যশোর জেলার
সাগরদাঁড়ি গ্রামের এক কুলীন হিন্দু কায়স্থ রাজনারায়ণ দত্ত ও তাঁর পত্নী
জাহ্নবী দেবীর পরিবারে ঘর আলো করে যে সন্তানটি পৃথিবীতে আসেন দত্ত পরিবার
সোহাগ করে তার নাম রাখেন মধুসূদন। এই মধুসূদন আর কেউ নন তিনি আমাদের বাংলা
সাহিত্যের সনেট ও অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক। তিনি সনেট ও অমিত্রাক্ষর
ছন্দে কবিতা লিখে বাংলা ভাষাকে যেমনি দিয়েছেন নতুন অলংকার তেমনি তিনি
হয়েছেন সম্মানিত।
বাংলা
সাহিত্যে অমিত্রাক্ষর ছন্দে রামায়ণের উপাখ্যান অবলম্বনে রচিত ‘মেঘনাদবধ
কাব্য’ নামক মহাকাব্যটি ছিল তাঁর জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি, যা ছিল বাংলা
সাহিত্যের জন্য উদাহরণ যোগ্য একটি উপহার। এছাড়াও তাঁর সৃষ্টিশীলতার মধ্যে
ছিল কৃষ্ণকুমারী, শর্মিষ্ঠা, পদ্মাবতী, একেই কি বলে সভ্যতা, বুড়ো শালিকের
ঘাড়ে রোঁ, তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য, বীরাঙ্গনা কাব্য, ব্রজাঙ্গনা কাব্যের মত
গ্রন্থাবলী। কিন্তু তিনি বাংলা সাহিত্যে এতটা সুনাম অর্জন করেও কোনো এক
অজানা আকর্ষণে ইংরেজি ভাষায় সাহিত্য রচনায় মনোনিবেশ করেন এবং নিজ ধর্ম
ত্যাগ করে খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণ করতঃ মধুসুধন থেকে মাইকেল মধুসুধন নাম ধারণ
করেন। কবির জীবন প্রারম্ভে বাংলা সাহিত্যের এতবড়ো মহাসাগরে থেকেও কোনো এক
দুর্নিবার আকর্ষণে ইংরেজি ভাষার প্রতি তাঁর ঝুঁকে পড়া এবং কুলীন সম্রান্ত
হিন্দু পরিবারের সন্তান হয়ে খ্রিষ্ট ধর্ম গ্রহণ করা ছিল কবির জীবনের বড়
অভিশাপ, জীবন দিয়েও সে অভিসম্পাৎ থেকে তিনি মুক্তি লাভ করতে পেরেছেন কিনা
বলা দুষ্কর।
কবির শেষ
জীবন ছিল অত্যন্ত বেদনা বিদুর- এমনকি অর্থাভাবে অনাহারে অর্ধাহারে কেটেছে
তাঁর মৃত্যুর পূর্বের শেষ দিনগুলি, যা এতো বড় মাপের ব্যক্তির জীবনে
অকল্পনীয়। মাতৃভাষা এবং স্বধর্ম ত্যাগই হয়তো মাইকেল মধুসুধন দত্তের
জীবনের দুর্গতির প্রধান কারন, অনেকে মোহের ঘোরে অন্য ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট
হয়ে নিজ ধর্ম ত্যাগ করে যার পরিণতি হয় ভয়াবহ। ধর্মান্তরিত হয়ে তিনি
তাঁর পরিবার, আত্মীয় স্বজন এমনকি সামাজিক ভাবে একঘরে হয়ে ছিলেন। মৃত্যুর
প্রাক্কালে কাউকে তিনি কাছে পাননি। কবি মাইকেল মধূসূধন দত্তের মৃত্যুর
সন্ধিক্ষণ এতটা বেদনাবিধুর ছিল যা বর্ণনা করাও অতীব কষ্টের।
0 Comments