হুইল চেয়ার আরোহী মাগুরার ছেলের ১৫ দিনের আয় ৫০ হাজার টাকা! সফলতার গল্প

৮ম শ্রেনী পাশ, তাও আবার দুইটা পা অচল। সে চালাচ্ছে তার পুরো পরিবার। তার ছোট বোনের লেখাপড়া, বাবার চাকুরিতে বেতন পেতে সমস্যা থাকার কারনে আর্থিকভাবে পরিবার ভেঙ্গে পড়ার করার কথা, সেটিও হতে পারেনি, এ হুইল চেয়ারধারী ৮ম শ্রেনী পাশ ছেলেটির জন্য।

তার কোন ট্রেনিং নাই, কোন সার্টিফিকেটও নাই। এরপর সে অনলাইন হতে আয় করছে মাসে ৩০০ডলার+ (প্রায় ২৪,০০০টাকা), যা দিয়ে পরিবার স্বচ্ছলভাবেই চলে যাচ্ছে। সে এখন ফাইভারে লেভেল-২ সেলার, আপওয়ার্কেও টপ রেটেড সেলার। খুশির সংবাদ হচ্ছে, এ মাসে প্রথম বারের মত মাত্র ১৫দিনে আয় করেছে ৫০,০০০টাকা।

যারা ট্রেনিংয়ের অভাবে ইনকাম করতে পারছেননা সহ আরও অনেক ধরনের অজুহাত তৈরি করে নিজেকে বেকার রেখেছেন, এবং অভাবের কারনে হতাশাতে আছেন, যারা ভাবেন ঘরে বসে বিভিন্ন আর্টিকেল পড়ে ভিডিও টিউটোরিয়াল দেখে শেখা যায় না, যারা আশা করেন আপনাকে কেউ ঘরে এসে কাজ শিখিয়ে একদম আয় করিয়ে দিয়ে যাবে, যারা ভাবে ধুর এইগুলা ভূয়া, যারা ‘আমাকে দিয়ে হবে না’- এই অজুহাতে টাইম পাস করছেন- সেই সব অজুহাতধারী এবং অনেক সত্যিকার আগ্রহী কিন্তু গাইডলাইনের অভাবী বিগিনারদের জন্য একটি সফলতার গল্প শেয়ার করা হল।

১) আপনি এখন পযন্ত কত ইনকাম করেছেন? আপত্তি না থাকলে সর্বমোট অ্যামাউন্টটা বললে ভাল হয়


উত্তর:  সবমিলিয়ে ৩ হাজার+ হবে হয়ত। মাসে গড়ে মিনিমাম ৩০০ডলার (প্রায় ২৪ হাজার টাকা) করে ইনকাম হচ্ছে।

২) অনলাইনে কতদিন ধরে কাজ করছেন?


উত্তর:  ১ বছর ধরে কাজ করছি। ২০১৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারী থেকে কাজ করছি ৷

৩) ১ম সফলতা পেতে কতদিন অপেক্ষা করতে হয়েছে?


উত্তর: আমাকে একদিনও অপেক্ষা করতে হয়নি প্রথম সফলতা পেতে৷ কারন আমি সম্পূর্ন ভাবে জেনে বুঝে মার্কেটে জয়েন করেছিলাম ৷

ফাইভারে গিগ পাবলিশ করার ১৩ ঘন্টা পর ই আমি প্রথম অর্ডার পেয়েছিলাম ৷ কাজটা ছিলো ব্যানার ডিজাইনের ৷ ৫ ডলারের কাজ ছিলো কিন্তু বায়ার খুশি হয়ে ১০ ডলার বোনাস দিয়েছিলো ৷

৪) আপনি কাজ শিখেছেন কিভাবে?


উত্তর: আমি কাজ শিখেছি ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রপের নোট, ইউটিউব থেকে ভিডিও দেখে, গুগলে সার্চ করে এবং বিভিন্ন ব্লগের আর্টিকেল, পিডিএফ পড়ে শিখেছি ৷ এক কথায় সম্পূর্ন নিজের চেষ্টায় ৷ আপনাদের ওয়েবসাইট  থেকেও কিছু টিপস  এবং ট্রিকস শিখতে পেরেছি, যেগুলো অজানা ছিলো।

৫) আপনি ৮ম শ্রেনী পাশ, যেটা শুনেছি। সেক্ষেত্রে বায়ারদের সাথে ইংরেজি কমিউনিকেশনের দক্ষতা কতুটুকু রয়েছে?


