চাকরিতে ঢোকা নিয়ে ভ্রান্ত সব ধারণা

আপনার প্রথম চাকরিই হোক আর দশম চাকরিই হোক-নতুন চাকরি সম্পর্কে কিছু প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা আপনি লালন করেন অথবা অন্যদের লালন করতে দেখবেন। কখনো এসব ভুল ধারণা যেন আপনার মনমতো চাকরিটি খুঁজে পাওয়ার পথে বাঁধা হয়ে না দাঁড়ায়।
ভ্রান্ত ধারণা ১:
‘আমার যোগ্যতাই আমাকে চাকরি দেবে’
এটা সত্য যে চাকরি পাওয়ার জন্য অভিজ্ঞতা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। কিন্তু আপনি যতটা নিশ্চিতভাবে এটাকে গুরুত্বপূর্ণ ধরে নিয়েছেন আদৌ সেটা তত গুরুত্বপূর্ণ নয়। অনেক চাকরিদাতাই এমন একজন ব্যক্তিকে চাকরি দেয়ার জন্য খোঁজেন যিনি তাদের দলে যোগদান করার মতো যথার্থ অর্থে ‘যোগ্য’ নন। এ ব্যাপারে ওয়ার্নস গ্রেগওয়ার্ড নামের একটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার মি. ওয়ার্নস বলেন, পৃথিবীর সমস্ত অভিজ্ঞতাই আপনি অর্জন করেছেন কিন্তু এটা মুখ্য বিষয় নয়। আপনার যদি আর দশজনের চেয়ে ব্যক্তিত্বে ভিন্নতা থাকে, আলাদা কিছু গুণাবলি থাকে তাহলে চাকরিদাতারা আপনাকেই তাদের দলে অন্তর্ভুক্ত করতে চাইবেন।
ভ্রান্তধারণা ২:
‘এই চাকরিতে আমাকে ডাকবে না, আমার ব্যাপারে তারা আগ্রহী নয়’
ভ্যালরাইট কনসাল্টিংয়ের কর্ণধার মি. রাইট এ সম্পর্কে সুন্দর একটি মতামত দিয়েছেন। তিনি বলেন, আপনি যথেষ্ট যোগ্য লোক। আপনার যোগ্যতা সম্পর্কে আপনি মোটেও সন্দিহান নন। আপনার সিভিও যথেষ্ট সমৃদ্ধ। আপনি সমস্ত নিয়ম মেনে আপনার জীবনবৃত্তান্ত সুন্দর একটি খামে ভরে চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানে পাঠালেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, সেই কোম্পানি থেকে আপনাকে ডাকা হলো না। তার মানে এই নয় যে, ওই কোম্পানি থেকে আপনাকে কখনোই ডাকা হবে না। অধিকাংশ চাকরিপ্রার্থী নিজেদের সবদিক থেকে দক্ষ করেই চাকরির মুখোমুখি হন। প্রাথমিক অবস্থায় তারা সব ধরনের কাজই স্বাচ্ছন্দ্যে করার মতো মানসিকতা রাখেন। রাইট বলেন, অধিকাংশ চাকরিপ্রার্থীই ফেসবুকের লাইক, টুইটারের রিটুইটের মতোই দ্রুত ‘ফিডব্যাক’ প্রত্যাশা করেন। কিন্তু এটা চাকরির ক্ষেত্রে মোটেও কাম্য নয়। আপনি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য মেইল করেছেন কিন্তু সেই প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে দ্রুত ‘রেসপন্স’ না পেলেই অধৈর্য হয়ে উঠছেন। এটা ঠিক নয়। আপনাকে ধৈর্য ধরতে হবে, অপেক্ষা করতে হবে।
ভ্রান্ত ধারণা ৩:
জীবনবৃত্তান্ত দেয়াই আছে, ভালো পদ তৈরি হলেই ডাকবে’
