ব্যর্থতার তিক্ততার স্বাদ পায়নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
প্রত্যেকেরই ব্যর্থতা নামক তীর্যক তীরের আঘাত সইতে হয়েছে। কেননা ব্যর্থতা
প্রতিটি মানুষের জীবনের অন্যতম সঙ্গি। এটা আমাদের জীবনের সাথে জুড়ে গেছে।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমরা ব্যর্থ হয়েই আমাদের পথচলা থামিয়ে দেই। হাড়িয়ে
ফেলি আমাদের বেচে থাকার মূল বারুদ আত্মবিশ্বাসকে। যার ফলে অনুপ্রেরণাও
বিলুপ্ত হয়ে যায়। তখন আমাদের আর ঘুরে দাঁড়ানোর পথ থাকে না। পড়ে থাকি
অন্ধকার ঘরে। চার দেয়াল থেকে হায়নার মত ধেয়ে আসে ডিপ্রেশনের জাল। প্রথমে এই
জাল স্থির থাকলেও ধীরে ধীরে আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে। যেই জাল একবার পেঁচিয়ে ধরলে
সেটা ছিঁড়ে বেড়িয়ে আসা মুশকিল। আর কোন রকম বেরিয়ে আসলেও হারিয়ে যাওয়া
আত্মবিশ্বাসকে আর খুঁজে পাই না। আর আত্মবিশ্বাস যেখানে নেই সেখানে
অনুপ্রেরণা তো থাকার প্রশ্নই উঠে না। তার মানে জীবনটা পুরোপুরি শেষ। তখন
জীবনের প্রতি অনিহা চলে আসে। বেচে থাকার আসল মজাটাই চলে যায়। বেচে থাকলেও
ধুকে ধকে বাচা। যেটার পরিনতি বেলাশেষে আত্মহত্যা নামক ভয়াবহ পর্যায়ে চলে
যেতে পারে।
কিন্তু আমরা যদি ব্যর্থ হয়ে পথচলা বন্ধ না করি, সেই ব্যর্থতাকে কাজে লাগিয়ে, সেই ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যাই আপন উদ্যমে তাহলে বিজয় নিশ্চিত। তাই আমাদের প্রয়োজন ব্যর্থতাকে কাজে লাগানো। ব্যর্থ হওয়া মানেই সব শেষ হয়ে যাওয়া না এই কথাটা বুকেত বাপ পাশটায় চিরতরে স্থাপন করে রাখা। এই কথার বীজ বুকে রোপন করলে পরবর্তীতে এটাই গাছ হয়ে আপনাকে মিষ্টি ফল প্রদান করবে। তাই ব্যর্থ হলেই থেমে যাওয়া যাবে না। ব্যর্থতা হওয়ার ত্রুটিগুলোকে হাটিয়ে সেই ভুলগুলোকে শুধরে নিয়ে এগিয়ে চলতে হবে দুর্বার, তাহলে সাফল্যের হাসিটা আপনার মুখেই ফুটবে। তাই ব্যর্থতাও আপনাকে পৌছে দিতে পারে সাফল্যের শীর্ষচূড়ায়।
আপনি হয়ত ভাবছেন কিভাবে? আর যদি ঠিক এই প্রশ্নটা আপনার মনে ঘুরপাক খায় তাহলে আপনি ঠিক জায়গায় প্রবেশ করেছেন । তাহলে চলুন দেখে নেয়া যাক।
১। সিদ্ধান্ত গ্রহনে সাবধানতা আসবে
মানুষ শুধু শুধু ব্যর্থতা হয়না। ব্যর্থতার পিছনে অনেক কারন থাকে। তাই আপনি যখন ব্যর্থ হবেন, তখন আপনি বুঝতে পারবেন আপনার সিদ্ধান্তে ভুল ছিল। যেই সিদ্ধান্ত আপনি নিয়েছিলেন সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হওয়ার মত পরিস্থিতি তৈরী হয়নি বলে আপনি ব্যর্থতার স্বাদ গ্রহন করেছে। