সময়ের পরিবর্তনে সবকিছুই প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে উঠছে। আর তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে আমরা ঘরে বসেই নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী পণ্য ক্রয়-বিক্রয় থেকে শুরু করে যে কোনো সেবা নিতে পারি। ডিজিটাল মিডিয়া ও ডিজিটাল প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে অনলাইন/ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্য বা সেবার বিক্রয় কাজ পরিচালনা করাই হচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিং। আর ওয়েব দুনিয়ায় মার্কেটিং করার জন্য যত ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় এগুলোই হচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিং। ডিজিটাল মার্কেটিং কী? কীভাবে করতে হয়? এর প্রয়োজনীয়তা কতটুকু এসব নিয়ে ধারাবাহিক আয়োজনের প্রথমপর্ব। লিখেছেন ডিজিটাল মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ বিএনএস বাহার
ডিজিটাল প্রযুক্তি বা ইন্টারনেট ব্যবহার করে সার্ভিসের প্রচারণা চালানোকে ডিজিটাল মার্কেটিং বলে। যেমন- আপনি ফেসবুক ব্রাউজ করার সময় কিছু স্পন্সর্ড পোস্ট দেখতে পান অথবা কোনো শব্দ ব্রাউজারে লিখে গুগলে সার্চ দিলে নিচে অ্যাড দেখায়। এগুলো ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের অন্তর্ভুক্ত। সঠিক জায়গায় এবং সঠিক সময়ে ক্রেতার সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করাই হচ্ছে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের মূল লক্ষ্য।
ডিজিটাল মার্কেটিং কেন প্রয়োজন?
আমাদের বর্তমান যুগ তথ্য-প্রযুক্তির যুগ। এক সময় পৃথিবীতে কাগজ থাকবে না। সবাই ইন্টারনেটে নিউজ পড়বে। প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ও ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখে বাংলাদেশসহ বিশ্বের নামকরা সব গণমাধ্যম প্রিন্ট ভার্সনের পাশাপাশি অনলাইন ভার্সন খুব ভালোভাবে শুরু করেছে। ওয়েবসাইটে রেগুলার নিউজ পাবলিশ করছে। ওয়েবসাইটে পাঠক আনতে ফেসবুকে নিউজ শেয়ার দিচ্ছে। ওয়েবসাইটের এসইও অপটিমাইজেশন করছে।
অনলাইন গণমাধ্যমে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রগুলো-
১. সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন
২. এসইও ফ্রেন্ডলি নিউজ রিপোর্টিং
৩. সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং
৪. সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং ইত্যাদি।
* সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও)
এসইও এমন একটা পদ্ধতি যার মাধ্যমে ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিনে রেঙ্ক করানো হয়। অর্থাৎ সার্চ ইঞ্জিনে নির্দিষ্ট এক বা একাধিক কিওয়ার্ড দ্বারা সার্চ রেজাল্টে ওয়েবসাইটটিকে প্রথমে প্রদর্শন করার প্রক্রিয়াটা হচ্ছে এসইও। সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও) নিয়ে কাজ করতে গেলে সবার আগে জানতে হবে সার্চ ইঞ্জিন ও সার্চ রেজাল্ট কী।
সার্চ ইঞ্জিন : সার্চ ইঞ্জিন হল ওয়েব দুনিয়ায় যে কোনো তথ্য বা ছবি খুঁজে বের করার প্রযুক্তিমাধ্যম। সার্চ ইঞ্জিনগুলো ওয়েবের প্রায় সব ওয়েবসাইটের ইনডেক্সগুলোর তথ্য সংগ্রহ করে এবং ইউজারের সামনে তা প্রদর্শন করে। সেরা ৫টি সার্চ ইঞ্জিন হল- গুগল, ইয়াহু, বিং, আস্ক ও বাইডু।
সার্চ রেজাল্ট : ধরুন আপনি গুগলে একটি কিওয়ার্ড লিখে সার্চ করলেন- এই কিওয়ার্ড লিখে গুগলে সার্চ দেয়ার পর অনেক ওয়েবসাইট চলে আসবে। এটিই হল সার্চ রেজাল্ট।
এসইও’র কাজ সাধারণত তিন ধাপে করা হয়। যেমন-
১. অনপেজ এসইও অপটিমাইজেশন
২. অফপেজ এসইও অপটিমাইজেশন
৩. টেকনিক্যাল এসইও অপটিমাইজেশন
অনপেজ এসইও অপটিমাইজেশন : অনপেজ এসইও অপটিমাইজেশন বা ওয়েবসাইটের ভেতরে অপটিমাইজেশন। যেমন- মেটা টাইটেল, মেটাডেসক্রিপশন, ব্যবহৃত ছবিগুলোর টাইটেল, ট্যাগ ও ক্যাপশন যথাযথ ব্যবহার, ওয়েবসাইটের বিভিন্ন পেজের মধ্যে ইন্টারনাল লিংকিং ইত্যাদি। নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হল-
