বর্তমান সময়ে আমাদের দৈনন্দিন কাজে প্রয়োজনীয় যন্ত্রের মধ্যে
কম্পিউটার অন্যতম। বাসা/বাড়িতে ব্যবহার থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,
চিকিত্সা কেন্দ্র, অফিস/ আদালতসহ যাবতীয় সেবায় আমাদের কম্পিউটারের সহায়তা
নিতে হয়। দেশের যাবতীয় সেবা ডিজিটাল হওয়ায় কম্পিউটারের চাহিদা আরো বেড়ে
গেছে। শুধু তাই নয়, সিনেমা দেখা, গেম খেলা, গান শোনার কাজেও কম্পিউটারের
ব্যবহার লক্ষণীয়। একটি কম্পিউটারের মাধ্যমেই আমরা অনেকগুলো সেবা গ্রহণ করতে
পারি যা আলাদা আলাদা গ্রহণ করতে হলে অনেকগুলো ডিভাইস কিনতে হতো। বর্তমান
সময়ে শিশুদেরকেও কম্পিউটারে দক্ষ করে তোলা হচ্ছে। দেশের পাঠ্য বইয়েও এই
বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গ্রামের স্কুলগুলোতেও রয়েছে কম্পিউটার ল্যাব
যেখানে শিশুদের হাতে কলমে কম্পিউটার সম্পর্কে শিক্ষা প্রদান করা হয়। দেশের
বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কম্পিউটার পাওয়া যাচ্ছে। অনেকেই এর যাবতীয়
কিছু না জেনেই বাজার থেকে কিনে এনে আশানুরূপ ফল না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েন।
আমাদের এবারের আয়োজন কম্পিউটার কেনার আগে যে বিষয়গুলো খেয়াল করা জরুরি তা
নিয়ে। বিস্তারিত লিখেছেন মাহবুব শরীফ
প্রাথমিক লক্ষণীয় বিষয়
দেশের বাজারে বিভিন্ন রকম হার্ডওয়্যার পণ্য পাওয়া যায়। লোকাল ব্র্যান্ডের
কোনো হার্ডওয়্যার দিয়ে কম্পিউটার সংযোজন করলে এর ফলাফল ভাল নাও হতে পারে।
আপনি যদি কম্পিউটারের ওপর দক্ষ না হোন তাহলে যেকোনো ব্র্যান্ডের শো-রুম
থেকে প্রসেসর, মাদারবোর্ড, র্যাম, হার্ডডিক্স, গ্রাফিক্সকার্ড, পাওয়ার
সাপ্লাই কিনবেন। ব্র্যান্ডের শো-রুম থেকে এই পণ্যগুলো কিনলে তারই আপনাকে
এগুলো সংযোজন করে দেবে।
প্রসেসর যেমন হওয়া দরকার
প্রসেসর হলো কম্পিউটারের প্রধান উপকরণ। কম্পিউটারের মূল নিয়ন্ত্রণ করে
থাকে এই প্রসেসর। এটিকেই মূলত সিপিইউ বলা হয়। বর্তমানে বাজারে থাকা প্রসেসর
নির্মাতা প্রতিষ্ঠান গুলোর মধ্যে রয়েছে ইন্টেল ও এডিএম এর নাম। তবে ইন্টেল
প্রসেসরের চাহিদা বেশ লক্ষণীয়। যেহেতু প্রসেসর কম্পিউটারের জন্য একটি
গুরুত্বপূর্ণ বস্তু তাই এটি কেনার সময় অবশ্যই বিশেষ শতর্কতা গ্রহণ করতে
হবে। প্রসেসরের ক্লক স্পিড একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ক্লক স্পিড যত বেশি হবে
প্রসেসরের প্রসেসিং ক্ষমতা তত বেশি হবে। আর একটি বিষয় হলো- প্রসেসরের
সিরিজ যত উন্নত হবে এর স্পিড তত বাড়বে হবে। বর্তমান বাজারে কোর-আই সিরিজ
সবচেয়ে আধুনিক। সপ্তম প্রজন্মের প্রসেসরের মধ্যে কোর-আই৭ এক্সট্রিম অন্যতম।
প্রসেসর কেনার সময় এর থ্রেড কয়টি তাও লক্ষ্য করা জরুরি। কোর এবং থ্রেড এর
সংখ্যা বেশি হলে স্পিড বেশি হবে। এছাড়াও বাস স্পিড ও ক্যাশ মেমোরি
সম্পর্কেও খেয়াল রাখতে হবে। ইন্টেল প্রসেসর কিনলে এটি টার্বো বস্ট
টেকনোলজির কি-না তাও খেয়াল করতে হবে।
মাদারবোর্ড যেমন হবে
মাদারবোর্ড হলো কম্পিউটারের সেই অংশ যেটির সঙ্গে কম্পিউটারের সকল
যন্ত্রাংশ যুক্ত থাকে। বর্তমানে দেশের বাজারে ভাল মাদারবোর্ডের মধ্যে রয়েছে