উত্তর: আমি ৮ম শ্রেনী পাশ হলেও নিজের চেষ্টায় আর ইন্টারনেটের অবদানে নিজেকে অনেকটাই তৈরী করেছি ৷ আর টেলিভিশন থেকেও বিভিন্ন নাটক, সিনেমায় ব্যবহার হওয়া ইংলিশ গুলো কোন অবস্থায় বা কোথায় ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলো থেকেও শিখেছি ৷ আমার বায়ারদের সাথে কমিউনিকেশনে কোনো অসুবিধা হয় না বরং বায়ার রা ফিডব্যাকে লিখে, “He has great command in English language”

যদি কিছু শব্দ বা বাক্য না বুঝি তাহলে গুগল ট্রান্সেলেটরের সাহায্য নি বা সেই শব্দ বা বাক্যের ডেফিনিশন টা গুগলে সার্চ করে বুঝে নি ৷ Example: Define brochure.

৬)  সফলতার আজকের পথে আসতে কি কি বাধা ছিলো, সেটি যদি পাঠকদের সাথে শেয়ার করতেন?


উত্তর: শারিরীক সমস্যার জন্য কিছুটা কষ্ট হয়েছে তবে কোনো বাধা আসেনি ৷ শারিরীক সমস্যার জন্য কোথাও ট্রেনিং নেওয়া কিংবা প্রয়োজনে বাহিরে বের হওয়াটা সম্ভব ছিলোনা, সেজন্য সব কিছু শিখতে হয়েছে নিজে নিজে। পারিবারিক দারিদ্রতার কারনে কম্পিউটার যোগাড় করাটাও কঠিন ছিলো। তবে বাধাকে অতিক্রম করেই সফল হয়েছি, আলহামদুলিল্লাহ।

৭) আপনার প্রতিবন্ধকতার পরও কিভাবে এ পথে হাটা শুরু করলেন? আপনার ইন্সপারেশনটা কি ছিলো?


উত্তর: যখন থেকে ভালোভাবে বুঝতে শিখেছি তখন থেকেই আমি জানি আমি অসুস্থ ৷ তবে নিজেকে কখনো অসুস্থ মনে করিনি ৷ একজন মানুষ যেরকম বড় হয়ে ওঠে আমিও ঠিক তেমনি বড় হয়ে উঠেছি, খেলাধুলা করেছি, ঘুরে বেড়িয়েছি তবে অন্য কয়েকজন সাধারন মানুষের মতো না ৷ আস্তে আস্তে যা পেরেছি ৷ নিজে নিজে স্কুলেও গেছি ৷ রাস্তায় হাটতে গিয়ে কতবার পড়ে গেছি, কেটে গেছে কত তার ঠিক নাই ৷ তবুও চেষ্টা করেছি উঠে দাড়ানোর ৷ আবার হাটছি ৷
তবে ২০১২ সালের পর আর যুদ্ধটা চালাই যেতে পারিনি ৷ তখন ৮ম শ্রেণীতে পড়তাম ৷ জেএসসি পরিক্ষা দেওয়ার ঠিক দুই/তিন দিন আগে থেকেই আমার নিজের পায়ে পথ চলা বন্ধ হয়ে যায়৷ বাসা থেকে বলেছিলো পরীক্ষা বাদ দিয়ে ট্রিটমেন্ট করতে ঢাকা যেতে ৷ আমি জিদ করে যাইনি পরীক্ষা দেওয়ার জন্যে ৷ ইন্টারনেট জগৎের সাথে তখনো আমার পরিচয় ছিলো না ৷ ঘরে বসে কোরআন, নামাজ পড়েই কাটাতাম ৷ কিছুদিন পর প্রাইভেট পড়ানো শুরু করি ৷ বিকেলে একটু বাসার সামনে বের হতাম ৷ এভাবেই কাটতো দিন ৷ ২০১৩-১৪ গেলো এভাবেই ৷ তবে আমার প্রাইভেট পড়ানোর টাকাটা দিয়ে একটা এ্যান্ড্রয়েড ফোন কিনি ৷ তখন থেকেই ইন্টারনেট জগতে পা রাখা ৷ ফেসবুকে এ্যাকাউন্ট খুলি ৷ বিভিন্ন গ্রুপের পোস্ট পড়তাম শেখার জন্য ৷ ফেসবুক নিয়েই পড়ে থাকতাম ৷ তবে শুধু শুধু না ৷ বিভিন্ন গ্রুপের পোস্ট পড়তাম শেখার জন্য ৷ আর আমার ইন্পিরেশনটা ছিলো স্টিফেন হকিনস ৷ আমি ওনার সঙ্গে নিজের অনেক মিল খুজে পেয়েছি আর সেটাকেই লক্ষ্য করে এগিয়েছি এবং করে দেখিয়েছি ৷

৮)  পরিবার হতে কি রকম সাপোর্ট পেয়েছেন?