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের মত পরিবেশ তৈরী হলে অবশ্যই আপনাকে ব্যর্থতার তকমা কপালে লাগাতে হতো না। সুতরাং এই শিক্ষাটি আপনার কাজে লাগবে। কেননা ভবিষ্যৎ এ যখন পুনরায় নতুন করে সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে যাবেন তখন এই ভুলের অভিজ্ঞতা আপনাকে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করাতে শেখাবে। আর যদি আপনি সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করেন তাহলে সেই কাজে সাফল্যর ছোয়া পাবেনই।
২। নিজেকে নতুন করে খুঁজে পাবেন
বাংলায় একটি বাক্য আছে, “আহত বাঘ আরো বেশি ভয়ঙ্কর” ঠিক তেমনি আপনি যখন একবার কোন কাজে ব্যর্থ হবেন, তখন আপনার মন মানসিকতা সেটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহন করবে। আপনার আত্মবিশ্বাসকে বাড়িয়ে তুলবে, অনুপ্রেরণা থাকনে তুঙ্গে। কেননা মানুষ যখন পাহাড়ে চড়তে গিয়ে ব্যর্থ হয়, তখন সে কিন্তু পাহাড় চড়া থামিয়ে দেয় না। বরং সেটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে বার বার চেষ্টা করতে থাকে। আর ঠিক একই জিনশটা ঘটবে এখানেও। একবার ব্যর্থ হওয়ায় আপনি আবার চেষ্টা করতে চাইবেন এবং নিজেকে প্রস্তুত করবেন। তখন দেখবেন নিজের মাঝে এমন কিছুই খুঁজে পাচ্ছেন যেটা আগে আপনি আবিষ্কার করেন নি। লুকায়িত এই সুপ্ত শক্তি যখন জেগে উঠবে তখন কোন শক্তিই আপনার আর সাফল্যের মাঝখানে দেয়াল হয়ে দাঁড়াতে পারবে না।
৩। বিপদে বন্ধু চিনতে পারবেন
কোন বন্ধু আমাদের ভালো চায় আর কোন বন্ধই বা আমাদের ভালো চায়! এই দুই বোঝা মুশকিল, কেননা এই দুই প্রকার মানুষের বাইরেটা ঠিক একই রকম শুধু ভেতরটা আলাদা। কিন্তু ভেতরটা তো আর ঢুকে দেখা যাবে না, তাই চেনারও উপায় নেই। কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই আপনি যখন একবার ব্যর্থ হবেন, তখন আপনার বিপদের বন্ধু চিনতে পারবেন। একজন মানুষ যখন ব্যর্থ হয় তখন অনেক কিছুই হারায় এবং যারা শুধু মাত্র আপনার সুসময়ের বন্ধু, আপনার ব্যর্থতার পর দেখবেন এদের কাউকেই পাশে পবেন না, সবাই আপনাকে একা রেখে চলে যাবে। অন্যদিকে আপনার এই খারাপ সময়ও যারা আপনার পাশে থাকবে, আপনাকে সাহস যোগাবে, উৎসাহ দিবে তারাই আসলে আপনার আসল বন্ধু। তারাই আপনার চলার যোগ্য এবং প্রকৃত সঙ্গি। তাদেরকে প্রায়োরিটি দিন, আপনার সাফল্যের পিছনে এদের অনেক সাহায্য থাকবে।
৪। আপনার দুর্বলতা বুঝতে পারবেন
