স্মার্টফোন চুরি বা হারিয়ে গেলে কী করবেন?

তথ্য ও প্রযুক্তির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক এখন এতটাই যে, ঘুম ভাঙা থেকে শুরু করে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত টেকনোলজি কেউ চলতেই পারেন না। সেই টেকনোলজিরই একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ স্মার্টফোন।
দিন দিন স্মার্টফোনের ব্যবহার বেড়েই চলেছে। হাতের মুঠোয় থাকা স্মার্টফোনটি দিয়েই মানুষ এখন সেসব কাজ সম্পন্ন করে নিচ্ছেন।
এতে যেমন সুবিধা হয়েছে, তেমনি একটু অসুবিধাও রয়েছে। স্মার্টফোনেই থেকে যাচ্ছে মানুষের কর্মক্ষেত্র ও ব্যক্তিগত জীবনের গোপনীয় সব তথ্য। ফলে ফোনটি হারিয়ে বা চুরি-ছিনতাই হলে হেনস্থার মধ্যে পড়তে হচ্ছে ব্যবহারকারীকে।
শখের স্মার্টফোনটি হারিয়ে, চুরি বা ছিনতাই হলে অনেকেই বুঝতে পারেন না কী করণীয়? অনেকে সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন, নানানজনের কাছ থেকে নানা পরামর্শ নেন। কিন্তু, সেসব পরামর্শে কাজ না হলে হাত গুটিয়ে বসে থাকেন।
চুরি-ছিনতাই হওয়া বা হারিয়ে যাওয়া ফোনটি খুঁজে পেতে প্রথমেই যেটি করতে হবে, সেটি হলো আপনার নিকটস্থ থানায় জিডি করতে হবে। কারণ, স্মার্টফোন ও ফোনে থাকা সিম দিয়ে হয়তো অপরাধীরা গুরুতর কোনো অপরাধ করতে পারেন। এতে আপনার ওপর তার দায়ভার চলে আসতে পারে অজান্তেই।
হারানোর সঙ্গে সঙ্গে মোবাইল ফোন সেবাদাতার কলসেন্টারে ফোন করে সংযোগটি বন্ধ করে দেয়ার (সিমকার্ড লক) চেষ্টাও করুন।
থানায় যোগাযোগ করে আপনার স্মার্টফোনের যাবতীয় তথ্য, সেটের মডেল নম্বর ও সিমের তথ্য দিয়ে কবে, কখন কীভাবে ফোনটি হারিয়ে গেল, তা বিস্তারিত জানিয়ে জিডিটি করুন। জিডির সময় যে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে উল্লেখ করতে হবে তা হলো, ফোনটির আইএমইআই (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল স্টেশন ইক্যুপমেন্ট আইডেনটিটি) নম্বর বা ফোনের সিরিয়াল নম্বর।
বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে উন্নত প্রযুক্তি রয়েছে, যার মাধ্যম এই নম্বর দিয়ে ফোনটির অবস্থান সনাক্ত করা সম্ভব। অনেক সময় পুলিশ আপনার অভিযোগটি গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) কাছেও হস্তান্তর করতে পারে। অনেকেই ফোনের সিরিয়াল নম্বর জানেন না এবং কী করে এটা জানতে হয়, সেটাও জানেন না। *#০৬# নম্বর ফোনের কি প্যাডে লিখলে পর্দায় ১৫ সংখ্যার একটা নম্বর দেখা যাবে।
মুঠোফোন হারিয়ে গেলে এই ১৫ নম্বরটা জানা থাকলে, পুলিশের সাহায্যে সহজেই মুঠোফোনটির অবস্থান জানা যাবে। জিডি করার পর একজন তদন্তকারী কর্মকর্তা ফোনটি উদ্ধারের দায়িত্বে থাকবেন। তদন্তকারী কর্মকর্তাকে যতটা সম্ভব ফোনটি খুঁজে পেতে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহায়তা করা উচিত।