উত্তর:- আমার পরিবার থেকে আমাকে সম্পূর্নভাবে সাপোর্ট করেছে বিশেষ করে আম্মুর অবদান অনেক ৷ আম্মুও কাজের অনেক কিছু বুঝে ফেলেছে আমাকে সাপোর্ট করতে করতে ৷

৯)  আপনার ক্যারিয়ার নিয়ে ভবিষ্যত স্বপ্নটা কি কি?


উত্তর: আমার ভবিষ্যৎ প্লান আমার সার্ভিসকে ব্রান্ডে পরিণত করা আর লোকালে একটা বিজনেস করা ৷

১০) নতুনরা যারা হতাশ, তাদের জন্য একটু বলেন, তাদের ব্যর্থতার কি কি কারনগুলো আপনার চোখে পড়েছে?


উত্তর: হতাশার জন্য তারা নিজেরাই দায়ী ৷ কারন তারা রিসোর্চ নিজে খুঁজে বের করতে জানেনা বা করেনা ৷ সবসময় অন্যের আশায় বসে থাকে ৷ গুগল টাকে ব্যবহার করতে জানে না ৷ গুগলে যে ইমেজ দিয়ে সার্চ করা যায় সেটাই অনেকে জানেনা  ৷ নতুন কোনো জিনিস দেখলে সবসময় বড় ভাইদের অপেক্ষায় থাকে কখনো নিজে জানার চেষ্টা করেনা ৷ আর প্রধান কারন যেটা সেটা হচ্ছে তারা ইংরেজীটাকে কম প্রাধান্য দেয় না দিতে চায় না ৷

১১) নতুনদের জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট পরামর্শ দিবেন, যাতে সবাই উপকৃত হয়।


উত্তর: অন্যান্য এক্সপার্ট ভাই/বোনদের মতো আমিও একই কথা বলবো, ধৈর্য্য ধরুন, কাজের প্রতি গুরুত্ব দেন আর গুগল টা কে ব্যবহার করতে শিখুন ৷ নিজেকে প্রতিনিয়ত আপডেট করুন ৷ অন্যের অপেক্ষায় বসে না থেকে নিজে উত্তর খোঁজার চেষ্টা করুন ৷ ধন্যবাদ ৷

এখন আপনার প্রতি আমার প্রশ্ন? 


উনি পারলে আপনি কেন পারবেন না? আর কত অজুহাত ধরবেন? অনলাইনে ফ্রী এবং পেইড দুই ধরণের রিসোর্স এর ই অভাব নাই। কবে শিখবেন আর?

একটা দিন আপনি অবহেলা করলেন মানে অন্যদের থেকে মিনিমাম ১ মাস পেছনে পড়লেন, কারন ইন্টারনেটের আলো এখন দ্রুততর ছড়িয়ে পড়ছে গোটা বিশ্বে,  আর তাই অন্যদের থেকে পিছিয়ে পরার আগেই নিজেকে তৈরি করুন, এখনই সিদ্ধান্ত নিন

কাজেই এখনই আপনার দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি-ই অল্প অল্প করে সময় দেয়া শুরু করুন, কতক সফল ফ্রীল্যান্সারদের মত আমাদের ফ্রী গাইডলাইন দিয়েই শুরু করুন আপনার যাত্রা।
ফ্রীল্যান্সিং নিয়ে বাংলাদেশ সরকার ও নিয়েছে নানান ধরণের উদ্যোগ, ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করছে, এছাড়াও ইন্টারনেটে আজকাল ফ্রী রিসোর্স এর অভাব নেই। এরপরেও যদি ব্যর্থতায় পর্যবসিত হন তাহলে সেটার দায়িত্ব আপনার নিজের-ই।

Post a Comment

0 Comments