প্রত্যেক ব্যর্থতার পিছনেই রয়েছে কোন না কোন দুর্বলতার ছায়া। সাফল্য আমাদের হাত ফসকে অকারনেই বেরিয়ে যায় না, তার পেছনে থাকে দুর্বলতার গল্প। পরীক্ষায় মানুষ সেই সাবজেক্টই ফেইল করে যেই সাবজেক্টে তারা দুর্বল। ঠিক তাই ব্যর্থতা আসে আমাদের দুর্বলতার কারনেই। কিন্তু আপনি যদি কোন উদ্যোগে প্রথবার ব্যর্থ হোন তাহলে আপনি আপনার দুর্বলতাটাকে ধরতে পারবেন। দুর্বলতা কোথায়, কোন ক্ষেত্রে সেইটা বুঝতে পারবেন। আপনার দুর্বলতাগুলো আপনার কাছে আয়নার মত পরিষ্কার হয়ে যাবে। আর তাই পরেরবার যদি কোন কাজে উদ্যোগের মনস্থির করেন তাহলে আপনার সেই দুর্বলতাগুলোকে কাটিয়ে উঠুন, দুর্বলতা নিয়ে ভাবুন এবং দুর্বলতাগুলোকে আপনার শক্তিতে রূপান্তর করুন। তাহলে দেখবেন সাফল্য আপনার জালে ধরা দিতে বাধ্য।
৫। আপনার অহংকারবোধ মুছে যাবে
ছোট বেলা থেকেই একটা কথা পড়ে আসছি যে “অহংকার পতনের মূল”। তাই অনেক ক্ষেত্রে আপনার ব্যর্থতার অন্যতম বড় কারন হয়ে দাঁড়ায় আপনার অহংকার বোধ। এই অহংকার বোধ আমাদের সাফল্যের রাস্তা থেকে ব্যর্থতার রাস্তায় প্রেরণ করে। কেননা একটি বিষয়ে যখন ধাপে ধাপে সাফল্য আসতে শুরু করে তখন মানুষের মাঝে অহংকার বোধ চলে আসে। আর এই অহংকার বোধই মানুষকে সামনের বাধাগুলো সম্পর্কে অন্ধ করে দেয়। যে কারনেই মানুষ মুখ থুবড়ে পরে । ফলশ্রুতি ব্যর্থতার তকমা কপালে লেপতে হয়। কিন্তু আপনি যদি প্রথমবার ব্যর্থ হন আপনি বুঝে যাবেন অহংকার পতনের মূল কারন আর তাহলে পরের বার কোন কাজে আপনাকে আর অহংকার স্পর্শ করবে না। যার কারনে আপনি সাফল্যের শিখড়ে পৌঁছে যাবেন।
৬। সমালোচনা গ্রহন করতে শিখবেন
সমালোচনা সবার জীবনেই আসে। সমালোচনার কবলে পড়েননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। সমালোচনা থাকবেই আর সত্য মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে আমাদের। তবে সমালোচনা গ্রহন করতে পারা খুবই কঠিন কাজের মধ্যে একটি। সমালোচনা সইতে পারার মত মন মানসিকতা আমাদের মধ্যে অল্প মানুষেরই রয়েছে। কিন্তু আপনি যদি কোন কাজে ব্যর্থ হন, তখন আপনা আপনিই সমালোচনা গ্রহন করার মানসিকতা আপনার মাঝে চলে আসবে। তবে আপনাকে সমালোচনার নেতিবাচক দিক না দেখে সমালোচনার ইতিবাচক দিকটা দেখতে হবে। তাহলেই কেল্লাফতে! কেননা তখন মানুষ আপনার যত বেশি সমালোচনা করবে, আপনি ততই নিজেকে নিখুঁত ভাবে গড়ে তুলতে পারবেন, জীবনেত সিদ্ধান্তগুলো আরো নিখুঁত হবে। মনে রাখবেন, সমালোচকগন ভালো মন্দের চিন্তা আপনার হয়ে করছে বলেই আপনার মন্দদিকটা নিয়ে তারা সমালোচনা করছে। তাদের সমালোচনা থেকে যদি আপনি আপনার মন্দ দিকটা মুছে ফেলতে পারেন তাহলে আপনার সাফল্য একেবারেই নিশ্চিত।
৭। “যদি”-র ঘুরপাক বন্ধ হবে
