এখন হইতে প্রস্তুতি গ্রহণ করিতে হইবে

‘বৈশ্বিক বায়ু পরিস্থিতি ২০১৭’ অনুযায়ী দূষিত বায়ুর শহরগুলির মধ্যে ঢাকা দ্বিতীয় স্থান অধিকার করিয়াছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী দূষণের শীর্ষে রহিয়াছে দিল্লি। ইহার পরবর্তী স্থানে রহিয়াছে পাকিস্তানের করাচি ও চীনের বেইজিং। প্রতিবেদন অনুযায়ী ১৯৯০ পরবর্তী সময়ে সবচাইতে বেশি দূষণ বৃদ্ধি পাইয়াছে বাংলাদেশ ও ভারতে। প্রতিবেদনে ইহাও বলা হইয়াছে, বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশে প্রতি বত্সর ১ লক্ষ ২২ হাজার ৪০০ মানুষের মৃত্যু হইতেছে। আর বায়ুদূষণের কারণে অধিক শিশু মৃত্যুর হারের দিক থেকে পাকিস্তানের পরই বাংলাদেশের অবস্থান।
বায়ু দূষণের কারণে বেইজিংয়ে ২০১৭ সালে ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করা হইয়াছে, পরিবেশ পুলিশ নামাইতে হইয়াছে। বায়ু দূষণের কারণে দিল্লিকে ২০১৬ সালে ‘গ্যাস চেম্বার’ উপাধি দেওয়া হইয়াছে, বিদ্যালয় বন্ধ করিতে হইয়াছে। ঢাকার পরিস্থিতি এখনো সেই পর্যায়ে যায় নাই। ঢাকা ধূলায় ধূসরিত একটি নগর। ইহার বাতাস ভারী। বায়ুতে ক্ষতিকর কণার উপস্থিতি বিপজ্জনক মাত্রার চাহিতে বেশি। বক্ষব্যাধি হাসপাতালে কিংবা ডাক্তারদের চেম্বারে অসুস্থ লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাইতেছে। ‘টু-হুইলার’ যানবাহন নিষিদ্ধ ও সিএনজির ব্যবহার উত্সাহিত করিবার পর পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি ঘটিয়াছিল। কিন্তু মোটরযানের সংখ্যা অত্যধিক বৃদ্ধি পাওয়ায়, মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন রাস্তা হইতে উঠাইতে প্রশাসনের ব্যর্থতায় পরিস্থিতির উন্নতি হইতেছে না। ইহা ছাড়া ঢাকা একটি প্রসারমান মেগাসিটি, ইহা আনুভূমিকভাবে যেমন বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হইতেছে তেমনি, উল্লম্বভাবেও বৃদ্ধি পাইতেছে। নির্মিত হইতেছে অসংখ্য দালানকোঠা-অট্টালিকা। বাস্তবায়িত হইতেছে ফ্লাইওভারসহ নানান প্রকল্প। এইসকল নির্মাণকার্যের ফলেও সর্বত্র এবং সারাক্ষণ ধূলাবালির সৃষ্টি হইতেছে। আর সারা দেশ হইতে ঢাকামুখী জনস্রোতের প্রবাহও লাগামহীনভাবে বাড়িয়া চলিয়াছে।

বায়ু দূষণ কমাইতে বেইজিং-এর মেয়র ২০১৭ সালে শতকরা ৩০ ভাগ জ্বালানি হিসাবে কয়লা ব্যবহারের ঘোষণা দিয়াছিলেন। কিছু কলকারখানা বন্ধও করিয়া দিয়াছিলেন। আমাদেরও সময় থাকিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করিতে হইবে। মোটরযানের বৃদ্ধি ঠেকাইতে হইবে, শহরের ভিতরে অবশিষ্ট ও নিকটবর্তী যেই কলকারখানা রহিয়াছে তাহা অন্যত্র স্থানান্তর করিতে হইবে, নির্মাণকার্যে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করিতে হইবে। কয়লানির্ভর কলকারাখানাকে নিরুত্সাহিত করিতে হইবে। ঢাকাকেও যেন গ্যাস চেম্বার হিসাবে ঘোষণা করিতে না হয়, এখন হইতেই তাহার প্রস্তুতি লওয়া দরকার। আর ঢাকামুখী যেই জনস্রোত, তাহাও ঠেকানো প্রয়োজন। কাজগুলি কী উপায়ে করিতে হইবে তাহা নীতিনির্ধারকদের স্থির করিতে হইবে। কিন্তু এই কাজগুলি যথাযথভাবে করা প্রয়োজন। নানান কারণেই শহরটি বসবাসের অনুপযোগী হইয়া পড়িতেছে, কিন্তু এইরূপ ঘনবসতিপূর্ণ শহর যদি গ্যাস চেম্বারে পরিণত হয় তাহা হইলে উহার ক্ষয়ক্ষতি হইবে সীমাহীন। তাই বিশাল ক্ষতি হইবার পূর্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করিতে হইবে।

Post a Comment

0 Comments