প্রথমেই যে ৪টি ধাপ পার হতে হয় জীবনে স্বপ্ন সফল করতে

স্বপ্ন সফল হতে লাগে সময়, আর পরিশ্রম। প্রতিটি মানুষেরই তার জীবন নিয়ে একটি স্বপ্ন থাকে। কিন্তু সবাই তা সফল করতে পারে না। এর পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। কিন্তু প্রধান কারণটি হল, স্বপ্ন দেখার পর তা নিয়ে গুছিয়ে পরিকল্পনা না করা, সেইসাথে নিজের যোগ্যতাকে পুরোপুরি বুঝতে না পারা।

আপনি যে স্বপ্নই দেখেন না কেন, সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য আপনাকে গুছিয়ে পরিকল্পনা ও কাজ করতে হবে। সপ্ন সফল করতে যদি একটি গোছানো পরিকল্পনা আপনার থাকে – তবে আপনার আত্মবিশ্বাসের অভাব হবে না।

আর সেই পরিকল্পনা করতে প্রয়োজন নিজের ক্ষমতা ও দক্ষতা সম্পর্কে ধারণা রাখা, এবং নিজেকে প্রতিনিয়ত আপডেট করা। আপনি যখন নিজের ব্যাপারে পরিস্কার হয়ে যাবেন – তখন স্বপ্ন পূরণের রাস্তা পরিস্কার দেখতে পাবেন।

একটু বুঝিয়ে বলি, আপনি হয়তো কৃষি ব্যবসা করতে চান। এখন কৃষির সবকিছু আপনার পক্ষে জানা সম্ভব নয়। একা সবকিছু করাও সম্ভব নয়। এখন আপনাকে বের করতে হবে – কৃষির ক্ষেত্রে আপনার কোন গুণটি সবচেয়ে বেশি কাজে লাগতে পারে। আপনার কোন প্রতিভা দিয়ে আপনি এই ব্যবসাকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করতে পারবেন। – সেটা জানা হয়ে গেলে আপনি বাকি কাজগুলো কাকে দিয়ে বা কিভাবে করাবেন, কি কি নতুন জিনিস আপনাকে শিখতে হবে – এসব খুব ভালো ভাবে বুঝতে পারবেন। এবং পুরো পরিকল্পনাটাও সুন্দর ভাবে সাজাতে পারবেন।

তাই স্বপ্ন দেখে সফল হতে হলে প্রথম যে ৪টি ধাপ পার হতে হয় – তা হল নিজের ট্যালেন্ট বা গুণকে পুরোপুরি চেনার ও কাজে লাগানোর প্রক্রিয়া।চলুন তাহলে জেনে নিই, যে ৪টি ধাপ পার করা জরুরী:
০১. নিজের ট্যালেন্ট খুঁজে বের করুন
মজার ব্যাপার হল, প্রতিটি ক্ষেত্রেই সব ধরনের মানুষ দরকার হয়। একটি ব্যবসা চালাতে গেলে যেমন হিসেবে পাকা লোক দরকার, তেমনি দরকার ক্রিয়েটিভ আইডিয়াবাজ, ঘন্টার পর ঘন্টা গাধার মত খাটনি করা কর্মী – এমন সব ধরনের লোক নিয়েই একটি টিম বা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। আপনার স্বপ্ন যেটাই হোক না কেন – আপনার কোনও না কোনও ট্যালেন্ট সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়নের কাজে লাগবে।
এমনকি শুধু মানুষের সামনে কথা বলার সাহস একটি বড় ট্যালেন্ট। আবার শরীরে অনেক শক্তি থাকাও এক প্রকার ট্যালেন্ট।
নিজের সত্যিকার ট্যালেন্ট খুঁজে বের করার জন্য নিজেকে প্রশ্ন করুন, “কোন কাজটি করতে আমি সবচেয়ে বেশি পছন্দ করি?”, “কোন কাজে আমি ঘন্টার পর ঘন্টা কাটিয়ে দিলেও কিছু মনে হয় না (অবশ্যই কাজের কাজ, টিভি দেখা বা গেম খেলা কোনও কাজ নয়), “কোন কাজ করে আমি সবচেয়ে বেশি প্রশংসা পেয়েছি?”
আপনি হয়তো ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখেন – কিন্তু কোন বিষয়ে ইঞ্জিনিয়ার হবেন – তা এখনও বুঝতে পারছেন না। ভেবে দেখুন তো, আপনার কি গাড়ি বেশি ভালো লাগে, না যন্ত্রপাতির সার্কিট বেশি ভালো লাগে? – গাড়ি হলে মেকানিক্যালে যান, সার্কিট হলে ইলেক্ট্রিক্যালে যান। এভাবে যে কোনও ক্ষেত্রে একটু চিন্তা করলেই নিজের ট্যালেন্ট আর আগ্রহের ব্যাপারটা বের হয়ে আসে।