যদি” আমাদের একটা কঠিন রোগ। কেননা মানুষ যখন কোন সিদ্ধান্ত নিতে যায় নিতে যায়, তখন তার মাথায় শুধু একটা জিনিশই শুধু ঘুরপাক খায় – “যদি এটা হয়?, যদি ওটা হয়?” আর এই যদির কারনেই পৃথিবীটা আজ অনেক ভালো কাজ থেকে বঞ্চিত। কেননা সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এইসব কারনে তখনই সিদ্ধান্তগুলো মাটিচাপা হয়ে যায়। ফলাফলের নেতিবাচক দিক নিয়ে চিন্তা করেই আর কাজটা হয়ে উঠে না। কাজ শুরু করার আগেউ যদি দিয়ে আমরা কাজটাকে গলা টিপে মেরে ফেলি। কিন্তু আপনি যদি একবার কোন কাজে ব্যর্থ হন, তাহলে এই ব্যাপার গুলো আর থাকবে না। কারন আপনি তখন জেনেই যাবেন যে এই বিষয়ে পুনরায় সিদ্ধান্ত নিলে কি কি হতে পারে। তাই তখম প্রস্তুতি নেয়ার সময় আর এইসন দ্বিধাবোধ কাজ করবে না
৮। আপনি অন্যের সাহায্য নিতে পারবেন
আমরা অনেক ক্ষেত্রেই অন্যের সাহায্য নিতে পারি না। এক্ষেত্রে আমাদের মধ্যে দ্বিধা ও লজ্জাবোধ কাজ করে। যার ফলে কোন প্রকার সহায়তা বা পরামর্শ ছাড়াই নিজের ভাবনা মত এগিয়ে যাই। যে কাজে আমাদের দক্ষতা নেই, সেই কাজে ভাবনা মোতাবেক এগিয়ে চলি। যার ফলে সেই কাজটায় সাফল্য আসে না। কিন্তু আমাদের বুঝতে হবে পরামর্শ থেকে সব সময়ই ভালো কিছু বেড়িয়ে আসে। আর একবার ব্যর্থ হওয়ার পরে এই বিষয়টি আমাদের উপলব্ধি হয়। তখন আপনি আপনার বন্ধু বা এই কাজে যারা দক্ষ তাদের কাছে সাহায্য চাইতে শিখে যাবেন। আর য়াদের সাথে মতবিনিময়ের কল্যানে আপনার কাজেত জন্য ভালো একটি নকশা তৈরী হবে। আর পথে হেটেই আপনি সাফল্যকে স্পর্শ করতে পারবেন।
৯। সম্ভাব্য ক্ষতি সম্পর্কে পূর্ব ধারনা চলে আসবে
কাজ যখন আমরা প্রথমবারে মত শুরু করি তখন আমাদের সেই কাজের সামনের বাধা সম্পর্কে কোন স্পষ্ট ধারনা থাকে না। ফলে আমরা জানি না আমরা কখন কোন বাধার সম্মুখীন হচ্ছি। যার ফলে আমরা হোচট খেয়ে থাকি। অপর দিকে যখন একবার কাজে ব্যর্থ হবেন তখন আপনার সামনের বাধা বা ক্ষতি সম্পর্কে পূর্ন ধারনা থাকবে। তখন আপনি পরের বার কাজটি করতে গেলে সতর্ক থাকতে পারবেন। বাধার সম্মুখীন হওয়ার আগে সেই বাধাকে মোকাবেলা করার প্রস্তুতি নিতে পারবেন। যার ফলে আপনার মাঝপথে হোচট খাওয়ার ভয় থাকবে না। এবং আপনি সাফল্যেত স্বাদ গ্রহন করতে পারবেন।
১০। নিজের সাফল্যকে বাহবা দিতে শিখবেন
অন্ধকার না থাকলে যেমন আলোর গুরুত্বটা বোঝা যেতে না ঠিক তেমনি জীবনে ব্যর্থতা না আসলে সাফল্যের মূল্য বোঝা যেত না। ব্যর্থতাই আসলে সাফল্যের আসল গুরুত্বটা তুলে ধরে। কেননা আপনি যদি জীবনে শুধু সাফল্যই অর্জন করেন তাহলে সেই সাফল্য আপনাকে আনন্দিত করবে না। সেই সাফল্যকে আপনার পানসে মনে হবে। কিন্তু আপনি যদি জীবনে ব্যর্থ হন তাহলে আপনি সাফল্যের আসল মজাটা উপভোগ করতে সক্ষম হবেন। আপনার সাফল্য আপনাকে আনন্দিত করবে আপনি পেরেছেন- এই আনন্দ আপনাকে উদ্বেলিত করবে। আপনার আত্মবিশ্বাস আসবে নিজের প্রতি। আর এই আত্মবিশ্বাস জোগাবে অনুপ্রেরণা আর এই অনুপ্রেরণার কল্যানে পরবর্তী কাজে আপনি সফলতা অর্জন করতে পারবেন।
