একটি বাড়ি তৈরী করতে কত খরচ হয় তা জানতে গেলে যে তথ্য গুলো প্রয়োজন

এই বাড়িটি করতে কত টাকা খরচ হতে পারে?

এই প্রশ্নটির সম্মুখিন হতে হয় আমাদের প্রতি নিয়ত। এই প্রশ্নটির উত্তরের জন্য বেশ কিছু তথ্য জানার প্রয়োজন হয়। কিন্তু কোন প্রশ্নকারিই সেই তথ্যগুলো ভালো করে দিতে পারে না। অথচ তারা আমাদের কছে খুবই এক্সাক্টিলি একটা উত্তর আশা করে। অনেকেই এমনটাও বলে যে আপনি কেমন ইঞ্জিনিয়ার হয়েছেন যে খরচটা বলতে পারেন না?

তাই আসুন জেনে নেই এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য যে তথ্যেগুলোর প্রয়োজন হয়

১) বাড়ির আয়তন:- আপনার বাড়ির আয়তনের সাথে খরচ জড়িত। এটা খুবই সিম্পল একটা সুত্র। আপনি বাড়ি যত বড় করবেন খরচ তত বেশি হবে। যত ছোট করবেন বাড়ির খরচও কমবে। জমির পরিমানের উপরে নির্ভর করে বাড়ির আয়তন নির্ধরান করা উচিত। ঢাকা বা বিভাগিয় শহরগুলোতে কর্তৃপক্ষের কিছু নিয়মকানুন থাকে। সেগুলো মেনে জমির পরিমান নির্ধারন করা হয়। মানে জমির একটা নির্দিস্ট পরিমান অংশ ছেড়ে তার পরেই বাড়ি করতে হবে।

২) উচ্চতা :- বাড়িটি কত তলা হচ্ছে সেটাও একটা গুরুত্বপুর্ন বিষয়। আপনার ফ্লোর স্পেস কত স্কয়ারফিট হচ্ছে সেটা নির্ভর করে কত তলা হচ্ছে সেটার উপরে। প্রতিটি ফ্লোরে আলাদা আলাদা করে ফিনিশিং এর মালামাল এর আলাদা আলাদা হিসেব হবে। এটার উপরে অনেক সময় ফাউন্ডেশন নির্ভর করে। তিন থেকে চার তলা পর্যন্ত দেখা যা্য় ফুটিং ফাউন্ডেশনে হয়ে যায় কিন্তু ৬ থেকে ৭ তলার উপরে গেলে পাইলিং বিবেচনা করা হয়। এই দুই ফাউন্ডেশনের মধ্যে খরচের বিস্তর ব্যাবধান থাকে।

৩) ফাউন্ডেশন:- মাটির গুনাগুন বিবেচনা না করে ফাউন্ডেশনের সিদ্ধান্ত নেয়া ঠিক না। অনেকেই বলে ভাই আমার পাইলিং লাগবে। কিভাবে বুঝলেন? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বললেন আমাকে মিস্ত্রি এবং এলাকাবাসি বলেছে। মিস্ত্রি আর এলাকাবাসি মাটির গুনাগুন পরিক্ষা করেনি। তারা এটা আন্দাজে বলছে। অথচ এই কথাটা বলবে সয়েল ইঞ্জিনিয়ার এবং স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ার। আর এখানেই খরচের অনেকটা নির্ভর করে।

৪) ফিনিশিং:- সর্বশেষ বিষয় হচ্ছে আপনার বাড়ির ফিনিশিং কেমন হচ্ছে সেটা আপনাকে বুঝতে হবে। এর আগে বুঝতে হবে বাড়িটি কি কাজে ব্যাবহ্রত হচ্ছে। যেমন ডুপ্লেক্স বাড়ির ফিনিশিং খরচ একটু বেশি হয় কিন্তু ফ্লাট বাড়ির খরচ সেই তুলনায় কম করলেই হয়। ঢাকাতে যেই বাড়ি গুলো নির্মিত হচ্ছে সেগুলো বেশিরভাগই হয় ভারা দেয়া জন্য। এগুলো প্রায় একই রকম খরচ হয়। কিন্তু নিজে যখন নিজের জন্য বাড়ি করতে যাবেন অবশ্যই সেখানে একই রকমের টাইলস, ফিটিংস, ফিক্সার, রং ব্যাবহার করবেন না?
.
ফিনিশিং এর খরচ অনেক সময় সিভিল কাজের চেয়ে বেশি হয়ে যায়। তাই একটা বাড়ির খরচের বিষয়টা দুটি ভাগে বিভক্ত করুন।
.
১) সিভিল কাজ 
-ফাউন্ডেশন
-গ্রেড বীম
-ছাদ ঢালাই
-ওয়ালের গাথুনির কাজ
- প্লাস্টারের কাজ
.
২) ফিনিশিং কাজ।
- টাইলস
- স্যানিটারি (ফিটিংস এবং ফিক্সার)
- ইলেকট্রিক এর কাজ
- রং এর কাজ
- থাই গ্লাস (জানালা)
- দরজা
- গ্রিল এর কাজ(রেলিং সহ)
- কিচেন ফিটিংস
- ফার্নিচার
.
এবার আপনার বাড়ির নির্মান এর খরচ বের করুন। দেখুন আপনি কোন কোন স্থানে কিকি মালামাল ব্যাবহার করছেন এবং সেগুলো কি দামের ব্যাবহার করছেন। যেমন উদাহরনসরুপ টাইলস ধরুন। বাজারে ৬০ টাকা থেকে শুরু করে ৬০০ টাকা পর্যন্ত টাইলস আছে। এখন আপনার বাজেটের উপর ভিত্তি করে আপনাকে টাইলস এর দাম নির্ধারন করে কিনতে হবে। আর এখানে আপনার বাড়ির মুল খরচ নির্ভর করে। সেই তুলনায় সিভিল কাজে আসলে তেমন খরচ হয় না। তাই নেক্সট টাইম যখনই কাউকে জিজ্ঞেস করবেন আপনার বাড়ি বানাতে কত খরচ হতে পারে অনুগ্রহ করে আগে নিজে উপরের বিষয়গুলোর সিদ্ধান্ত নিয়ে নিন।
.
মনে করুন নিচের যেকোন একটি বাড়ি। এই বাড়িগুলোর আয়তন কম বেশি ১৬০০ স্কয়ার ফিট। এগুলো ২ তলা উচু। ডুপ্লেক্স টাইপ বাড়ি। ফাউন্ডেশন মাত্র ৩ তলার। এখন এই বাড়িগুলোর খরচ কেমন হতে পারে। তাহলে প্রথমেই বাড়িটির খরচ দুই ভাবে বিভক্ত করি। প্রথমত সিভিল কাজের খরচ হিসেব করলে দেখা যাবে খুব বেশি হলে ২০ থেকে 25 লক্ষ টাকার মতন খরচ পরবে। এবার আসুন ফিনিশিং কাজে। এখানেই নির্ভর করবে খরচের হিসেব। এই ফিনিশিং কাজে বাড়ির মালিক চাইলে আরো ২০ লক্ষ টাকার মধ্যেই শেষ করতে পারেন অথবা আরো ৫০ লক্ষও খরচ করতে পারেন। পুরোটা নির্ভর করবে তার বাজেট এবং রুচির উপরে।


লেখাটি অনলাইন থেকে নেওয়া হয়েছে...

Post a Comment

0 Comments