মিয়ানমারে রয়টার্সের দুই সাংবাদিকের বিচার শুরু



মিয়ানমারে রয়টার্সের দুই সাংবাদিকের বিচার শুরু

রোহিঙ্গা ইস্যুতে সংবাদ প্রচারের জন্য মিয়ানমারের দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। ৯ জুলাই মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন জেলা আদালত কারাবন্দী দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় তথ্যের গোপনীয়তার আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ গ্রহণ করেন। এ মামলায় প্রথম শুনানি হয়েছিল ছয় মাস আগে। আদালতের এই অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে দেশটিতে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সম্পর্কিত মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম শুরু হলো।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা নির্যাতন সম্পর্কিত বিভিন্ন খবর সংগ্রহ করে তা প্রচারের জন্য রয়টার্সের দুই সাংবাদিক ওয়া লোন (৩২) ও কাও সো উকে (২৮) গ্রেপ্তার করে মিয়ানমার সরকার। এ বিষয়ে করা মামলার প্রথম শুনানি অনুষ্ঠিত হয় ছয় মাস আগে। কিন্তু তখন পর্যন্ত অভিযোগপত্র গঠন করা হয়নি। ৯ জুলাই এই দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তার আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ গঠন করেন ইয়াঙ্গুন জেলা আদালতের বিচারক ইয়ে লিউইন। রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তার এই আইনটি ঔপনিবেশিক আমলের, যা মূলত সংবাদপত্রের স্বাধীনতার পরিপন্থী। এই আইন লঙ্ঘনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হলে সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।
আদালতে অভিযোগ গঠনের শুনানির পর দুই সাংবাদিকই নিজেদের ‘নির্দোষ’ দাবি করেন। আত্মপক্ষ সমর্থন করে তাঁরা বলেন, তাঁরা শুধু সাংবাদিকতার নীতি অনুসরণ করেছেন। আদালতের আদেশের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ওয়া লোন বলেন, ‘আমি ও কাও সু উ কোনো অপরাধ করিনি। আদালতেই আমরা আমাদের নির্দোষ প্রমাণ করব। আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হলেও আমরা নির্দোষ। আমরা পিছু হটব না। আমরা এর মোকাবিলা আইনি পন্থাতেই করব।’
রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি কাও মিন অং অবশ্য বিচারকের আদেশের পরপরই আদালত প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন। মামলাটির সম্পর্কে তাঁর কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
রয়টার্সের দুই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সরকার পক্ষের করা এই মামলা সারা বিশ্বের নজর কেড়েছে। এই মামলাকে মিয়ানমারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা থাকবে কি থাকবে না, তার নির্ণায়ক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে নোবেলজয়ী নেত্রী অং সান সু চির প্রশাসনের গণতন্ত্রের পরীক্ষা হিসেবেও দেখা হচ্ছে মামলাটিকে।
এ বিষয়ে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় মিয়ানমারে নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাস বিচারকের সিদ্ধান্তকে ‘ভীষণ হতাশাজনক’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। দূতাবাসের ফেসবুকে পেজে প্রকাশিত এক পোস্টে বলা হয়, ‘মিয়ানমার সরকারের উচিত সাংবাদিকদের তাঁদের কর্মক্ষেত্র ও পরিবারে ফিরতে দেওয়া। আদালতের আজকের সিদ্ধান্ত মিয়ানমারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও আইনের শাসনের জন্য একটি বাজে উদাহরণ হয়ে থাকবে।
এই মামলাকে ভিত্তিহীন বলে মন্তব্য করেছেন রয়টার্সের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সম্পাদক স্টিফেন জে অ্যাডলার। এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ‘এই দুই সাংবাদিক স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁরা কোনো ধরনের আইন ভেঙেছেন কিংবা কোনো ভুল কিছু করেছেন, এমন কোনো প্রমাণ বা তথ্য কেউ দেখাতে পারেনি।’
এ বিষয়ে মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জ তের প্রতিক্রিয়া জানার চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

Post a Comment

0 Comments