একটি বিষয় মনে রাখবেন ব্যর্থতা আপনার জীবনে সাময়িক পীড়াদায়ক হলেও এটাকে কাজে লাগাতে পারলে ব্যর্থতাও আপনার জীবনে আশীর্বাদ নিয়ে আসবে। তাই ব্যর্থতায় হতাশ না হয়ে এর থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যান। তাহলে আপনার অবস্থানও হবে সাফল্যের স্বর্নশিখড়ে।
কিন্তু আমরা যদি ব্যর্থ হয়ে পথচলা বন্ধ না করি, সেই ব্যর্থতাকে কাজে লাগিয়ে, সেই ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যাই আপন উদ্যমে তাহলে বিজয় নিশ্চিত। তাই আমাদের প্রয়োজন ব্যর্থতাকে কাজে লাগানো। ব্যর্থ হওয়া মানেই সব শেষ হয়ে যাওয়া না এই কথাটা বুকেত বাপ পাশটায় চিরতরে স্থাপন করে রাখা। এই কথার বীজ বুকে রোপন করলে পরবর্তীতে এটাই গাছ হয়ে আপনাকে মিষ্টি ফল প্রদান করবে। তাই ব্যর্থ হলেই থেমে যাওয়া যাবে না। ব্যর্থতা হওয়ার ত্রুটিগুলোকে হাটিয়ে সেই ভুলগুলোকে শুধরে নিয়ে এগিয়ে চলতে হবে দুর্বার, তাহলে সাফল্যের হাসিটা আপনার মুখেই ফুটবে। তাই ব্যর্থতাও আপনাকে পৌছে দিতে পারে সাফল্যের শীর্ষচূড়ায়।
আপনি হয়ত ভাবছেন কিভাবে? আর যদি ঠিক এই প্রশ্নটা আপনার মনে ঘুরপাক খায় তাহলে আপনি ঠিক জায়গায় প্রবেশ করেছেন । তাহলে চলুন দেখে নেয়া যাক।
১। সিদ্ধান্ত গ্রহনে সাবধানতা আসবে
মানুষ শুধু শুধু ব্যর্থতা হয়না। ব্যর্থতার পিছনে অনেক কারন থাকে। তাই আপনি যখন ব্যর্থ হবেন, তখন আপনি বুঝতে পারবেন আপনার সিদ্ধান্তে ভুল ছিল। যেই সিদ্ধান্ত আপনি নিয়েছিলেন সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হওয়ার মত পরিস্থিতি তৈরী হয়নি বলে আপনি ব্যর্থতার স্বাদ গ্রহন করেছে। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের মত পরিবেশ তৈরী হলে অবশ্যই আপনাকে ব্যর্থতার তকমা কপালে লাগাতে হতো না। সুতরাং এই শিক্ষাটি আপনার কাজে লাগবে। কেননা ভবিষ্যৎ এ যখন পুনরায় নতুন করে সিদ্ধান্ত গ্রহন করতে যাবেন তখন এই ভুলের অভিজ্ঞতা আপনাকে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করাতে শেখাবে। আর যদি আপনি সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করেন তাহলে সেই কাজে সাফল্যর ছোয়া পাবেনই।
২। নিজেকে নতুন করে খুঁজে পাবেন
