অহংকার যে মানুষকে কতটা অন্ধ ও বাস্তবতাবিমুখ করে তোলে, সেই দৃষ্টান্তও
রয়েছে পাক কোরআনে। মানুষ হিসেবে যে যত পাপ করেছে, ফেরাউন ও নমরুদের সঙ্গে
কি কারও কোনো তুলনা চলে! তারা যে অবাধ্যতার সবরকম সীমা লঙ্ঘন করেছিল এর
মূলেও এ অহংকার। অহংকারের ফলে যখন নিজেকে বড় আর অন্যদের তুচ্ছ ভাবতে শুরু
করল, এরই এক পর্যায়ে নিজেকে ‘খোদা’ দাবি করে বসল! ফলে তারা অত্যন্ত করুণ পরিণতি ভোগ করে
আমরা খুব সাধারণ বিষয়েও একে অপরকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে থাকি। কারও থেকে অপেক্ষাকৃত ভালো অবস্থানে থাকলেই তাকে বিভিন্নভাবে হেয় করার চেষ্টা করি। এসবের কারণ হচ্ছে আমাদের মনের ভেতরের লুকিয়ে থাকা অহংকার। সেই অহংকারের দম্ভে আমরা ধরাকে সরাজ্ঞান করে চলি। যদিও অহংকার হচ্ছে সব পাপের মূল। একে আরবিতে বলা হয় ‘উম্মুল আমরাদ’ অর্থাৎ ‘সব রোগের জননী’। বলা যায়, এ জগতের প্রথম পাপই হচ্ছে অহংকার। আদি পিতা প্রথম মানব হজরত আদম (আ.) কে সৃষ্টি করার আগে মহান আল্লাহ যখন ফেরেশতাদের মানবজাতি সৃষ্টির ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন, তখন তারা অবাক বিস্ময়ে বলেছিলÑ আপনি আমাদের রেখে এমন কোনো জাতি সৃষ্টি করবেন, যারা নৈরাজ্য ঘটাবে, একে অন্যের রক্ত ঝরাবে, অথচ আমরা তো আপনার সার্বক্ষণিক ইবাদতে মগ্ন! মনে মনে তারা এ-ও ভেবেছিলÑ আল্লাহ তায়ালা কিছুতেই এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন না, যে আমাদের চেয়ে বেশি জানে এবং তাঁর কাছে আমাদের তুলনায় অধিক সম্মানিত হবে। এসবের পরও ফেরেশতাদের যখন আল্লাহ বললেন, তোমরা আদমকে সিজদা কর, সবাই সিজদায় লুটিয়ে পড়ল। কিন্তু ফেরেশতাদের মাঝে বেড়ে ওঠা ইবলিশ তখন মাটি আর আগুনের যুক্তি হাজির করল। সে আগুনের তৈরি বলে মাটির তৈরি মানুষকে সিজদা করতে অস্বীকৃতি জানাল। কোআনের ভাষায়Ñ ‘সে অস্বীকৃতি জানাল এবং অহংকার করল। আর সে ছিল কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত।’ (সূরা বাকারা : ৩৪)। এই হলো প্রথম অহংকারের ইতিহাস। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত প্রথম পাপের বিবরণ। এ পাপের দরুন শয়তান অভিশপ্ত হলো, জান্নাত থেকে বিতাড়িত হলো, মানুষের বিরুদ্ধে শত্রুতার ঘোষণা দিয়ে পৃথিবীতে এলো।
