিখতে চাইলে শেখার সুযোগের অভাব নেই। তবে দ্রুত এবং সঠিক গাইডলাইন নিয়ে শিখতে চাইলে কোর্স করা বেটার। কেননা এতে কন্টেন্ট গুলো গোছানো থাকে।
তবে মনে রাখতে হবে, শুধু কন্টেন্ট দেখেই শেখা যাবে না, সঠিক ভাবে প্র্যাকটিস করতে হবে। বার বার প্র্যাকটিস করতে হবে।
কী কী উপায়ে শিখতে পারেন তার বিস্তারিত এখানেঃ
  • অনলাইন ফ্রী রিসোর্স
  • অনলাইন কোর্স
  • অনসাইট কোর্সঃ (ট্র্যাডিশনাল)
  • ইন্টার্নশিপ (অনলাইন মার্কেটিং সার্ভিস দেয় এমন কোন প্রতিষ্ঠানে অথবা প্রফেশনালের সাথে কাজ করে)।
  • প্রাইভেট ওয়ান অন ওয়ান কোর্স। (কোন মেন্টরের কাছ থেকে প্রাইভেটভাবে শেখা)
ডিজিটাল মার্কেটিং শিখে কিভাবে ক্যারিয়ার ডেভেলপ করা যায়ঃ
একজন ডিজিটাল মার্কেটার আসলে অনেক ভাবেই তার ক্যারিয়ার ডেভেলপ করতে পারে। যেমনঃ
  • ফ্রীল্যান্স ডিজিটাল মার্কেটিং কনসাল্টেন্ট
  • চাকরি
  • নিজের এজেন্সি, যেখান থেকে উনি ক্লায়েন্টকে সার্ভিস দেয়া যাবে।
  • এফিলিয়েট মার্কেটিং
  • ইকমার্স / ড্রপশিপিং বিজনেস
  • মেন্টরশীপ
এই ইন্ডাস্ট্রি কাদের জন্যঃ
ডিজিটাল মার্কেটিং মূলত তাদের জন্য যারা গ্রোথ মাইন্ডেড। যারা ডাটা নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করে। যারা সবসময় এনালাইসিস করতে পছন্দ করে। স্প্লিট টেস্টিং পছন্দ করে। যারা বিভিন্ন টুল নিয়ে কাজ করতে মজা পায়।
সাইকোলজি নিয়ে ভাবে, স্টাডি করে। উপভোগ করে। কন্টেন্ট তৈরি করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।
মার্কেট পরিবর্তনের সাথে এডজাস্ট করতে পারে, চ্যালেঞ্জ পছন্দ করে।
কেননা এটি খুবী চ্যালেঞ্জিং একটি পেশা, যেখানে প্রচুর সম্ভাবনা, কিন্তু তার জন্য চ্যালেঞ্জ জয় করার এটিটিউড থাকতে হয়।
ইন্টারনেট মার্কেটিং যেমন একজন প্রফেশনালের জন্য দরকার, একই ভাবে প্রতিটা ব্যাবসায়ির ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে ধারনা রাখা প্রয়োজন। যা তাকে তার বিজনেস গ্রোথে সহায়তা করবে।
ডিজিটাল মার্কেটিং শিখে কী পরিমাণ উপার্যন করা সম্ভবঃ
এটা নির্ভর করবে আপনি কতটুকু দক্ষতা অর্জন করতে পারছেন। যেহেতু একটি বিজনেস গ্রোথের জন্য মার্কেটিং অপরিহার্য তাই প্রতিষ্ঠান গুলো এই ইন্ডাস্ট্রির প্রফেশনালদের সর্বাধিক সুবিধা দিয়ে থাকে। তবে তার জন্য নিজের দক্ষতা প্রমাণ করতে হয়।
কতটুকু আয় করা যাবে তা নির্ভর করবে প্রতিষ্ঠান, ইন্ডাস্ট্রি এবং লোকেশনের উপর।
চাকরির হিসেব করলে তা বাংলাদেশি টাকাতে ২০ হাজার থেক শুরু করে ১০ লাখ পর্যন্ত হতে পারে। তবে মনে রাখতে হবে এটা পুরাটাই নির্ভর করবে আপনার দক্ষতার উপর। স্টার্টিং এ অবশ্যই আকাশ চুম্বী কিছু আশা করা যাবে না। আপনি যত বেশি রিটার্ন জেনারেট করে দিতে পারবেন প্রতিষ্ঠান আপনাকে তত মূল্যায়ন করবে। তাই সবার উপার্যন একই রকম হবে না।
মার্কেটপ্লেসের কাজের ক্ষেত্রে এটা ৫ ডলার প্রতি ঘণ্টা থেকে ৩০০ ডলার ঘণ্টা প্রতিও হতে পারে।
আর বাকি অংশ গুলো অনেকটা বিজনেসের মত, তাই ওটার প্রেডিকশন হচ্ছে শূন্য থেকে স্কাই ইস দ্যি লিমিট।
পরিশেষে এটি খুবই সম্ভাবনাময় একটি কাজের ক্ষেত্র। এবং এটিকে এভয়েড করে যেহেতু কোন বিজনেস গ্রো করতে পারবে না, তারমানে এটার ডিমান্ড কমবে না। আমাদের উপর নির্ভর করবে আমরা কতটুকু স্কীল্ড হচ্ছি এবং মার্কেটশেয়ার নিতে পারছি।  স্কীল ডেভেলপ করা ছাড়া ডিজিটাল মার্কেটিং ইন্ডাস্ট্রিতে কখনই টিকে থাকা যাবে না।

Post a Comment

0 Comments