বাংলায় একটি বাক্য আছে, “আহত বাঘ আরো বেশি ভয়ঙ্কর” ঠিক তেমনি আপনি যখন একবার কোন কাজে ব্যর্থ হবেন, তখন আপনার মন মানসিকতা সেটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহন করবে। আপনার আত্মবিশ্বাসকে বাড়িয়ে তুলবে, অনুপ্রেরণা থাকনে তুঙ্গে। কেননা মানুষ যখন পাহাড়ে চড়তে গিয়ে ব্যর্থ হয়, তখন সে কিন্তু পাহাড় চড়া থামিয়ে দেয় না। বরং সেটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে বার বার চেষ্টা করতে থাকে। আর ঠিক একই জিনশটা ঘটবে এখানেও। একবার ব্যর্থ হওয়ায় আপনি আবার চেষ্টা করতে চাইবেন এবং নিজেকে প্রস্তুত করবেন। তখন দেখবেন নিজের মাঝে এমন কিছুই খুঁজে পাচ্ছেন যেটা আগে আপনি আবিষ্কার করেন নি। লুকায়িত এই সুপ্ত শক্তি যখন জেগে উঠবে তখন কোন শক্তিই আপনার আর সাফল্যের মাঝখানে দেয়াল হয়ে দাঁড়াতে পারবে না।
৩। বিপদে বন্ধু চিনতে পারবেন
কোন বন্ধু আমাদের ভালো চায় আর কোন বন্ধই বা আমাদের ভালো চায়! এই দুই বোঝা মুশকিল, কেননা এই দুই প্রকার মানুষের বাইরেটা ঠিক একই রকম শুধু ভেতরটা আলাদা। কিন্তু ভেতরটা তো আর ঢুকে দেখা যাবে না, তাই চেনারও উপায় নেই। কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই আপনি যখন একবার ব্যর্থ হবেন, তখন আপনার বিপদের বন্ধু চিনতে পারবেন। একজন মানুষ যখন ব্যর্থ হয় তখন অনেক কিছুই হারায় এবং যারা শুধু মাত্র আপনার সুসময়ের বন্ধু, আপনার ব্যর্থতার পর দেখবেন এদের কাউকেই পাশে পবেন না, সবাই আপনাকে একা রেখে চলে যাবে। অন্যদিকে আপনার এই খারাপ সময়ও যারা আপনার পাশে থাকবে, আপনাকে সাহস যোগাবে, উৎসাহ দিবে তারাই আসলে আপনার আসল বন্ধু। তারাই আপনার চলার যোগ্য এবং প্রকৃত সঙ্গি। তাদেরকে প্রায়োরিটি দিন, আপনার সাফল্যের পিছনে এদের অনেক সাহায্য থাকবে।
৪। আপনার দুর্বলতা বুঝতে পারবেন
প্রত্যেক ব্যর্থতার পিছনেই রয়েছে কোন না কোন দুর্বলতার ছায়া। সাফল্য আমাদের হাত ফসকে অকারনেই বেরিয়ে যায় না, তার পেছনে থাকে দুর্বলতার গল্প। পরীক্ষায় মানুষ সেই সাবজেক্টই ফেইল করে যেই সাবজেক্টে তারা দুর্বল। ঠিক তাই ব্যর্থতা আসে আমাদের দুর্বলতার কারনেই। কিন্তু আপনি যদি কোন উদ্যোগে প্রথবার ব্যর্থ হোন তাহলে আপনি আপনার দুর্বলতাটাকে ধরতে পারবেন। দুর্বলতা কোথায়, কোন ক্ষেত্রে সেইটা বুঝতে পারবেন। আপনার দুর্বলতাগুলো আপনার কাছে আয়নার মত পরিষ্কার হয়ে যাবে। আর তাই পরেরবার যদি কোন কাজে উদ্যোগের মনস্থির করেন তাহলে আপনার সেই দুর্বলতাগুলোকে কাটিয়ে উঠুন, দুর্বলতা নিয়ে ভাবুন এবং দুর্বলতাগুলোকে আপনার শক্তিতে রূপান্তর করুন। তাহলে দেখবেন সাফল্য আপনার জালে ধরা দিতে বাধ্য।
৫। আপনার অহংকারবোধ মুছে যাবে