অহংকারে অন্ধ হয়ে ইবলিশ আল্লাহর কাছে শক্ত শপথ সেদিন করেছিলÑ ‘সে বলল, আপনি যেহেতু আমাকে পথচ্যুত করেছেন; তাই আমি অবশ্যই তাদের জন্য আপনার সরল পথে বসে থাকব। এরপর আমি অবশ্যই তাদের কাছে আসব তাদের সামনের দিক থেকে, তাদের পেছন থেকে, তাদের ডান দিক থেকে এবং তাদের বাম দিক থেকে। আর আপনি তাদের অধিকাংশকেই কৃতজ্ঞ পাবেন না।’ (সূরা আরাফ : ১৬-১৭)। এই যে শয়তানের শপথ এবং এ শপথের শক্তিতে সে বিভ্রান্ত ও পথহারা করে যাচ্ছে বনি আদমকে, এর মূলে তো সেই অহংকার। অহংকার তাই বিবেচিত হয় সবচেয়ে ভয়ংকর আত্মিক রোগ হিসেবে। কোনো বিষয়ে নিজেকে বড় মনে করে অন্য মানুষকে তুচ্ছ মনে করার নামই অহংকার। অর্থ, বিত্ত, ক্ষমতা, প্রতিপত্তি, নাম-যশ, জ্ঞান-বুদ্ধিতে এগিয়ে থাকা কিছু মানুষ নিজেকে নিয়ে আত্মগরিমায় অন্যদের হেয় দৃষ্টিতে দেখেন। যার কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সঞ্চিত, সে তো দিন এনে দিন খায়, তাকে অর্থবিত্তে গরিব মনে করতেই পারে। এটা অহংকার নয়। অহংকার হচ্ছে তাকে তাচ্ছিল্য করা, গরিব বলে তাকে হেয় করা। এ অহংকার একটি ঘাতক ব্যাধি। পবিত্র কোরআনে নানাভাবে চিত্রিত হয়েছে এ ঘাতক ব্যাধির কথা। ঘাতক ব্যাধি বলার কারণ তা মানুষের অন্তর্জগৎকে তিলে তিলে শেষ করে দেয়। আর এর পরকালীন ভয়াবহ পরিণতি তো রয়েছেই। যে অহংকার ইবলিশকে ‘শয়তানে’ পরিণত করেছে, অভিশপ্ত করে দিয়েছে, রহমত-বঞ্চিত করেছে, সে অহংকারের মন্দ দিক সম্পর্কে আর কিছু না বললেও চলে। এরপরও আল্লাহ তায়ালা বলেছেনÑ ‘পৃথিবীতে যারা অন্যায়ভাবে অহংকারে প্রকাশ করে তাদের অবশ্যই আমি আমার নিদর্শনাবলি থেকে বিমুখ করে রাখব।’ (সূরা আরাফ : ১৪৬)। তিনি এ-ও বলেছেনÑ ‘তোমাদের মাবুদ এক। সুতরাং যারা আখেরাতে ঈমান রাখে না তাদের অন্তরে অবিশ্বাস বদ্ধমূল হয়ে গেছে এবং তারা অহংকারে লিপ্ত। স্পষ্ট কথা, তারা যা গোপনে করে, তা আল্লাহ জানেন এবং যা প্রকাশ্যে করে, তা-ও জানেন। নিশ্চয়ই তিনি অহংকারীকে পছন্দ করেন না।’ (সূরা নাহল : ২২-২৩)।
উদ্ধৃত আয়াতগুলো থেকে আমরা মোটা দাগে যে শিক্ষা পাই, তা এমনÑ
এক. অহংকারী ব্যক্তিকে আল্লাহ তাঁর নিদর্শন থেকে বিমুখ করে রাখেন। তার অন্তর ও চোখকে তিনি সত্য অনুধাবন এবং সঠিক পথ অবলম্বন থেকে ‘অন্ধ’ করে দেন। পবিত্র কোরআনের কত জায়গায় আল্লাহ জ্ঞানীদের বলেছেন তাঁর নিদর্শনাবলি নিয়ে চিন্তা করার কথা। এ চিন্তা মানুষের সামনে আল্লাহ পাকের বড়ত্ব কুদরত এবং আমাদের ওপর তাঁর সীমাহীন অনুগ্রহ ফুটিয়ে তোলে। তখন স্বাভাবিকভাবেই মহান প্রভুর কাছে সে নিজেকে পরিপূর্ণরূপে সঁপে দিতে প্রস্তুত হয়ে ওঠে; কৃতজ্ঞতায় সিজদাবনত হয়। তাই আল্লাহ যদি কাউকে তাঁর ওইসব নিদর্শন থেকে বিমুখ করে রাখেন, তাহলে সে যে দ্বীনের মূল ও সরল পথ থেকেও ছিটকে যাবে, তা তো বলাবাহুল্য।