এটা ভাবার সুযোগ নেই যে কোম্পানি আপনার পছন্দ অনুযায়ী পদ সৃষ্টি করে আপনাকে নিয়োগ দেবে। কেননা অপ্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে কখনোই তারা মূল্যবান সময় নষ্ট করবে না। রাইট বলেন, অধিকাংশ কোম্পানিতেই এমন কোনো সিস্টেম চালু নেই যে আগে থেকে চাকরি প্রার্থীর জীবনবৃত্তান্ত নিয়ে রাখবে এরপর তার পছন্দ ও যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মক্ষেত্র তৈরি করবে। পক্ষান্তরে রাইটের সুপারিশ হলো, অনলাইনে কাক্সিক্ষত কোম্পানির ওয়েবসাইট ভিজিট করুন, তাদের কর্মকাণ্ড আদ্যোপান্ত লক্ষ্য করুন। কোম্পানির তথ্য-উপাত্ত ভালো করে আত্মস্ত করে এরপর আপনার পছন্দ অনুযায়ী চাকরির জন্য আবেদন করুন।
ভ্রান্ত ধারণা ৪:
‘আমার ক্যারিয়ার পরিবর্তন সম্ভব নয়’
আপনি যে কোম্পানিতে কাজ করছেন সেখানকার কর্মপরিধি সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন থাকবেন সেটিই স্বাভাবিক। কিন্তু ক্যারিয়ার পরিবর্তনের কথা চিন্তা করলেও এ ব্যাপারে শঙ্কিত হয়ে উদাসীন থাকছেন। এ ক্ষেত্রে আপনি শঙ্কিত না হয়ে নিজস্ব কিছু কৌশল প্রয়োগ করে নতুন ক্যারিয়ার তৈরি করতে পারেন। যদি ক্যারিয়ারে পরিবর্তন চান তাহলে আপনার সর্বশেষ অভিজ্ঞতা আপনাকে দারুণভাবে সহায়তা করবে। কাক্সিক্ষত প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় যোগ্যতা অনুযায়ী নিজেকে দক্ষ করতে হবে। এ জন্য প্রয়োজন হলে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে। তবেই আপনি আপনার পছন্দের চাকরিটি পেতে পারেন। এটা আপনার প্রত্যাশাকে শাণিত করবে। নিজেকে আরো বেশি দক্ষ করতে আপনার কাক্সিক্ষত প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলুন। এ ক্ষেত্রে আপনি কোম্পানির অভ্যন্তরীণ নিয়মশৃঙ্খলা ছাড়া চাকরিদাতাদের প্রত্যাশাও জানতে পারবেন। অনেক কোম্পানিই চাকরি প্রার্থীদের কাছে ভিন্ন কিছু প্রত্যাশা করেন কেননা এদের দ্বারা কোম্পানি বিভিন্ন ভাবে লাভবান হতে পারে।
প্রচলিত ধারণা ৫:
আমার জন্য হয়তো কোনো চাকরিই অবশিষ্ট নেই’
যখন আপনি চাকরি খুঁজছেন তখন নিরুৎসাহিত বোধ করা খুবই স্বাভাবিক। বিশেষ করে অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার সময়গুলোতে এটা প্রকট আকার ধারণ করে। লক্ষ্য রাখবেন, চাকরি সন্ধানের ক্ষেত্রে কৌশলগতভাবে যেন আপনি একটু এগিয়ে থাকেন। রাইটের মতামত অনুযায়ী, অনেক সময় বিজ্ঞাপন প্রকাশের আগেই চাকরির পদ পূর্ণ হয়ে যায়। এসব ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগ অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের একটি মাধ্যম হিসেবে গণ্য হয়।
আপনার কাক্সিক্ষত প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে সম্যক ধারণা পেতে এখন গণমাধ্যম বেশ কাজে আসে। কারণ এসব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর সাহায্যে আপনি আপনার পুরনো সহকর্মীদের খুঁজে পেতে পারেন। একজন চাকরিদাতা চাকরি দেয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই ব্যক্তিগত যোগাযোগ এবং পরিচয়কে প্রাধান্য দেবেন। সুতরাং আপনি এমন একটি যোগাযোগ সূত্র খুঁজে বের করুন যা আপনাকে ভিন্নভাবে চাকরিদাতার কাছে উপস্থাপন করতে পারবে।

Post a Comment

0 Comments