যে কাজ করে আপনি আনন্দ পান, যে কাজ করতে গেলে আপনার কষ্ট হলেও খারাপ লাগে না, যা করতে গিয়ে অন্যদের কাছে সবচেয়ে বেশি প্রশংসিত হয়েছেন – সে কাজেই সাধারণত আপনার মূল ট্যালেন্ট লুকিয়ে থাকে।

০২. নিজের স্বপ্নের কোথায় আপনার ট্যালেন্ট কাজে লাগাবেন – খুঁজে বের করুন

আপনি যখন নিজের ট্যালেন্ট বা প্রতিভার ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে যাবেন – তখন আবারও নিজের স্বপ্নের দিকে ফোকাস করুন।
ধরুন, আপনার ট্যালেন্ট হল লেখালিখি। আর আপনার স্বপ্ন হল মোটর পার্টস এর ব্যবসা করা। আপাত দৃষ্টিতে যদিও মনে হচ্ছে আপনার ট্যালেন্টের সাথে এই ব্যবসার কোনও সম্পর্ক নেই – কিন্তু আসলে আছে।

আপনি যদি মোটর পার্টস বিষয়ে পড়াশুনা করতে করতে জ্ঞান বাড়িয়ে নেন, এবং তারপর এগুলো নিয়ে লিখতে শুরু করেন – তবে সেই ইনডাস্ট্রিতে আপনার একটা গ্রহণযোগ্যতা তৈরী হবে। বিভিন্ন মোটর পার্টস এর রিভিউ লিখতে থাকুন, এবং ওয়েবসাইট ও সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করতে থাকুন। গ্রুপ এবং পেজগুলোতে নিয়মিত আপনার লেখা রিভিউ যেতে থাকলে একটা সময়ে আপনি ইনডাস্ট্রির লোকজনের কাছে পরিচিত হয়ে উঠবেন।

সেইসাথে, মোটর পার্টস এর মার্কেটিং নিয়ে পড়াশুনা করুন। বিষয়টির বিভিন্ন দিক নিয়ে লেখালিখি করুন। এভাবে চলতে চলতে একটা সময়ে ঠিকই কমিউনিটিতে একটি জায়গা করে নিতে পারবেন। বর্তমানে যে কোনও ব্যবসার জন্য ইন্টারনেট মার্কেটিং খুব গুরুত্ব পূর্ণ। আর ইন্টারনেট মার্কেটিং এর একটি অতি প্রয়োজনীয় অংশ হল রিভিউ ও মার্কেটিং কপি লেখা। রিভিউ ও মার্কেটিং কপি লেখা শিখলে এমনিতেই ইন্ডাস্ট্রিতে আপনার গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। সেইসাথে ইন্ডাস্ট্রির অনেক মানুষের সাথে আপনার জানাশোনা হবে। ব্যবসার বিষয়ে আরও ভালো ভাবে শিখতে পারবেন, এমনকি পার্টনারও পেয়ে যেতে পারেন।

এভাবে, আপনার যে ট্যালেন্টই থাক না কেন, আপনি চাইলে সেই ট্যালেন্টকে কাজে লাগিয়ে যে কোনও স্বপ্ন সফল করতে পারবেন।

০৩. স্বপ্ন সফল করতে ট্যালেন্টের যত্ন নিন

পৃথিবীর সবচেয়ে প্রতিভাবান মানুষটিরও প্রতিভাকে আরও শানিত করার সুযোগ আছে। এমনকি লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চির মত জিনিয়াস কেও প্রতিদিন তাঁর ট্যালেন্ট গুলো প্রাকটিস করতে হত।
পৃথিবীর অন্যতম সেরা মোটিভেশনাল স্পিকারদের একজন এবং সাবেক জনপ্রিয় আমেরিকান রাজনীতিবিদ লেস ব্রাউনের মতে, পৃথিবীর সেরা পারফর্মারটিও যদি এক সপ্তাহ প্রাকটিস না করে, তবে সে নিজে তা বুঝবে, দুই সপ্তাহ প্রাকটিস না করলে সমালোচকরা বুঝবে, তিন সপ্তাহ না করলে খোদ দর্শক বুঝে যাবে।

কাজেই, আপনার ট্যালেন্ট যেটাই হোক না কেন – প্রতিদিন তাকে আরও শক্তিশালী করতে হবে।

প্রতিদিন চিন্তা করুন, আপনি যে স্বপ্ন পূরণ করতে চান, সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য আপনি যথেষ্ঠ দক্ষ হয়েছেন কিনা। আপনার ট্যালেন্টকে আপনি ততটা শক্তিশালী করতে পেরেছেন কি না।