দুই. আল্লাহ তায়ালার প্রতি যার বিশ্বাস নেই, পরকালে বিশ্বাস নেই, অহংকার তো শুধু তারাই করতে পারে।
তিন. অহংকারীকে আল্লাহ তায়ালা পছন্দ করেন না। কী ইহকাল, আর কী পরকাল, একজন মানুষের অশান্তি, লাঞ্ছনা আর সমুহ বঞ্চনার জন্য এর পরে কী আর কিছু লাগে? ‘আল্লাহ সর্বশক্তিমান’Ñ এ বিশ্বাস যাদের আছে তাদের এ কথা মানতেই হবেÑ প্রকৃত সম্মান পেতে হলে আল্লাহ তায়ালার প্রিয়ভাজন হতেই হবে।
মানবজাতির আলোর দিশারি আমাদের প্রিয়নবী করিম (সা.) বলেছেনÑ ‘তিল পরিমাণ অহংকার যার অন্তরে আছে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না, আর তিল পরিমাণ ঈমান যার অন্তরে আছে, সে দোজখে যাবে না।’ (তিরমিজি : ১৯৯৮)। এখানেও দুটি বিষয় লক্ষণীয়Ñ
এক. অহংকারী ব্যক্তি জান্নাতে যেতে পারবে না। জান্নাতে যেতে হলে আল্লাহ তায়ালার কাছে উপস্থিত হতে হবে অহংকারমুক্ত ‘কলবে সালিম’ নিয়ে।
দুই. এ হাদিসে জান্নাতের বিপরীতে দোজখের কথা যেমন বলা হয়েছে, এর পাশাপাশি ঈমানের বিপরীতে উল্লেখিত হয়েছে অহংকারের কথা। অথচ ঈমানের বিপরীত তো কুফরি। বোঝাই যাচ্ছে, হাদিসে কত ভয়াবহরূপে অহংকারকে চিত্রিত করা হয়েছেÑ বিন্দু পরিমাণ অহংকার নিয়েও কেউ জান্নাতে যেতে পারবে না!
অহংকার যে মানুষকে কতটা অন্ধ ও বাস্তবতাবিমুখ করে তোলে, সেই দৃষ্টান্তও রয়েছে পাক কোরআনে। মানুষ হিসেবে যে যত পাপ করেছে, ফেরাউন ও নমরুদের সঙ্গে কি কারও কোনো তুলনা চলে! তারা যে অবাধ্যতার সব রকম সীমা লঙ্ঘন করেছিল এর মূলেও এ অহংকার। অহংকারের ফলে যখন নিজেকে বড় আর অন্যদের তুচ্ছ ভাবতে শুরু করল, এরই এক পর্যায়ে নিজেকে ‘খোদা’ দাবি করে বসল! ফলে তারা অত্যন্ত করুণ পরিণতি ভোগ করে।
অতি সংক্ষেপে আলোচনা করা হলেও অহংকারের ভয়াবহ পরিণতি ও কঠিন শাস্তি সম্পর্কে সুস্পষ্ট তথ্য ও বিশ্লেষণ থেকে আমাদের বিবেকবোধ জাগিয়ে তুলতে হবে। শুধু অহংকার আমাদের সারা জীবনের সব আমল ধ্বংস করে দিতে পারে। এমনকি বিন্দুমাত্র অহংকার নিয়েও জান্নাতে প্রকাশ করা যাবে না। তাই আমাদের উচিত, কখনও মনের ভেতর বিন্দু পরিমাণ অহংকার ঠাঁই নেওয়া মাত্রই আল্লাহর দরবারে তওবা করা। অন্যকে ছোট না ভেবে নিজেকে তাদের কাছে অহংকারের কলুষমুক্ত সর্বদা চেষ্টা করা। সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে সব সময়ই অতি তুচ্ছ হিসেবে উপস্থাপন করা। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের মন থেকে অহংকার মুক্ত রাখার তৌফিক দান করুন। আমিন।