ছোট বেলা থেকেই একটা কথা পড়ে আসছি যে “অহংকার পতনের মূল”। তাই অনেক ক্ষেত্রে আপনার ব্যর্থতার অন্যতম বড় কারন হয়ে দাঁড়ায় আপনার অহংকার বোধ। এই অহংকার বোধ আমাদের সাফল্যের রাস্তা থেকে ব্যর্থতার রাস্তায় প্রেরণ করে। কেননা একটি বিষয়ে যখন ধাপে ধাপে সাফল্য আসতে শুরু করে তখন মানুষের মাঝে অহংকার বোধ চলে আসে। আর এই অহংকার বোধই মানুষকে সামনের বাধাগুলো সম্পর্কে অন্ধ করে দেয়। যে কারনেই মানুষ মুখ থুবড়ে পরে । ফলশ্রুতি ব্যর্থতার তকমা কপালে লেপতে হয়। কিন্তু আপনি যদি প্রথমবার ব্যর্থ হন আপনি বুঝে যাবেন অহংকার পতনের মূল কারন আর তাহলে পরের বার কোন কাজে আপনাকে আর অহংকার স্পর্শ করবে না। যার কারনে আপনি সাফল্যের শিখড়ে পৌঁছে যাবেন।
৬। সমালোচনা গ্রহন করতে শিখবেন
সমালোচনা সবার জীবনেই আসে। সমালোচনার কবলে পড়েননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। সমালোচনা থাকবেই আর সত্য মেনে নিয়েই এগিয়ে যেতে হবে আমাদের। তবে সমালোচনা গ্রহন করতে পারা খুবই কঠিন কাজের মধ্যে একটি। সমালোচনা সইতে পারার মত মন মানসিকতা আমাদের মধ্যে অল্প মানুষেরই রয়েছে। কিন্তু আপনি যদি কোন কাজে ব্যর্থ হন, তখন আপনা আপনিই সমালোচনা গ্রহন করার মানসিকতা আপনার মাঝে চলে আসবে। তবে আপনাকে সমালোচনার নেতিবাচক দিক না দেখে সমালোচনার ইতিবাচক দিকটা দেখতে হবে। তাহলেই কেল্লাফতে! কেননা তখন মানুষ আপনার যত বেশি সমালোচনা করবে, আপনি ততই নিজেকে নিখুঁত ভাবে গড়ে তুলতে পারবেন, জীবনেত সিদ্ধান্তগুলো আরো নিখুঁত হবে। মনে রাখবেন, সমালোচকগন ভালো মন্দের চিন্তা আপনার হয়ে করছে বলেই আপনার মন্দদিকটা নিয়ে তারা সমালোচনা করছে। তাদের সমালোচনা থেকে যদি আপনি আপনার মন্দ দিকটা মুছে ফেলতে পারেন তাহলে আপনার সাফল্য একেবারেই নিশ্চিত।
৭। “যদি”-র ঘুরপাক বন্ধ হবে
যদি” আমাদের একটা কঠিন রোগ। কেননা মানুষ যখন কোন সিদ্ধান্ত নিতে যায় নিতে যায়, তখন তার মাথায় শুধু একটা জিনিশই শুধু ঘুরপাক খায় – “যদি এটা হয়?, যদি ওটা হয়?” আর এই যদির কারনেই পৃথিবীটা আজ অনেক ভালো কাজ থেকে বঞ্চিত। কেননা সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এইসব কারনে তখনই সিদ্ধান্তগুলো মাটিচাপা হয়ে যায়। ফলাফলের নেতিবাচক দিক নিয়ে চিন্তা করেই আর কাজটা হয়ে উঠে না। কাজ শুরু করার আগেউ যদি দিয়ে আমরা কাজটাকে গলা টিপে মেরে ফেলি। কিন্তু আপনি যদি একবার কোন কাজে ব্যর্থ হন, তাহলে এই ব্যাপার গুলো আর থাকবে না। কারন আপনি তখন জেনেই যাবেন যে এই বিষয়ে পুনরায় সিদ্ধান্ত নিলে কি কি হতে পারে। তাই তখম প্রস্তুতি নেয়ার সময় আর এইসন দ্বিধাবোধ কাজ করবে না
