চীনের দক্ষিণাঞ্চলের হুনান প্রদেশে গত সপ্তাহের বন্যায় অন্তত
৫০ জন মৃত্যুবরণ করিয়াছে। জাপানের পরিস্থিতিও বেশ সংকটাপন্ন। পশ্চিমাঞ্চলে
ভূমিধস ও বন্যায় আক্রান্ত হইয়া মৃতের সংখ্যা ১২৬-এ দাঁড়াইয়াছে। তিন দশকেরও
বেশি সময় পরে জাপানে প্রাকৃতিক দুর্যোগে এইরূপ প্রাণহানির ঘটনা ঘটিল। এখনও
অনেকে নিখোঁজ রহিয়াছে বলিয়া জানা যাইতেছে। ইতোমধ্যে ২০ লক্ষের বেশি মানুষকে
নিরাপদে সরাইয়া লওয়া হইয়াছে। পৃথিবীর এই অঞ্চলে যখন বন্যার প্রকোপ, তখন
অন্য প্রান্তের দেশ কানাডায় চলিতেছে তীব্র দাবদাহ। এক সপ্তাহের দাবদাহে এখন
পর্যন্ত ৫৪ জন মৃত্যুবরণ করিয়াছে। চিকিত্সকগণ বলিতেছেন, প্রচণ্ড গরম ও
আর্দ্রতার কারণে শ্বাসকষ্টে অধিকাংশ নিহত হইয়াছে।
যুগ যুগ
ধরিয়াই প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানবজীবনে হানা দিয়া আসিতেছে। তাহার কতক নিয়ম
করিয়া আসে, আবার কতক অসময়ে অথবা বহু বত্সর পর হঠাত্ করিয়া আসে। বাংলাদেশে
যেমন বন্যা নিয়ম করিয়া প্রতি বত্সর আসে, আবার হঠাত্ করিয়া তীব্র শীত পড়িলে
তাহা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। সর্বোপরি মানুষের ভোগান্তির সীমা থাকে না,
অনেক মানুষ মৃত্যুবরণ করে অথবা অসুস্থ হইয়া যায়। নিয়মের আওতায় যে প্রাকৃতিক
দুর্যোগ, যেমন বাংলাদেশে বন্যা, তাহা লইয়া প্রস্তুতি থাকে, কিন্তু
অস্বাভাবিক ধরনের দুর্যোগ মানুষকে সমূহ বিপদের মুখোমুখি করাইয়া দেয়,
প্রস্তুতি না থাকায় দুর্যোগের তুলনায় ক্ষয়ক্ষতি বেশি হইয়া থাকে। জাপানের
চলমান অস্বাভাবিক বন্যা উন্নত প্রযুক্তির দেশটির মানুষকে অপ্রস্তুত করিয়া
তুলিয়াছে। সবচাইতে ভয়ঙ্কর হইয়াছে কানাডায় দাবদাহ। কারণ কানাডা একটি
শীতপ্রধান দেশ। এমনকি গ্রীস্মকালেও সেইখানে খানিক শীতের অনুভূতিই বিদ্যমান
থাকে। কিন্তু কানাডায় দাবদাহ একটি অত্যন্ত অস্বাভাবিক ঘটনা। ওইসকল দেশের
বাসায় কিংবা অফিসে সাধারণত এয়ার কন্ডিশন কমই থাকে, এমনকি ফ্যানও থাকে না
বলিলেই চলে। তাই হঠাত্ দাবদাহে তাহাদের ভোগান্তি তীব্র হইয়াছে, এমনকি লোকে
গরমে মৃত্যুবরণ করিতেছে।
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে জলবাযু
নিশ্চয়ই পরিবর্তিত হইতেছে, আবার সকল দুর্যোগের জন্য জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী
করাও যুক্তিযুক্ত নহে। শিল্পোন্নত দেশসমূহ কার্বন নিঃসরণের মাধ্যমে
বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য প্রধানত দায়ী থাকিলেও, উহার কুফল ভোগ করিতেছে
বিশ্বের সকলেই। বিশেষত ভৌগোলিক গঠনের দিক দিয়া যেই দেশ বা অঞ্চল ঝুঁকির
ভিতর রহিয়াছে, ভোগান্তি তাহাদেরই অধিক হইবে বলিয়া সকলে ভবিষ্যদ্বাণী
করিয়াছেন। আবার সম্পদের সীমাবদ্ধতা রহিয়াছে—এমন দেশগুলিই সবচাইতে বেশি
পরিমাণে ক্ষতির শিকার হইতেছে। বাংলাদেশ এই দুই বিচারেই সবচাইতে ঝুঁকিপূর্ণ
দেশ হিসাবে বিশ্বের নিকট চিহ্নিত হইয়াছে। কিন্তু এখন দেখা যাইতেছে কানাডার
মতো উন্নত দেশও জলবায়ু পরিবর্তনের হাত হইতে রেহাই পাইতেছে না। সবচাইতে বেশি
কার্বন নিঃসরণকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্র কিয়োটো চুক্তিতে স্বাক্ষরই করে নাই।
উন্নত-অনুন্নত নির্বিশেষে সকল দেশকে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ কমাইয়া আনিতে
জোটবদ্ধ হইয়া কাজ করিতে হইবে। নইলে কেবল বাংলাদেশ নহে,
কানাডা-জাপান-আমেরিকার মতো দেশকেও ভুগিতে হইবে। বিশ্ববাসী সেই চেষ্টা
করিতেছে বটে, কিন্তু অগ্রগতি সামান্যই। এই দুঃখজনক পরিস্থিতি হইতে
বিশ্বনেতৃবৃন্দকে বাহির হইয়া আসিতে হইবে।
0 Comments