- সৈয়দ আসাদুজ্জামান সুহান
আমরা খুব সাধারণ বিষয়েও একে অপরকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে থাকি। কারও থেকে অপেক্ষাকৃত ভালো অবস্থানে থাকলেই তাকে বিভিন্নভাবে হেয় করার চেষ্টা করি। এসবের কারণ হচ্ছে আমাদের মনের ভেতরের লুকিয়ে থাকা অহংকার। সেই অহংকারের দম্ভে আমরা ধরাকে সরাজ্ঞান করে চলি। যদিও অহংকার হচ্ছে সব পাপের মূল। একে আরবিতে বলা হয় ‘উম্মুল আমরাদ’ অর্থাৎ ‘সব রোগের জননী’। বলা যায়, এ জগতের প্রথম পাপই হচ্ছে অহংকার। আদি পিতা প্রথম মানব হজরত আদম (আ.) কে সৃষ্টি করার আগে মহান আল্লাহ যখন ফেরেশতাদের মানবজাতি সৃষ্টির ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন, তখন তারা অবাক বিস্ময়ে বলেছিলÑ আপনি আমাদের রেখে এমন কোনো জাতি সৃষ্টি করবেন, যারা নৈরাজ্য ঘটাবে, একে অন্যের রক্ত ঝরাবে, অথচ আমরা তো আপনার সার্বক্ষণিক ইবাদতে মগ্ন! মনে মনে তারা এ-ও ভেবেছিলÑ আল্লাহ তায়ালা কিছুতেই এমন কাউকে সৃষ্টি করবেন না, যে আমাদের চেয়ে বেশি জানে এবং তাঁর কাছে আমাদের তুলনায় অধিক সম্মানিত হবে। এসবের পরও ফেরেশতাদের যখন আল্লাহ বললেন, তোমরা আদমকে সিজদা কর, সবাই সিজদায় লুটিয়ে পড়ল। কিন্তু ফেরেশতাদের মাঝে বেড়ে ওঠা ইবলিশ তখন মাটি আর আগুনের যুক্তি হাজির করল। সে আগুনের তৈরি বলে মাটির তৈরি মানুষকে সিজদা করতে অস্বীকৃতি জানাল। কোআনের ভাষায়Ñ ‘সে অস্বীকৃতি জানাল এবং অহংকার করল। আর সে ছিল কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত।’ (সূরা বাকারা : ৩৪)। এই হলো প্রথম অহংকারের ইতিহাস। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত প্রথম পাপের বিবরণ। এ পাপের দরুন শয়তান অভিশপ্ত হলো, জান্নাত থেকে বিতাড়িত হলো, মানুষের বিরুদ্ধে শত্রুতার ঘোষণা দিয়ে পৃথিবীতে এলো।
অহংকারে অন্ধ হয়ে ইবলিশ আল্লাহর কাছে শক্ত শপথ সেদিন করেছিলÑ ‘সে বলল, আপনি যেহেতু আমাকে পথচ্যুত করেছেন; তাই আমি অবশ্যই তাদের জন্য আপনার সরল পথে বসে থাকব। এরপর আমি অবশ্যই তাদের কাছে আসব তাদের সামনের দিক থেকে, তাদের পেছন থেকে, তাদের ডান দিক থেকে এবং তাদের বাম দিক থেকে। আর আপনি তাদের অধিকাংশকেই কৃতজ্ঞ পাবেন না।’ (সূরা আরাফ : ১৬-১৭)। এই যে শয়তানের শপথ এবং এ শপথের শক্তিতে সে বিভ্রান্ত ও পথহারা করে যাচ্ছে বনি আদমকে, এর মূলে তো সেই অহংকার। অহংকার তাই বিবেচিত হয় সবচেয়ে ভয়ংকর আত্মিক রোগ হিসেবে। কোনো বিষয়ে নিজেকে বড় মনে করে অন্য মানুষকে তুচ্ছ মনে করার নামই অহংকার। অর্থ, বিত্ত, ক্ষমতা, প্রতিপত্তি, নাম-যশ, জ্ঞান-বুদ্ধিতে এগিয়ে থাকা কিছু মানুষ নিজেকে নিয়ে আত্মগরিমায় অন্যদের হেয় দৃষ্টিতে দেখেন। যার কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সঞ্চিত, সে তো দিন এনে দিন খায়, তাকে অর্থবিত্তে গরিব মনে করতেই পারে। এটা অহংকার নয়। অহংকার হচ্ছে তাকে তাচ্ছিল্য করা, গরিব বলে তাকে হেয় করা। এ অহংকার একটি ঘাতক ব্যাধি। পবিত্র কোরআনে নানাভাবে চিত্রিত হয়েছে এ ঘাতক ব্যাধির কথা। ঘাতক ব্যাধি বলার কারণ তা মানুষের অন্তর্জগৎকে তিলে তিলে শেষ করে দেয়। আর এর পরকালীন ভয়াবহ পরিণতি তো রয়েছেই। যে অহংকার ইবলিশকে ‘শয়তানে’ পরিণত করেছে, অভিশপ্ত করে দিয়েছে, রহমত-বঞ্চিত করেছে, সে অহংকারের মন্দ দিক সম্পর্কে আর কিছু না বললেও চলে। এরপরও আল্লাহ তায়ালা বলেছেনÑ ‘পৃথিবীতে যারা অন্যায়ভাবে অহংকারে প্রকাশ করে তাদের অবশ্যই আমি আমার নিদর্শনাবলি থেকে বিমুখ করে রাখব।’ (সূরা আরাফ : ১৪৬)। তিনি এ-ও বলেছেনÑ ‘তোমাদের মাবুদ এক। সুতরাং যারা আখেরাতে ঈমান রাখে না তাদের অন্তরে অবিশ্বাস বদ্ধমূল হয়ে গেছে এবং তারা অহংকারে লিপ্ত। স্পষ্ট কথা, তারা যা গোপনে করে, তা আল্লাহ জানেন এবং যা প্রকাশ্যে করে, তা-ও জানেন। নিশ্চয়ই তিনি অহংকারীকে পছন্দ করেন না।’ (সূরা নাহল : ২২-২৩)।
উদ্ধৃত আয়াতগুলো থেকে আমরা মোটা দাগে যে শিক্ষা পাই, তা এমনÑ
এক. অহংকারী ব্যক্তিকে আল্লাহ তাঁর নিদর্শন থেকে বিমুখ করে রাখেন। তার অন্তর ও চোখকে তিনি সত্য অনুধাবন এবং সঠিক পথ অবলম্বন থেকে ‘অন্ধ’ করে দেন। পবিত্র কোরআনের কত জায়গায় আল্লাহ জ্ঞানীদের বলেছেন তাঁর নিদর্শনাবলি নিয়ে চিন্তা করার কথা। এ চিন্তা মানুষের সামনে আল্লাহ পাকের বড়ত্ব কুদরত এবং আমাদের ওপর তাঁর সীমাহীন অনুগ্রহ ফুটিয়ে তোলে। তখন স্বাভাবিকভাবেই মহান প্রভুর কাছে সে নিজেকে পরিপূর্ণরূপে সঁপে দিতে প্রস্তুত হয়ে ওঠে; কৃতজ্ঞতায় সিজদাবনত হয়। তাই আল্লাহ যদি কাউকে তাঁর ওইসব নিদর্শন থেকে বিমুখ করে রাখেন, তাহলে সে যে দ্বীনের মূল ও সরল পথ থেকেও ছিটকে যাবে, তা তো বলাবাহুল্য।
দুই. আল্লাহ তায়ালার প্রতি যার বিশ্বাস নেই, পরকালে বিশ্বাস নেই, অহংকার তো শুধু তারাই করতে পারে।
