কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জমিদারি এবং সাহিত্যবাসর

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বর্ণিল জীবনে সৃষ্টিশীলতার কোনো প্রকার অভাব ছিলোনা - তিনি বাংলা সাহিত্যের সকল বিভাগে দুই হাতে ভরে দিয়ে গেছেন। বাংলা সাহিত্যের প্রতিটি বিভাগ যেন রবীন্দ্র স্পর্শে কানায় কানায় পরিপূর্ণ, গদ্য-কবিতা-গান-নাটক-কাব্য-মহাকাব্য সকল বিষয়ে তাঁর ছিল সমান পারদর্শিতা। 
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম হয়েছিল ধনী সম্রান্ত পরিবার তথা কলকাতার বনেদি জোঁড়াসাকোর ঠাকুর পরিবারে। ঠাকুর পরিবারের তিন পুরুষের জমিদারি রক্ত কবিগুরুর শরীরেও বইছে। কিন্তু জমিদারি বংশের অভিলাষ আঁকড়ে না ধরে তিনি গ্রাম বাংলার পথে প্রান্তরে খাল বিল নদী নালাতে ঘুরে বেড়িয়েছেন এবং তাঁর নিজের মত করে নিজের আত্মপরিচয় তৈরী করেছিলেন। বিত্ত বৈভব ছেড়ে শান্তিনিকেতনের মাটি ও খড়ের ছাউনির ঘরে বাস করতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করতেন।
তৎকালীন সময়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ দ্বারকানাথ ঠাকুর ‘প্রিন্স’ নামে এবং পিতা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘মহর্ষী’ নামে খ্যাত ছিলেন। ১৮০৭ সালে কবিগুরুর পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর এপার বাংলার কুষ্টিয়া অঞ্চলের জমিদারির দায়িত্ব পা। জমিদার বংশের সন্তান হয়ে জমিদারির দায়িত্ব তো অন্তত একবার ঘাড়ে পড়তেই হবে এবং সেইমতো ১৮৮৯ সালে এই অঞ্চলের জমিদারির দায়িত্ব কবিগুরুর কাঁধে ভর করে যার দায়িত্ব তিনি ১৯০১ সাল পর্যন্ত পালন করেছিলেন।
জমিদারির আয়েশি জীবন কোনোক্রমে রবি ঠাকুরকে তাঁর সাহিত্য নিষ্ঠা থেকে এক চুলও বিভ্রান্ত করতে পারেনি বরঞ্চ জমিদারি প্রথা ভেঙে দিয়ে জনবান্ধব সমাজ ব্যবস্থা কি ভাবে প্রবর্তন করা যায় সেই চিন্তাটি সার্বক্ষণিক তাঁর মাথায় ঘুরপাক খেত। তাঁর ভাবনার সিংহভাগ জুড়ে ছিল কিভাবে দরিদ্র কৃষকদের দুঃখ কষ্ট লাঘব করা যায়, কি পদ্বতিতে সাধারণ মানুষের ঋণ মওকুফ করা যায়। তিনি জার্মানি এবং হল্যান্ড থেকে সমবায়ের ফর্মুলা এনে দারিদ্রতা দূরীকরণের কাজে লাগিয়েছেন - তাঁর নোবেল পুরস্কারের অর্থ দিয়ে তিনি গরিব মানুষের কল্যাণের জন্য সমবায় ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
জমিদারি প্রথার নবদিক উম্মোচন, সাধারণ মানুষের জন্য নিরন্তর ভাবনার মধ্যেও তাঁর মাথায় সাহিত্যের ভুত সার্বক্ষণিক কিলবিল করতো। জমিদারির পাশাপাশি তিনি রচনা করেছেন তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘সোনার তরী, চিত্রা, চৈতালি সহ অনেক সৃষ্টিশীল কর্মের স্বাক্ষর রেখেছেন জমিদারির ফাঁকে ফাঁকে। এমনকি তাঁর গীতাঞ্জলির অনুবাদের কাজ গুলিও সেরেছেন সে সময়ে। এক কথায় বলতে গেলে যে কোনো পরিস্থিতিতে তিনি সাহিত্যবাসরে থেকেই বাংলা সাহিত্যকে উজাড় করে দিয়ে গেছেন।
বাংলা সাহিত্যের দিকপাল কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মজয়ন্তীতে কবির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও গভীর ভালোবাসা।

প্রবন্ধ ও কলাম লেখক, সন্তোষ চন্দ্র নাথ,   আজীবন সদস্য -ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

Post a Comment

0 Comments