একটি পণ্যকে বাজারে আনার ধাপগুলো জেনে নিন

দিন যতো সামনে অগ্রসর হচ্ছে প্রতিযোগিতা তার দশগুণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই প্রতিযোগিতার বাজারে নিজেকে টিকিয়ে রাখতে পারার চ্যালেঞ্জ-ই আসলে বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জে বিজয়ী হতে গেলে বেশ কয়েকটি ধাপ আপনাকে সাবলীলভাবে মেনে চলতে হবে। আমাদের আজকের লেখাটি মূলত নিজস্ব পণ্য নিয়ে যারা মার্কেটিং করে কিংবা করতে চায় তাদের জন্য।
আপনি খেয়াল করে দেখবেন, বাজারে এমনকিছু নতুন পণ্য আসে যা আসা মাত্রই বাজার জমিয়ে ফেলে, ব্যাপারটি কি খুবই সোজা? মোটেও না। এর আদ্যোপান্তে আছে কঠোর পরিশ্রম এবং চমৎকার কিছু প্ল্যানিং। তবে চলুন দেরি না করে জেনে নেয়া যাক, পণ্যের উন্নয়নে কিংবা পণ্যকে বাজারে খুব ভালো অবস্থানে রাখতে কি কি বিষয় মাথায় রাখতে হয়ঃ

ধারণা

পণ্যের উন্নয়নে কার্যকরী ভূমিকা রাখার ক্ষেত্রে প্রথম এবং উল্লেখযোগ্য ধাপ হচ্ছে ধারণা। যখন আপনি আপনার কোনো পণ্যের উন্নয়নে কাজ শুরু করবেন, তখন আপনাকে অবশ্যই একটা ফ্লোচার্ট এঁকে সামনে এগোতে হবে। আপনার পণ্যগুলো কোন এরিয়ায় ভালো চলতে পারে এবং সেক্ষেত্রে পণ্যের মান কেমন হওয়া উচিত ইত্যাদি ব্যাপারগুলো খাতা-কলমে নিয়েই আপনাকে উন্নয়নের দিকে এগোতে হবে।
নকশা
আমরা প্রত্যেকেই একটি কথা জানি যে, আগে দর্শনধারী, পরে গুন বিচারি। অর্থ্যাৎ, পণ্যের ক্ষেত্রে সর্বপ্রথম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, দেখতে কেমন। আপনার পণ্যটি যদি দেখতে ভালো হয় এবং তা সবার চোখে আকর্ষণ ব্যাপারটি আনতে পারে তবে নিঃসন্দেহে সেটি প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে পারবে। সুতরাং বলতেই হয়, পণ্যের উন্নয়নে ধারণা পর্বটির পর গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো নকশা বা ডিজাইন। আপনি আপনার পণ্যের সর্ব্বোচ্চ বাজারজাতকরণ নিশ্চিত করতে হলে, পণ্যটির ডিজাইন এমনভাবে করতে হবে, যেন প্রথম দুই থেকে তিন সেকেন্ডের মধ্যেই তা ক্রেতার চোখে আকর্ষণ ব্যাপারটি নিয়ে আসতে পারে। সুতরাং, পণ্যের উন্নয়নে ডিজাইন ব্যাপারটিকে অত্যধিক গুরুত্ব দিতে হবে।        

পরীক্ষা

এই ধাপটিকে বিশ্লেষণ করবার জন্য একটা উদাহরণ দেখে নেয়া যাক। মনে করুন, আপনি পড়াশোনা সংক্রান্ত যেকোনো একটি টপিক খুব ভালোভাবে পড়লেন। এখন সে টপিকটি সম্পর্কে আদৌ আপনার ভালো জানা হলো কিনা তা জানবার একমাত্র রাস্তা কী হতে পারে? সহজ এবং বাস্তবসম্মত উত্তর হবে, উক্ত টপিকের উপর একটা পরীক্ষা দেয়া। পরীক্ষা দেয়ার পর আপনি কিন্তু ঠিকই বুঝে নিতে পারবেন আপনি কতখানি জানেন এবং আপনাকে আর কতটুকু উন্নতি সাধন করতে হবে।
এই একই ব্যাপার, আপনার পণ্যের উন্নয়নের ক্ষেত্রেও খুব ভালো খাটে। আপনি আপনার পণ্যের একটা সেম্পল  প্রতিষ্ঠানের কর্মী কিংবা প্রতিনিধির মাধ্যমে বাজারে ছেড়ে পরীক্ষা করে নিতে পারেন। এতে করে আপনি খুব সহজেই আপনার পণ্যের উন্নয়নে কি কি পদক্ষেপ নেয়া উচিত, সে সম্পর্কে খুব ভালো একটা আইডিয়া নিতে পারবেন। ফিডব্যাক অনুযায়ী আপনার পণ্যকে উন্নত করে বাজারের খুব ভালো একটা অংশ  ধরে ফেলতে পারেন।      

