কাজ করুন এগিয়ে যান

প্রফেশনালদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো রিস্ক অ্যাসেসমেন্ট। রিস্ক যে কাউকে থামিয়ে দিতে পারে অথবা অনেক বেশি সামনে এগিয়ে দিতে পারে। কিন্তু থামিয়ে দেয়ার ব্যাপারটা মাথায় না নিয়ে রিস্ক নেয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কয়েকজন প্রফেশনালদের কাছ থেকে জানা যায় তারা কীভাবে ক্যারিয়ারে রিস্ক নিয়েছেন। তাদের জীবন ঘেটে দেখা গেছে অনেক সময় পিছিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও তারা রিস্ক নেয়াটাকে স্বভাবজাত করে নিয়েছেন। আর তাতেই মিলেছে সাফল্য।
চাই একটা ব্রেক : ১৯৯৯ সালে মার্ক ম্যালাও একটি ভিশন নিয়ে কাজ শুরু করেন। তিনি ভার্চুয়াল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে সৃজনশীল প্রযুক্তি এবং মাল্টিমিডিয়া সেবাকে ছড়িয়ে দেয়ার নতুন পথ খুঁজে পান। কিন্তু তার প্রতিষ্ঠান তার সঙ্গে একমত ছিল না। প্রতিষ্ঠান ভাবছিল, ভার্চুয়াল রিসোর্স ও ব্রডব্যান্ড ওই ধরনের সেবা পুরোপুরি দিতে পারবে না। তারা এও ভাবছিল, তাদের বিদ্যমান অ্যাপ্লিকেশনগুলো যেভাবে ব্যবসার চাহিদার সঙ্গে খাপ খাইয়ে গেছে, তাতে ভার্চুয়াল থিম খুব একটা মিলবে না। ফলে ম্যালাও নিজেই প্রোগ্রামার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেন এবং নিজের অবসর সময়ে তিনি ব্যবসায়িক চিন্তাধারার সঙ্গে মিলিয়ে একটা নতুন অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করে ফেলেন। তার লক্ষ্য ছিল সুনির্দিষ্ট আর মনোবল ছিল দৃঢ়। তাই একদিন নিজেই তৈরি করে ফেলেন সেই অ্যাপ্লিকেশন। দ্বিতীয় সন্তানের জšে§র পরপর ২০০৬ সালে ম্যালাও একটা বড় বাজি ধরেন। ৪ লাখ ইউএস ডলার ঋণ করে তিনি নিজের ব্যবসা শুরু করেন। বর্তমানে মার্ক ম্যালাও নিউইয়র্কের অনলি ডিজিটাল এলএলসি’র চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার। তিনি সফটওয়্যার ব্যবহার করেন এবং বর্তমানে নিজেকে বেশ ডেভেলপ করে নিয়েছেন। ফলে তার পার্টটাইম ও ফুল টাইম কর্মচারীদের সঙ্গে শিডিউল মেলাতে কোনো সমস্যা হয় না। তার এক সময়কার নেয়া রিস্ক আজ তাকে ব্যবসা সম্প্রসারণের সোনালি দিন দেখাচ্ছে। পাশাপাশি এখন ৫০০ প্রতিষ্ঠান তার ক্লায়েন্ট বেজে আছে।
প্রযুক্তির যুগে ডন কার্ট জানেন, প্রথম থেকে নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে পথচলা জুয়া খেলার মতো একটা ব্যাপার। ২০০১ সালে জাভা বেজড নতুন ইআরপি সিস্টেম আসে। তখন তিনি একটা গ্লোবাল ম্যানুফ্যাকচারিং এবং ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির চিফ ইনফরমেশন অফিসার। তিনি ভেন্ডরদের জন্য নতুন ওই ইআরপি সিস্টেম বেছে নেন। নতুন এ সিস্টেম কর্মক্ষমতা বহুগুণে বাড়াতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু যেহেতু এটা একটা নতুন প্রযুক্তি এবং একটা বড় রিস্ক, তাই কার্ট মাত্র ১০% প্রয়োগ দিয়ে এর ব্যবহার শুরু করেন।
এটা ভালো জিনিস হলেও নতুন মডেল নিয়ে কার্ট যতটা আশাবাদী ছিলেন, ততটা কার্যকরী এটা হয়নি। কারণ এ পদ্ধতিতে বাগস, ট্রানজেকশন ও কানেকটিভিটি নিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। ফলে ১ বছর পর কার্ট ভেন্ডরদের পুরনো ভার্সনে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন।