ফোনে যে সিম ব্যবহার করবেন, তা অবশ্যই আপনার নামে নিবন্ধিত থাকলে আইনি সেবা পেতে সহায়তা করবে। আবার সরাসরি র‍্যাব অফিসে যোগাযোগ করে লিখিত অভিযোগ করতে পারেন এবং হারিয়ে যাওয়া ফোনটি সম্পর্কে অবগত করে আইনি সহায়তা চাইতে পারেন। পুলিশ বা র‍্যাব যদি ফোনসেটটি উদ্ধারে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ করার প্রয়োজন হয়, তাহলে তা তারা করতে পারে। প্রয়োজনে আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে তদন্ত চালিয়ে যেতে পারে।
নিজেরাও বের করতে পারবেন স্মার্টফোনের লোকেশন:
পুলিশের সহায়তা ছাড়া নিজেদের পক্ষেও হারিয়ে যাওয়া বা চুরি হওয়া স্মার্টফোনের লোকেশন জানা সম্ভব। সেক্ষেত্রে আপনাকে অ্যান্ড্রয়েডের জন্য গুগল সেটিংস থেকে সিকিউরিটিতে যেতে হবে। সেখানে ‘রিমোটলি লোকেট দিস ডিভাইস’ অপশনটি চালু করে রাখতে হবে। এরপর আপনাকে কেবল ফোনের কোনো ব্রাউজার থেকে android.com/find- এ সংযোগ ঘটাতে হবে। এটা অন্য কোনো মোবাইল বা কম্পিউটার থেকেও করতে পারবেন। হারানো ফোনটির অবস্থানের তথ্য পাবেন রিয়েল-টাইমে। অন্যান্য অপশনের মাধ্যমে ফোনটি বেজে উঠতে পারে তার অবস্থান জানানোর জন্য। আশপাশে হারিয়ে গেলে এ সুবিধা নিতে পারবেন।
আবার চাইলে লক করে কিংবা সব তথ্য মুছে ফেলারও ব্যবস্থা আছে। কিছু ব্র্যান্ড নিজস্ব সমাধান দেয়। যেমন: স্যামসাং দেয় ‘ফাইন্ড মাই মোবাইল’। আপনার স্যামসাং অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে স্মার্টফোনের যাবতীয় তথ্য সিঙ্ক্রোনাইজ করতে পারবেন। এর মাধ্যমে মোবাইলের অবস্থান জানাও সম্ভব।
আইওএস অপারেটিংয়ে ‘সেটিংস’ থেকে আইক্লাউডে যেতে হবে। সেখানে ‘ফাইন্ড মাই ফোন’ চালু করবেন। খেয়াল করবেন আপনার ‘প্রাইভেসি’ সেটিংসে ‘লোকেশন সার্ভিস’ চালু করা আছে। আইফোন হারিয়ে গেলে বা চুরি হলে icloud.com/find-এ সংযোগ ঘটিয়ে নিজের অ্যাপল অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করে ফোনের অবস্থান জেনে নিন।
ব্যবহার করতে পারেন নিরাপত্তা অ্যাপ্লিকেশনও:
স্মার্টফোন চুরি বা ছিনতাইয়ের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে এবং অ্যান্ড্রয়েড ফোনের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য বেশ কিছু অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে। নিরাপত্তার জন্য ব্যবহারকারীরা সেই অ্যাপসগুলোও ব্যবহার করতে পারেন।
১. হোয়্যার ইজ মাই ড্রয়েড (http://goo.gl/LImXw) : হারানো ফোন খুঁজে পাওয়ার জন্য হোয়্যার ইজ মাই ড্রয়েড অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি অ্যাপ।হারিয়ে যাওয়া ফোনটির অবস্থান চিহ্নিত করা, সেটি খুঁজে পাওয়া এবং ফোনের তথ্য নিরাপদে রাখার জন্য এতে আছে বিভিন্ন সুবিধা। ফ্রি, লাইট এবং প্রো নামের আলাদা তিনটি সংস্করণ রয়েছে এর। ফোন হারিয়ে গেলে বা চুরি হয়ে গেলে এসএমএসের মাধ্যমে ফোনের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এই অ্যাপ্লিকেশনের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো— এখানে কমান্ডার নামে একটি অংশ রয়েছে। কমান্ডার সক্রিয় থাকলে অ্যাপ্লিকেশনটির মূল ওয়েবসাইট থেকে ফোনের অবস্থান নির্ণয় করা যায়।