গিগাবইই, ইন্টেল ও আসুস। মাদারবোর্ড আপনি যেটিই কিনেন সেটি আপডেট প্রসেসর
সমার্থন যোগ্য হতে হবে। মাদারবোর্ডে থাকা র্যামের স্লট দেখে র্যাম কিনতে
হবে। আধুনিক র্যামের টাইপ হলো ডিডিআর৪। এছাড়াও মাদারবোর্ডের ইউএসবি টাইপ
কি? এর ভার্সন কতো তাও জেনে নিতে হবে। বর্তমানে বাজারে থাকা পেনড্রাইভ ও
মাউস, কি-বোর্ড ইউএসবি ৩.০ ভার্সনের। মাদারবোর্ডে এইচডিএমআই পোর্ট আছে
কি-না তাও দেখে নেয়া জরুরি। এখনকার স্মার্ট টেলিভিশন ও মনিটরগুলোতে
এইচডিএমআই পোর্ট দেয়া রয়েছে। স্মার্ট টেলিভিশন ও প্রজেক্টরের সঙ্গে কানেক্ট
করতে হলে মাদারবোর্ডে এইচডিএমআই পোর্ট থাকতে হবে। মাদারবোর্ডে ল্যান কার্ড
বা লোকাল এড়িয়া নেটওয়ার্ক কার্ড, এইচডি অডিও ও ভিডিও এবং ইন্টারনাল
গ্রাফিক্স কার্ড এর মান ভালো হলে কম্পিউটারটি ভাল সার্ভিস দেবে।
যেমন হবে মনিটর
একটি কম্পিউটারের প্রধান আউটপুট হলো এর সঙ্গে সংযুক্ত মনিটরটি।
কম্পিউটারের সঙ্গে সংযুক্ত মনিটরটি ভাল ব্র্যান্ডের হলে ভাল হয়। বর্তমানে
দেশের বাজারে স্যামসাং, এলজি, বিনকিউ, ফিলিপস, এইচপি ও আসুস ব্র্যান্ডের
মনিটর পাওয়া যায়। মনিটর কেনার সময় আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী স্ক্রিনের সাইজ
নির্বাচন করুন। এখনকার অনেক মনিটরে বিল্ট-ইন টিভি কার্ড রয়েছে। কম্পিউটার ও
টেলিভিশনের সুবিধা একত্রে ভোগ করতে চাইলে টিউটার যুক্ত মনিটর কিনে নিতে
পারেন বা আলাদা টিভি কার্ড সংযুক্ত করতে পারেন। কয়েক বছর আগেও এলসিডি
মনিটরের ব্যপক চাহিদা থাকলেও বর্তমানে এলইডি (লাইট ইমেটিং ডায়ড) মনিটরের
চাহিদা লক্ষণীয়। এলসিডি বা এলইডি মনিটর যেটিই কিনুন এর রেসপন্স টাইম কম হলে
ভাল।
র্যাম নির্বাচন
র্যাম একটি
কম্পিউটারের গতি বাড়াতে সাহায্য করে। বর্তমানে দেশের বাজারে অনেক
ব্র্যান্ডের র্যাম পাওয়া যায়। যতগুলো কোম্পানির র্যাম পাওয়া যায় তার মধ্যে
ট্রনসেন্ড, টুইনমস উল্লেখযোগ্য ব্র্যান্ড। র্যাম কেনার সময় এর বাস
ফ্রিকোয়েন্সি দেখে কেনাই ভাল। ডিডিআর-থ্রি এর চেয়ে ডিডিআর ফোর র্যামের
দক্ষতা বেশি। আর একটি বিষয় হলো- মাদারবোর্ডে র্যামের স্লট যেমন হবে আপনাকে
ওই অনুপাতেই র্যাম কিনতে হবে।
হার্ডডিস্ক যেমন হবে
একটি কম্পিউটারের যাবতীয় তথ্য জমা রাখতে হার্ডডিস্ক ব্যবহার করা হয়। এটি
কম্পিউটারের ভার্চুয়াল র্যাম হিসেবেও কাজ করে। তসিবা, স্যামসাং ও
ট্রানসেন্ড কোম্পানির হার্ডডিস্ক বর্তমানে বাজারে রয়েছে। হার্ডডিস্কে যত
বেশি জায়গা থাকবে আপনি তত বেশি তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন। বর্তমানে ১৬০ জিবি
থেকে ৩টিবি পর্যন্ত হার্ডডিস্ক পাওয়া যায়। হার্ডডিস্কের আরপিএম বেশি হলে
এর ডাটা ট্রন্সফার ক্ষমতা বেশি হবে। মাদারবোর্ডে হার্ডডিস্কের পোর্ট
অনুযায়ী আপনাকে হার্ডডিস্ক কিনতে হবে। আপনি যদি এক্সটার্নাল হার্ডডিস্ক
ব্যবহার করতে চান তাহলে মাদারবোর্ডের ইউএসবি পোর্টের ভার্সন দেখে তা
কিনবেন।
যেমন হবে কম্পিউটার কেসিং
মাদারবোর্ড, হার্ডডিস্কসহ অন্যান্য যন্ত্রাশং সাজিয়ে রাখার বক্সটিই হলো