এতে ১ মিলিয়ন ডলার খরচ করতে হলেও অন্য খাত থেকে তিনি এ খরচ পুষিয়ে নেন। তিনি মনে করেন, কাস্টমার যদি পেছনে যেতে চায় এবং তা নিয়ে তারা খুশি থাকে, তাহলে তার কোনো সমস্যা নেই। এ বিষয়টি থেকে কার্ট একটি শিক্ষা পেয়েছেন। আর তা হলো, যদি প্রথম হতে হয় তাহলে নিশ্চয়তা এবং বোধগম্যতা থাকতে হবে কোথায় আপনি অতিরিক্ত সেবা প্রদান করবেন। তবে কার্ট এ অভিজ্ঞতাটাকে নেতিবাচক মনে করেন না। বর্তমানে তিনি জিএ বেজড সিআইও সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান অ্যালফারেটার ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
ভবিষ্যৎটা এখনই ভাবুন : ১৯৮০ সালে কেভিন মুডি জিলেট কোম্পানির সেলস এবং মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টের সিস্টেম প্ল্যানার ছিলেন। তিনি কোম্পানিকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন একটা সিস্টেম দাঁড় করানোর জন্য যা প্রতিনিয়ত অপারেশন সিস্টেমকে তথ্য দিয়ে একটা ভিন্ন কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করবে। এখান থেকে কর্মীদের রিপোর্টিং করার দক্ষতা তৈরি হবে।
আসলে মুডি চেয়েছিলেন বিজনেস ইন্টেলিজেন্স সিস্টেম তৈরি করতে। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো ওই সময়ে বিজনেস ইন্টেলিজেন্স বিষয়টা কারো জানা ছিল না। এমনকি এর নামও অনেকে শোনেননি। ফলে তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে জড়িত কর্মীরা তাকে খুব সমালোচনা করে। কিন্তু মুডি পিছিয়ে যাওয়ার লোক নন। তিনি বলেন, ‘আমি যদি ব্যর্থ হই, তাহলে আমি চলে যাব। আর যদি সফল হই, তাহলে আমাকে কাজ করতে দিতে হবে আমার মতো করে।’ মুডি জানতেন, এটার একটা বড় প্রভাব পড়বে। তাই সে তার প্রকল্পে ব্যর্থ হলে সকলের কাছে ক্ষমা চাওয়ার প্রতিশ্রুতি করতেও দ্বিধা করেননি।
এভাবে নিজের উপর প্রবল আত্মবিশ্বাস নিয়েই তিনি এগিয়ে যেতে থাকেন। অনেক কষ্টের পরে প্রতিষ্ঠানের সিআইও, আইটি ডিরেক্টর এবং সেলস ডিভিশনের হেডকে এক বোর্ডে আনেন। তিনি সেলস ডিভিশনকে রাজি করান নতুন প্রজেক্টে বাজেটের কিছু অংশ দিতে। তিনি এ অর্থ দিয়ে প্রোটোটাইপ তৈরি করতে চান। অবশেষে তিনি ঊর্ধ্বতনদের বুঝাতে সক্ষম হন বিজনেস ইন্টেলিজেন্স সিস্টেমের প্রয়োজনীয়তা কতটুকু। নতুন সিস্টেম প্রবর্তন করে তিনি শুধু সফলই হননি, মাল্টিডিভিশনাল একটি সিস্টেম দাঁড় করাতেও সক্ষম হন তার নিজের প্রচেষ্টাতেই।
এ সফলতা মুডিকে রিসার্চ ডিপার্টমেন্ট তৈরিতে একটা বড় সহযোগী ভূমিকা রাখে। তার ওই সময়কার ভূমিকা তাকে জিলেটের সিআইও পদ এনে দেয়। তিনি টানা পাঁচ বছর জিলেটের সিআইও হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। বর্তমানে মুডি ওয়েলেসলিতে ব্যাবসন কলেজের ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট স্টাডিসে এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টরের পদে আসীন।
উপরের ঘটনাগুলো থেকে একটি বিষয় কিন্তু স্পষ্ট, ক্যারিয়ারে যদি একটা বড় পরিবর্তন আশা করেন, তাহলে আপনাকে রিস্ক নিতেই হবে। তবে জানতে হবে এ রিস্ক নেয়াটা কতটা দূরদর্শী হবে। ভবিষ্যৎ জানার ক্ষমতা আর ইনোভেশন না থাকলে রিস্ক নেয়াটা কঠিন। এখানে ভবিষ্যৎ জানা মানে নিখুঁত পরিকল্পনা করতে পারা। তবে আজ পর্যন্ত যারাই ক্যারিয়ারে বড় ধরনের জাম্প দিয়েছেন তাদের প্রধান পাথেয় ছিল রিস্ক। তাই এখনই ভাবুন আপনি কী করবেন?

Post a Comment

0 Comments