স্টার্টআপ ও মার্কেটিং এ ৫টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়


ছবি সংগৃহীত

একদিন সেলিম ভাই আসলেন আমাদের অফিসে। তার নতুন একটা ফ্যাশন রিলেটেড স্টার্টআপের জন্য কিছু ডিজিটাল মার্কেটিং করাতে চাচ্ছেন। বাজেট ঠিক করাই আছে, এখন শুধু কাজ দরকার। আমি নিজে একটা কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম, তাই তাকে তার ব্যবসা সম্পর্কে কিছু প্রশ্নের উত্তর লিখে দিতে বললাম। তিনি লিখে দিলেন। আমরা ঐটার ভিত্তিতে কাজ শুরু করে দিলাম। ফলাফলটা কেমন ছিলো?
ভয়াবহ! ধারণাও ছিলো না এতোটা ভয়ংকর হতে পারে।
কারণ সেলিম ভাই যখন তার নিজের ব্যবসা সম্পর্কে বলেছেন তখন নিজের দৃষ্টিভঙ্গীতেই সব ভালো ভালো কথা লিখে দিয়েছেন। অথচ বাস্তবে দেখা গেলো কমেন্ট কিংবা মেসেজের উত্তর দেয়ারই দক্ষ জনবল নেই। হুট করে কাজের চাপে ডেলিভারী ম্যান গুবলেট করে ফেলছে অর্ডার। মানুষ সমানে বকাঝকা করে যাচ্ছে তার পোস্টে এসে।
ঝামেলার মধ্যে একসময় সেলিম ভাই তাড়াহুরায় ভুল করে নিম্মমানের কিছু কাঁচামাল এনে পরিস্থিতি করে ফেললেন আরো ঘোলাটে।
আমরা অনেক সময়ই আগে ধারণা করতে পারি না প্ল্যান ঠিক কোন দিকে মোচড় নিবে।
তাই ডিজিটাল মার্কেটিং করার আগে যে বিষয়গুলো খুব খেয়াল করা জরুরী:
১. মার্কেটিং প্ল্যান:
মার্কেটিং করার আগে সুন্দর একটা মার্কেটিং প্ল্যান সাজানো খুব জরুরী। আমার খেয়াল হলো আর দিলাম দুই হাজার টাকার বুস্ট করে, দিলাম ৫০ হাজার টা মেসেজ পাঠিয়ে ব্যাপার ঠিক এমন নয়। অভিজ্ঞ একজন মানুষকে দিয়ে মার্কেটিং প্ল্যান ঠিক করে নিন। এসইও কত টাকার করাবো? এসএমএস না ইমেইল মার্কেটিং? পোস্টার স্টিকার কী কিছু ছাপবো, না কিছু লিফলেট ছাপবো? ফেসবুকে বুস্ট করবো, নাকী ঐ টাকায় কোন মেলায় স্টল নিয়ে নিলে বেশী লাভ? লাইটবোর্ডের পিছনে পঞ্চাশ হাজার খরচ করা কী এখনই উচিত হবে? নাকী একজন সহকারী নিয়োগ দেয়া দরকার? এই সব প্রশ্নের উত্তর জানা কিন্তু খুবই জরুরী।আমি নিজে এই ব্যাপারে সচরাচর শ্রদ্ধেয় সিরাজউদ্দীন ভাইয়ের কাছে যাই। তার অভিজ্ঞতা অনেক, আব্দুল মোনেম গ্রুপের এইচআর ম্যানেজার হওয়ার কারণে প্রচুর মানুষের সাথে ওঠাবসা। অনেক ব্যবসার খুটিনাটি মুখস্ত বলে দিতে পারেন। একটু খরচ হলেও দিন শেষে অনেক বড় বড় বিপদ সম্পর্কে আগেই ধারণা পরিস্কার হয়ে যায়।
২. মেসেজ বা ফোন অপারেটর:
নিজের অভিজ্ঞতা থেকে লিখছি, তাই যেটা নিয়ে ভোগান্তি বেশীতে পড়েছি সেটার কথা আগে তুললাম। মেসেজের উত্তর কে দিবে, ফোন কে রিসিভ এটা ঠিক করা খুবই জরুরী। অনেক ভাল মার্কেটিং স্রেফ নষ্ট হয়ে যায় ফোন অপারেটর যদি ভুল কেউ হয়। আদবকায়দাহীন, অহংকারী বা হিংস্র কেউ ফোন রিসিভ করে ফেললে খুব সমস্যা।