কেসিং। কেসিং নির্বাচনের জন্য ব্র্যান্ড ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে কেসিং
নির্বাচন করার সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন এটি দেখতে সুন্দর এবং এটি দিয়ে
বাতাস যাতায়াতের সু-ব্যবস্থা থাকে। আর একটি বিষয় হলো-কেসিং এর সঙ্গেই
পাওয়ার সাপ্লাই সংযুক্ত থাকে এ কারণে কেসিং এর মূল্য পাওয়ার সাপ্লাইয়ের
কোয়ালিটির ওপর অনেক নির্ভর করে।
অপটিক্যাল ডিস্ক ড্রাইভ যেমন হবে
অপটিক্যাল ডিস্ক ড্রাইভ বলতে আমরা বুঝি সিডি বা ডিভিডি প্লেয়ার ও রাইটার।
বাজারে অনেক কম্বো ড্রাইভ পাওয়া যায় যা দিয়ে প্লেয়ার ও রাইটারের সুবিধা
পাওয়া যাবে। মাদারবোর্ডের পোর্ট অনুযায়ী অপটিক্যাল ডিস্ক ড্রাইভ কিনতে হবে
নয়তো আলাদা কনভার্টারের সাহায্য নিতে হতে পারে। অপটিক্যাল ডিস্ক ড্রাইভের
স্পিড বেশি হলে এটি ডিস্ক থেকে দ্রুত ডাটা রিড করতে পারবে।
গ্রাফিক্স কার্ড
কম্পিউটারের বিভিন্ন ব্যবহার রয়েছে। বিশেষ করে গেমারদের জন্য কম্পিউটারে
ভাল গ্রাফিক্স কার্ডের প্রয়োজন রয়েছে। বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের
গ্রাফিক্স কার্ড পাওয়া যায়। গ্রাফিক্স কার্ডেল ভি-র্যাম বেশি হলে এর ফলাফল
ভাল পাওয়া যাবে। এছাড়াও ক্লক রেট, মেমোরি বাস ইত্যাদি বিভিন্ন জিনিসের
জন্যও গ্রাফিক্স কার্ডের ক্ষমতার পরিবর্তন হয়।
কি-বোর্ড
কম্পিউটারের গুরুত্বপূর্ণ ইনপুট ডিভাইসের মধ্যে অন্যতম হলো কি-বোর্ড।
বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কি-বোর্ড পাওয়া যায়। এফোরটেক, ওয়ালটন, ডিলাক্স ও
মারকারি ব্র্যান্ডের কি-বোর্ড এগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি কেনার সময় লক্ষ্য
করবেন বাংলা অক্ষর রয়েছে কি-না অথবা আপনার প্রয়োজনীয় ফন্ট আছে কি-না?
মাউস নির্বাচন
কম্পিউটারের গুরুত্বপূর্ণ ইনপুট ডিভাইসের মধ্যে অন্যতম আর একটি হলো মাউস।
বাজারে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কি-বোর্ড পাওয়া যায়। এফোরটেক, ওয়ালটন, ডিলাক্স ও
মারকারি ব্র্যান্ডের মাউস পাওয়া যায়। ব্যবহার বান্ধব বা ধরতে সুবিধা হয়
এমন মাউস নির্বাচন করলে ভাল। রয়েছে বিভিন্ন কালারের মাউস। চাইলে আপনি আপনার
পছন্দ মতো কালার নির্বাচন করতে পারেন। বর্তমানে গেমারদের জন্য কালারফুল ও
আলাদা সুবিধা যুক্ত মাউস পাওয়া যায়।
ইউপিএস নির্বাচন
ডেস্কটপ কম্পিউটারের জন্য ইউপিএস একটি অপরিহার্য অংশ। বাজারে দুই ধরনের
ইউপিএস পাওয়া যায়। একটি হলো অনলাই ইউপিএস ও অন্যটি হলো অফলাইন ইউপিএস।
সাধারণত একটি শর্ট ব্যাকআপের ইউপিএস ২০ থেকে ২৫ মিনিট ব্যাকআপ দিয়ে থাকে।
স্পিকার নির্বাচন
কম্পিউটারের আরো একটি আউটপুট ডিভাইস হলো স্পিকার। একটি কম্পিউটারের
পরিপূর্ণতা আনতে হলো এটির সঙ্গে স্পিকার সংযুক্ত করতে হবে। সঙ্গীত প্রেমীরা
কম্পিউটারের সঙ্গে স্পিকার যুক্ত করতে চাইলে উন্নত মানের স্পিকার নিতে
পারেন। বাজারে ২:১ ও ৫:১ স্পিকার পাওয়া যায়। বর্তমান প্রায় সব মাদারবোর্ডেই
৫:১ সাউন্ড কার্ড বিল্ট-ইন থাকে। ফলে আপনি ৫:১ স্পিকার ব্যবহার করতে
পারবেন।
0 Comments