হয়তো আজ আপনি কোনও কাজ ভালোভাবে করতে পারলেন না – কিন্তু কাল বা পরশু ঠিকই পারবেন – যদি প্রাকটিস করতে থাকেন।

নিজের ট্যালেন্টকে দক্ষতা বানিয়ে ফেলুন, তাহলে আপনার আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে যাবে। অনেক বেশি নিশ্চিত হয়ে আপনি স্বপ্ন সফল হওয়ার দিকে এগিয়ে যাবেন।

৪. শিডিউলের মধ্যে থেকে কাজ করার অভ্যাস করুন

যে কোনও স্বপ্ন সফল হতে নিয়ম মেনে কাজ করার অভ্যাস করা জরুরী। আপনি যখন নিজের ট্যালেন্ট এর বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে যাবেন এবং ট্যালেন্টকে দক্ষতা বানানোর কাজ করবেন – অবশ্যই তাকে একটি রুটিনে বাধার চেষ্টা করবেন।

আজ পর্যন্ত যত মানুষ নিজের চেষ্টায় সফল হয়েছেন, সেইসব সফল ব্যক্তিদের রুটিন ছিল। প্রতিটি কাজের জন্য নির্দিষ্ট সময় বাঁধা ছিল। যে সময়ে তাঁরা শুধু সেই কাজটিই করেছেন, বা করেন।

স্বপ্ন সফল হতে গেলে রুটিনের কোনও বিকল্প নেই। যখন যে কাজের সময়, তখন শুধুই সেই কাজ করবেন। প্রয়োজনে মোবাইল বন্ধ রাখবেন। সোশ্যাল মিডিয়ার ধারে কাছে যাবেন না।

এভাবে একাগ্র মনে ডিপ ওয়ার্ক করার অভ্যাস একবার হয়ে গেলে যখন স্বপ্ন পূরণের প্রক্রিয়া শুরু করবেন – তখন আপনার অনেক সুবিধা হবে। কোনওকিছু যদি আপনার সময় নষ্ট করে, বা স্বপ্ন পূরণের প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করে – তাকে সরাসরি এড়িয়ে যান। ‘না’ বলতে শিখুন। একবার লক্ষ্য ঠিক করে ফেলে সেই লক্ষ্য থেকে এক মূহুর্তের জন্যও সরবেন না।

নিজেকে কঠোর নিয়মে বাঁধতে না পারলে, এবং স্বপ্ন সফল হওয়ার জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে না পারলে স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে।

পরিশিষ্ট:
প্রতিটি বড় স্বপ্ন দেখা মানুষের জীবনেই এমন একটা সময় আসে, যখন সবকিছু কঠিন মনে হয়। মনে হয় তার স্বপ্ন সফল হওয়া সম্ভব নয়। এই সময়টাই আসলে কাজ করার আসল সময়। যখন দেখবেন কোনও পথ খুঁজে পাচ্ছেন না – তখনই বুঝবেন, এবার যে পথটি খুঁজে পাবেন – সেটাই আপনার স্বপ্নকে সফল করবে।

এই সময়টাতেই মানুষকে কমফোর্ট জোন থেকে বের হয়ে আসতে হয়। নতুন মানুষ হিসেবে খোলস ছেড়ে বের হতে হয়। আপনার স্বপ্ন যত বড়ই হোক না কেন – আপনি যদি নিজের সঠিক শক্তির জায়গাটি খুঁজে বের করে তাকে স্বপ্ন পূরণের কাজে লাগাতে পারেন – তবে যে কোনও বড় স্বপ্ন আপনি পূরণ করতে পারবেন।

আর স্বপ্ন পূরণের প্রস্তুতি নিতে এই লেখাটি যদি আপনার একটুও কাজে আসে – তাহলেই আমাদের প্রচেষ্টা সফল।

লেখাটির বিষয়ে আপনার যে কোনও মতামত আমাদের কমেন্ট করে জানান। আপনার সব মতামতই আমাদের কাছে অমূল্য।

আর যদি মনে হয় এই লেখাটি পড়ে অন্যরাও উপকৃত হবেন – তবে শেয়ার করে সবাইকে দেখার সুযোগ করে দিন।

এই ধরনের আরও লেখার জন্য নিয়মিত আমাদের সাথে থাকুন। স্বপ্ন সফল হওয়ার প্রতিটি পর্যায়ে জোনাকি মিডিয়া গ্রুপ আপনার সাথে আছে।

Post a Comment

0 Comments