৮। আপনি অন্যের সাহায্য নিতে পারবেন
আমরা অনেক ক্ষেত্রেই অন্যের সাহায্য নিতে পারি না। এক্ষেত্রে আমাদের মধ্যে দ্বিধা ও লজ্জাবোধ কাজ করে। যার ফলে কোন প্রকার সহায়তা বা পরামর্শ ছাড়াই নিজের ভাবনা মত এগিয়ে যাই। যে কাজে আমাদের দক্ষতা নেই, সেই কাজে ভাবনা মোতাবেক এগিয়ে চলি। যার ফলে সেই কাজটায় সাফল্য আসে না। কিন্তু আমাদের বুঝতে হবে পরামর্শ থেকে সব সময়ই ভালো কিছু বেড়িয়ে আসে। আর একবার ব্যর্থ হওয়ার পরে এই বিষয়টি আমাদের উপলব্ধি হয়। তখন আপনি আপনার বন্ধু বা এই কাজে যারা দক্ষ তাদের কাছে সাহায্য চাইতে শিখে যাবেন। আর য়াদের সাথে মতবিনিময়ের কল্যানে আপনার কাজেত জন্য ভালো একটি নকশা তৈরী হবে। আর পথে হেটেই আপনি সাফল্যকে স্পর্শ করতে পারবেন।
৯। সম্ভাব্য ক্ষতি সম্পর্কে পূর্ব ধারনা চলে আসবে
কাজ যখন আমরা প্রথমবারে মত শুরু করি তখন আমাদের সেই কাজের সামনের বাধা সম্পর্কে কোন স্পষ্ট ধারনা থাকে না। ফলে আমরা জানি না আমরা কখন কোন বাধার সম্মুখীন হচ্ছি। যার ফলে আমরা হোচট খেয়ে থাকি। অপর দিকে যখন একবার কাজে ব্যর্থ হবেন তখন আপনার সামনের বাধা বা ক্ষতি সম্পর্কে পূর্ন ধারনা থাকবে। তখন আপনি পরের বার কাজটি করতে গেলে সতর্ক থাকতে পারবেন। বাধার সম্মুখীন হওয়ার আগে সেই বাধাকে মোকাবেলা করার প্রস্তুতি নিতে পারবেন। যার ফলে আপনার মাঝপথে হোচট খাওয়ার ভয় থাকবে না। এবং আপনি সাফল্যেত স্বাদ গ্রহন করতে পারবেন।
১০। নিজের সাফল্যকে বাহবা দিতে শিখবেন
অন্ধকার না থাকলে যেমন আলোর গুরুত্বটা বোঝা যেতে না ঠিক তেমনি জীবনে ব্যর্থতা না আসলে সাফল্যের মূল্য বোঝা যেত না। ব্যর্থতাই আসলে সাফল্যের আসল গুরুত্বটা তুলে ধরে। কেননা আপনি যদি জীবনে শুধু সাফল্যই অর্জন করেন তাহলে সেই সাফল্য আপনাকে আনন্দিত করবে না। সেই সাফল্যকে আপনার পানসে মনে হবে। কিন্তু আপনি যদি জীবনে ব্যর্থ হন তাহলে আপনি সাফল্যের আসল মজাটা উপভোগ করতে সক্ষম হবেন। আপনার সাফল্য আপনাকে আনন্দিত করবে আপনি পেরেছেন- এই আনন্দ আপনাকে উদ্বেলিত করবে। আপনার আত্মবিশ্বাস আসবে নিজের প্রতি। আর এই আত্মবিশ্বাস জোগাবে অনুপ্রেরণা আর এই অনুপ্রেরণার কল্যানে পরবর্তী কাজে আপনি সফলতা অর্জন করতে পারবেন।
একটি বিষয় মনে রাখবেন ব্যর্থতা আপনার জীবনে সাময়িক পীড়াদায়ক হলেও এটাকে কাজে লাগাতে পারলে ব্যর্থতাও আপনার জীবনে আশীর্বাদ নিয়ে আসবে। তাই ব্যর্থতায় হতাশ না হয়ে এর থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যান। তাহলে আপনার অবস্থানও হবে সাফল্যের স্বর্নশিখড়ে।
0 Comments