একবার নিজে একটা ওয়েবসার্ভিস নিতে গেলাম। বিকাশে টাকা ভরে ফোন দিয়েছি। অপারেটর কিছু জানে না। উল্টো কাজের মান নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করায় যা তা বলে বসলো। সে চাইলেই তার ম্যানেজার বা অন্য কারও কাছে ফোনটা পাস করে দিতে পারতো যে সার্ভিসটা সম্পর্কে জানে। আমার নিজেরও আর রুচি ছিলো না ব্যাপারটা নিয়ে ঘাটাঘাটি করার। শেষ পর্যন্ত অন্য একজনকে দিয়ে কাজটা করাতে হয়েছে।
ভিন্ন ভিন্ন ধরণের-মনের কাস্টমার আছে। সবার সাথেই খুব ভাল ব্যবহার করতে হবে।আবার ঠিকঠাক মতো কথা না বুঝলেও অনেক সময় পাওয়া কাজ ছেড়ে দেয় অপারেটর। এখানেও সত্যি দক্ষতার বড় একটা ব্যাপার আছে। চেষ্টা করা উচিত প্রোফেশনাল কাউকে নিয়োগ দিতে। একটু খরচের ব্যাপার। সেটা যদি সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে নিজেই শিখে নেয়া উচিত কর্পোরেট কমিউনিকেশনের বিভিন্ন কৌশল।
৩. কন্টেন্ট:
অ্যাড মার্কেটিং এ খুবই জরুরী একটা ব্যাপার কন্টেন্ট। মার্কেটিং প্ল্যানের পরই এর স্থান হওয়া উচিত ছিলো। কত টাকার বুস্ট করাবো, কয়জনের কাছে মেসেজ দিবো তার থেকেও বেশী গুরুত্ব দেয়া উচিত কন্টেন্টের উপর। বিজ্ঞাপনের লেখাটা, ছবিটা, মোশন গ্রাফিক্সটা, ভিডিওটা যেন নজর কাড়া টাইপের হয়। সেগুলো যেন টার্গেট কাস্টমারের মন কাড়তে সক্ষম হয়।
অন্তত এমন কিছু না থাকুক যা ক্রেতার মনে বাজে প্রভাব ফেলবে। অনেক বড় বড় কোম্পানীর ব্যয়বহুল মার্কেটিং ক্যাম্পেইনও বাজে কন্টেন্টের কারণে মার খেয়েছে। সুতরাং স্টার্টআপদের এখানে দৃষ্টি রাখতে হবে সজাগ। আমার নিজেকেই যে সব কাজ পারতে হবে এমন নয়। কিন্তু জানা উচিত বিজ্ঞাপনের খসড়াটা কে লিখছে- কী লিখছে? ডিজাইন কে করছে- কী করছে?
৪. আরওআই: রিটার্ন অব ইনভেস্টমেন্ট:
মার্কেটিং প্ল্যানের শুরু থেকে ক্যাম্পেইন চলাকালীন সময় পর্যন্ত এই ব্যাপার সতর্ক থাকা উচিত। মার্কেটিং করেই যাচ্ছি, করেই যাচ্ছি, কোন কিছু রিটার্ন আসছে না। তাহলে কেমন হলো? কতদিন ধরে ছড়িয়ে যাবো টাকা?আরওআইয়ের উপর ভিত্তি করে প্ল্যানে বেশ কয়েকবার চেঞ্জ আনতে হতে পারে।
৫. সার্ভিস বা প্রোডাক্ট:
মার্কেটিং প্লান তৈরীর সময়ে এই ব্যাপারে পরিস্কার ধারণা থাকা উচিত। সার্ভিস বা প্রোডাক্ট তৈরী ও সরবরাহে সত্যিই কতটুকু দক্ষতা আর ইউনিকনেস আছে, দামে কতটুকু সাশ্রয়ী এটা পুরোপুরি জানা থাকতে হবে। আগে থেকে পরীক্ষা করে ছোটখাট সার্ভে করে একদম নিশ্চিত হয়ে নিতে পারলে তবেই প্রচার যথাযথ হবে।প্ল্যানারকে দিয়ে প্ল্যান করানোর সময় কিছু কিছু মাইলস্টোন রাখা উচিত যেন নির্দিষ্ট সময় ও পরিস্থিতি বুঝে বুঝে প্ল্যানে আপডেট আনা যায়।
এ ব্যাপারে লেখা শুরু করলে পোস্ট অনেক বড় হয়ে যাবে। তাই আজকের মতো এতটুকুই।

বি:দ্র: আলোচনা করতে আপনারা কমেন্টে উল্লেখ করতে পারেন আপনার দেখা, জানা বা পছন্দের বিভিন্ন কার্যকর ক্যাম্পেইন বা ব্যর্থতার বিভিন্ন ঘটনা।





 সূত্র:  kowork office & co working ফেসবুক গ্রুপ থেকে নেওয়া লেখাটি   

Post a Comment

0 Comments