কিওয়ার্ড রিসার্চ : কিওয়ার্ড হচ্ছে সার্চিং ওয়ার্ড। আপনি যদি কোনো বিষয়ে জানতে চান, জানার জন্য অর্থবোধক যা লিখে গুগলে সার্চ করবেন সেটি হচ্ছে কিওয়ার্ড। কিওয়ার্ড রিসার্চ এসইওর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ধাপ। কিওয়ার্ড রিসার্চ করার জন্য অনেক ফ্রি এবং পেইড টুল পাওয়া যায়। কিওয়ার্ড নির্বাচনের ক্ষেত্রে কিছু বিষয় লক্ষ রাখতে হবে-
১. কান্ট্রি টার্গেটিং
২. সার্চ ভলিউম
৩. কিওয়ার্ড ডিফিকাল্টি ইত্যাদি।
ওয়েবসাইট ও কাজের ব্যাপ্তির ওপর নির্ভর করে ফ্রি ও পেইড সার্ভিস গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
কিওয়ার্ড ডেনসিটি : কিওয়ার্ড ডেনসিটি হচ্ছে কিওয়ার্ডের অনুপাত। যেমন- আপনি একটি কন্টেন্ট লিখলেন ১০০ শব্দের। তার মধ্যে আপনি তিনবার কিওয়ার্ড প্রয়োগ করলেন, তা হলে কিওয়ার্ড ডেনসিটি ৩%।
মেটা টাইটেল ট্যাগ : মেটা টাইটেল ট্যাগ হচ্ছে একটি ওয়েবপেজের এইচটিএমএল ট্যাগ। আপনি যখন সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ করেন, তখন সেটি দেখা যায়। মেটা টাইটেল ট্যাগে ব্র্যান্ড কিওয়ার্ড ইউজ করা উচিত।
মেটা ডেসক্রিপশন ট্যাগ : মেটা ডেসক্রিপশন ট্যাগ হচ্ছে একটি ওয়েবপেজের সামারি এইচটিএমএল ট্যাগ। সামারি দেখে ভিজিটর দ্রুত বুঝতে পারে যে ওয়েবসাইটটি কোনো ধরনের কন্টেন্ট দিচ্ছে। মেটা টাইটেল ট্যাগের নিচে থাকে ইউআরএল, তারপর মেটা ডেসক্রিপশন ট্যাগ।
এসইও ফ্রেন্ডলি ইউআরএল : এসইও ফ্রেন্ডলি ইউআরএল বলতে বুঝায়- ১. ইউআরএলে এ প্রশ্নবোধক চিহ্ন (?), আন্ডার স্কোর (থ), স্টার মার্ক (*) ইত্যাদি থাকবে না। ২. ইউআরএল ছোট হবে। ৩. ওয়েবসাইট পোস্টের ইউআরএল স্ট্রাকচার হবে- রুট ডোমেইন+ পোস্ট হেডলাইন।
রোবট টেক্সট : রোবট টেক্সটের মাধ্যমে গুগলসহ অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনের রোবটকে ওয়েবসাইটের কিছু ওয়েবপেজ ইনডেক্স অথবা কিছু ওয়েবপেজ ডি-ইনডেক্স করে রাখতে পারবেন। অর্থাৎ আপনি যে ওয়েবপেজগুলোর এক্সেস গুগলসহ অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনকে দেবেন, শুধু সেই পেজগুলোতে সার্চ ইঞ্জিনের রোবট যেতে পারবে এবং ইনডেক্সও করতে পারবে।
সাইট ম্যাপ : গুগলকে সুনির্দিষ্ট তথ্য দেয়ার জন্য পোস্টের সাইট ম্যাপ ক্রিয়েট করতে হয়।
ইমেজ অলটার টেক্সট : ওয়েবসাইটের ফটো কন্টেন্টে যথাযথ ইমেজ অলটার টেক্সট ব্যবহার করতে হবে। ইমেজ আপলোড করার ক্ষেত্রে ইমেজের সাইজ ও ফাইল নেইম ঠিক করতে হবে। হাই রেজুলেশনের ইমেজ ব্যবহার করা ভালো।
ফেভিকন : ওয়েবসাইটের জন্য ইউনিক ফেভিকন ক্রিয়েট করতে হবে, যা আপনার ব্র্যান্ডের ভেলু বাড়াবে। ফেভিকন সাইজ ১৬ পিক্সেল বাই ১৬ পিক্সেল দিতে পারেন।
ফ্ল্যাশ ফাইল : সাইটে কোনো ধরনের ফ্ল্যাশ ফাইল ব্যবহার না করাই ভালো। ফ্ল্যাশ ফাইলের পরিবর্তে জিফ ফাইল ব্যবহার করতে পারেন।
ইন্টারনাল লিংক : এক কন্টেন্ট থেকে অন্য কন্টেন্টে লিংক করাটাই হচ্ছে ইন্টারনাল লিংক। ইন্টারনাল লিংক ব্যবহার করার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে-
১. ইন্টারনাল লিংক যাতে সিমিলার কন্টেন্ট অথবা কিওয়ার্ডের সঙ্গে করা হয়।
২. সাধারণত কন্টেন্টের শেষের দিকে ইন্টারনাল লিংক করলে ভালো। এতে কন্টেন্ট পড়ার সময় পাঠকের মনোযোগ ঠিক থাকে।
ব্রোকেন লিংক : যে লিংকে গেলে কন্টেন্ট খুঁজে পাওয়া যায় না সেটায় ব্রোকেন লিংক। সাইটে কোনোভাবেই ব্রোকেন লিংক রাখা যাবে না। সাইট থেকে ব্রোকেন লিংক রিমুভ করতে হবে।
ডেড লিংক : যে লিংকে গেলে কোনো কিছুই খুঁজে পাওয়া যায় না সেটি ডেড লিংক। সাইটে ডেড লিংক কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
এইচ-১ ট্যাগ : এইচ-১ ট্যাগ হচ্ছে একটি এইচটিএমএল ট্যাগ। কিওয়ার্ড অনুযায়ী সাইটে এইচ-১ ট্যাগের যথাযথ ব্যবহার করতে হবে।
এইচটিএমএল পেজ সাইজ : যতদূর সম্ভব এইচটিএমএল পেজ সাইজ কমাতে হবে, এতে করে সাইটের লোডিং টাইম ফাস্ট হবে। ইউজার অ্যাঙ্গেজমেন্ট বাড়বে।
সূত্র - যুগান্তর
0 Comments