তিন. অহংকারীকে আল্লাহ তায়ালা পছন্দ করেন না। কী ইহকাল, আর কী পরকাল, একজন মানুষের অশান্তি, লাঞ্ছনা আর সমুহ বঞ্চনার জন্য এর পরে কী আর কিছু লাগে? ‘আল্লাহ সর্বশক্তিমান’Ñ এ বিশ্বাস যাদের আছে তাদের এ কথা মানতেই হবেÑ প্রকৃত সম্মান পেতে হলে আল্লাহ তায়ালার প্রিয়ভাজন হতেই হবে।
মানবজাতির আলোর দিশারি আমাদের প্রিয়নবী করিম (সা.) বলেছেনÑ ‘তিল পরিমাণ অহংকার যার অন্তরে আছে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না, আর তিল পরিমাণ ঈমান যার অন্তরে আছে, সে দোজখে যাবে না।’ (তিরমিজি : ১৯৯৮)। এখানেও দুটি বিষয় লক্ষণীয়Ñ
এক. অহংকারী ব্যক্তি জান্নাতে যেতে পারবে না। জান্নাতে যেতে হলে আল্লাহ তায়ালার কাছে উপস্থিত হতে হবে অহংকারমুক্ত ‘কলবে সালিম’ নিয়ে।
দুই. এ হাদিসে জান্নাতের বিপরীতে দোজখের কথা যেমন বলা হয়েছে, এর পাশাপাশি ঈমানের বিপরীতে উল্লেখিত হয়েছে অহংকারের কথা। অথচ ঈমানের বিপরীত তো কুফরি। বোঝাই যাচ্ছে, হাদিসে কত ভয়াবহরূপে অহংকারকে চিত্রিত করা হয়েছেÑ বিন্দু পরিমাণ অহংকার নিয়েও কেউ জান্নাতে যেতে পারবে না!
অহংকার যে মানুষকে কতটা অন্ধ ও বাস্তবতাবিমুখ করে তোলে, সেই দৃষ্টান্তও রয়েছে পাক কোরআনে। মানুষ হিসেবে যে যত পাপ করেছে, ফেরাউন ও নমরুদের সঙ্গে কি কারও কোনো তুলনা চলে! তারা যে অবাধ্যতার সব রকম সীমা লঙ্ঘন করেছিল এর মূলেও এ অহংকার। অহংকারের ফলে যখন নিজেকে বড় আর অন্যদের তুচ্ছ ভাবতে শুরু করল, এরই এক পর্যায়ে নিজেকে ‘খোদা’ দাবি করে বসল! ফলে তারা অত্যন্ত করুণ পরিণতি ভোগ করে।
অতি সংক্ষেপে আলোচনা করা হলেও অহংকারের ভয়াবহ পরিণতি ও কঠিন শাস্তি সম্পর্কে সুস্পষ্ট তথ্য ও বিশ্লেষণ থেকে আমাদের বিবেকবোধ জাগিয়ে তুলতে হবে। শুধু অহংকার আমাদের সারা জীবনের সব আমল ধ্বংস করে দিতে পারে। এমনকি বিন্দুমাত্র অহংকার নিয়েও জান্নাতে প্রকাশ করা যাবে না। তাই আমাদের উচিত, কখনও মনের ভেতর বিন্দু পরিমাণ অহংকার ঠাঁই নেওয়া মাত্রই আল্লাহর দরবারে তওবা করা। অন্যকে ছোট না ভেবে নিজেকে তাদের কাছে অহংকারের কলুষমুক্ত সর্বদা চেষ্টা করা। সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে সব সময়ই অতি তুচ্ছ হিসেবে উপস্থাপন করা। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের মন থেকে অহংকার মুক্ত রাখার তৌফিক দান করুন। আমিন।
- সৈয়দ আসাদুজ্জামান সুহান
0 Comments