২. অ্যাভাস্ট (http://goo.gl/F72Xa): অ্যাভাস্ট অ্যাপ্লিকেশনটি তৈরি করা হয়েছে অ্যান্ড্রয়েড ফোনের পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা দেয়ার জন্য। অ্যাপের একটি অংশ অ্যান্টিভাইরাস এবং ম্যালওয়্যার স্ক্যান করে। আর অ্যাপটিতে App Disguiser এবং Stealth Mode নামের দুটি বিশেষ সুবিধা রয়েছে। এটি ব্যবহার করে ব্যবহারকারী অ্যাপটি লুকিয়ে রাখতে পারবেন। এটি বিশেষভাবে কার্যকর, যদি ফোনটি কখনো চুরি হয়ে যায়।
তবে অ্যাপ্লিকেশনটি আনইনস্টল করার পদ্ধতিটি বেশ জটিল। ইনস্টল করার পর যদি ফোনটি খোঁজা হয় কখনো, তা হলে অ্যাপটি আনইনস্টল করা এক রকম অসম্ভব হয়ে যায়। অ্যাপ্লিকেশনটি নিজে থেকেই সিস্টেম রিস্টোর করতে পারে এবং ফোনের ইউএসবি পোর্ট বন্ধ করে দিতে পারে।
৩. প্ল্যান বি (http://goo.gl/0Z9ys): তালিকার অন্য অ্যাপ্লিকেশনগুলো থেকে এটা কিছুটা আলাদা। ফোন হারিয়ে যাওয়া বা চুরি হয়ে যাওয়ার পর হয়তো মনে হতে পারে, যদি আগেই একটি অ্যাপ্লিকেশন ইনস্টল করা থাকত, তা হলে হয়তো ফোনটি খুঁজে পাওয়া যেত। আর এ ধরনের পরিস্থিতির জন্যই তৈরি করা হয়েছে প্ল্যান বি অ্যাপটি। ফোনটি হারিয়ে যাওয়ার পর গুগল প্লে সাইটে গিয়ে এ অ্যাপটি ইনস্টল ক্লিক করতে হবে। এরপর অ্যাপটি নিজে থেকেই ইনস্টল হয়ে যাবে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে জিপিএস চালু হয়ে যাবে। ফোনটির অবস্থান বের করার পরপরই একটি ই-মেইলের মাধ্যমে গুগল ম্যাপের লিংকসহ ফোনের অবস্থানটি জানিয়ে দেয়া হবে।
৪. লুকআউট (http://goo.gl/QApgd): লুকআউট হলো অ্যান্ড্রয়েড যন্ত্রগুলোর উপযোগী অপর একটি পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা এবং ব্যাকআপ নেয়ার সফটওয়্যার। এই অ্যাপের মাধ্যমে বিনা মূল্যে অ্যান্টি ভাইরাস সুবিধা পাওয়া যায়। পাশাপাশি ফোনে থাকা নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর ও তথ্য ব্যাকআপ নেয়ারও সুবিধা পাওয়া যাবে এখানে। আর মোবাইল ফোন হারিয়ে বা চুরি হয়ে গেলে এসএমএসের মাধ্যমে ফোন লক করে দেয়া বা অবস্থান চিহ্নিত করার সুবিধাও রয়েছে এখানে।
৫. লস্ট ফোন (http://goo.gl/X73yq): হারিয়ে যাওয়া ফোন খুঁজে পাওয়ার জন্য অন্যান্য অ্যাপ্লিকেশনের মতো একই ধরনের সুবিধা পাওয়া যাবে এখানে। যার মধ্যে রয়েছে এসএমএসের মাধ্যমে ফোন লক করে দেয়া, ফোনের অবস্থান জানা। আবার ফোনের রিংটোন বাড়িয়ে দেয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে এখানে, যেন ওই নম্বরে ফোন করা হলে সেটি খুঁজে পাওয়া যায়। আর এখানে আরও একটি বিশেষ সুবিধা হলো, যে সিম কার্ডটি লাগানো অবস্থায় এই অ্যাপটি ইনস্টল করা হয়েছে, সেটি পরিবর্তন করে অন্য কোনো সিম লাগানো হলে অ্যাপ সেটিংসে উল্লেখ করা নির্দিষ্ট কয়েকটি নম্বরে নতুন সিম নম্বরটি এসএমএস হিসেবে চলে যাবে।

Post a Comment

0 Comments