মূল্য

পণ্যের উন্নয়নে মূল্য নির্ধারণ ধাপটিও অন্যান্য ধাপের মতো অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
এই ধাপটির ব্যাখায় যাবার আগে, একটি সহজ প্রশ্ন এবং উত্তর দেখে নেয়া যাক। প্রশ্নটি হচ্ছে, আপনি সাধারণত বাজারে গিয়ে কেনাকাটার ক্ষেত্রে কোন ধরনের চিন্তা করেন? সহজ উত্তর হিসেবে বলা চলে,
হাতের নাগালে থাকা দাম সঙ্গে গুনগত মান ভালো এমন পণ্য কেনার ক্ষেত্রেই আমাদের আগ্রহ সবচে’ বেশি থাকে। এই একই ব্যাপার আপনাকে আপনার পণ্যের উন্নয়নের ক্ষেত্রেও মাথায় রাখতে হবে। অনেক উদ্যোক্তা আছেন যারা প্রতিষ্ঠানের ব্যয়ের কথা ঠিকঠাক চিন্তা না করেই মূল্য নির্ধারণ করে থাকে, যার ফলে যথাযথ মুনাফা অর্জন করা সম্ভব হয় না।
আবার অনেকেই পণ্যের এরিয়ার কথা এবং উক্ত এরিয়ায় বসবাসরত মানুষের চাহিদা, কিংবা আয়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে, পণ্যের মানানসই মূল্য নির্ধারণে যথাযথ সিস্টেম ফলো করে না , যার ফলে লাভের চাইতেও ক্ষতির পাল্লাই বেশি ভারী হয়।
যখন আপনি আপনার পণ্যের ঠিকঠাক মূল্য নির্ধারণ করতে পারবেন, তখন সে পণ্যের উন্নয়নেও ভালো কাজ করতে পারবেন। সুতরাং, সবকিছুর সাথে সামঞ্জস্য রেখে পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করুন।

সামাজিক মাধ্যম

আধুনিক সময়ে মানুষ যেমন আধুনিক হচ্ছে ঠিক তেমনি প্রযুক্তিও খুব ভালো আধুনিকতার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। সামাজিক সাইটগুলো হাতের নাগালে থাকায় এখন মুহূর্তেই ঘরে বসে বিভিন্ন দেশ কিংবা দেশের পণ্য সম্পর্কে খুব ভালো ধারণা নেয়া সম্ভব হচ্ছে। পণ্যের উন্নয়নের ক্ষেত্রে সামাজিক সাইটগুলো খুব ভালো সহায়ক হতে পারে।যখন আপনি আপনার প্রতিষ্ঠানে নতুন কোনো পণ্য আনবেন তখন তার নকশা কিংবা সে পণ্য সম্পর্কে আগাগোড়া একটি আইডিয়া ফেসবুক কিংবা টুইটারে শেয়ার করতে পারেন। যখন আপনি পণ্যের ব্যাপারে কোনোকিছু শেয়ার করবেন, তখন অবশ্যই কিছু না কিছু ফিডব্যাক পাওয়া যাবে। সে ফিডব্যাকগুলোকে কাজে লাগিয়ে আপনি আপনার পণ্যের উন্নয়ন নিয়ে কাজ করতে পারবেন।

একাগ্রতা

একাগ্রতাকে সফলতার একটি অন্যতম প্রভাবক বললে ভুল হবে না। পৃথিবীতে আসলে এমনকিছু নেই যাতে একাগ্রতা ছাড়াই সফল হওয়া যায়। যেকোনো একটি প্রতিষ্ঠান কিংবা যেকোনো একটি পণ্য নিয়ে কাজ করার সময় একাগ্রতা শব্দটিকে মাথায় রাখা বাঞ্জনীয়। হয়তো আপনি অনেক সময় খুব সীমিত লাভে আপনার পণ্যটিকে উন্নত করে বাজারে ছাড়তে হতে পারে। হতাশ না হয়ে একাগ্রতা দিয়ে কাজ করতে থাকুন।
যখন আপনার পণ্যটি মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে, তখন আপনার নির্ধারণ করা যেকোনো মূল্যে মানুষ আপনার পণ্যটিকে নিতে চাইবে। এতে করে আপনার লাভও হবে পাশাপাশি আপনার পণ্যটিকে আরও বেশি উন্নত করতে পারবেন।
ফিচার ছবি- The Daily Star
Written by Sonjoy Datta

Post a Comment

0 Comments