কর্মক্ষেত্রে এড়িয়ে চলোন  ১০ সহকর্মী কে !

এটা শুনে অনেকে ভ্রু কুঁচকে তাকাতে পারেন, কারণ সহকর্মীদের সঙ্গে মিলেমিশে বন্ধুত্ব করে না চললে অফিস চলবে কি করে? কিন্তু অনেকে এটা বুঝবেন যে, অফিসে কিছু মানুষ থাকে যারা কাজের ক্ষেত্রে উপকার তো করেই না বরং কাজে ঝামেলা করে। আপনি অফিসে আসার পর প্রথম প্রথম মনে হবে সবাই খুব ভালো। কিন্তু একটা সময় পর আপনি নিজেই আবিষ্কার করবেন কারো কারো পেটে রয়েছে জিলাপির প্যাঁচ! এসব মানুষের সঙ্গ এড়িয়ে চলতে পারাটাই শ্রেয়।
আপনি নিজের বন্ধু বেছে নিতে পারেন, কোন অফিসে কাজ করবেন সেটাও হয়ত বেছে নিতে পারেন কিন্তু কোন সহকর্মীকে এড়িয়ে চলবেন সেটা তো আর ঠিক করতে পারছেন না! সুতরাং এদের এড়িয়ে চলা ছাড়া উপায় নেই। কি ধরনের সহকর্মীর ব্যাপারে সাবধান থাকা উচিত তা দেখে নিন।
বাচাল সহকর্মী
আপনার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখছে কিন্তু একই সঙ্গে আপনার হাঁড়ির খবর সর্বসমক্ষে প্রকাশ করে ফেলছে এই সহকর্মী। সে এই কাজটি ইচ্ছায় করুক আর অনিচ্ছায়, এতে যে ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে তা তো বোঝাই যায়। কর্মক্ষেত্রের প্রতি অন্যদের শ্রদ্ধা নিমিষেই শেষ হয়ে যেতে পারে এমন এক সহকর্মীর কারণে। আর এই সহকর্মীর আরেকটি খারাপ প্রভাব হলো, সে আপনার সঙ্গে বকবক করতে শুরু করলে আর থামতে চাইবে না। ফলে কাজের ক্ষতি হবে আর এটা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের চোখে পড়লে তো আর কথাই নেই। চাকরি নিয়েই টানাটানি পড়ে যাবে তখন।
গায়ে পড়া সহকর্মী
অফিসে কখনো এমন কোনো সহকর্মীকে লক্ষ্য করেছেন যাকে দেখে মাঝে মাঝে মনে হয় তিনি অফিসে কাজ করতে নয়, শুধুই গল্প করতে এসেছেন? নিজের কাজ তিনি আদৌ করেন কি-না, এটা নিয়েও আপনার চিন্তা হতে পারে। কারণ তিনি সবসময় অন্যদের ডেস্কে ডেস্কে ঘুরে বেড়ান এবং গল্প করার সুযোগ খোঁজেন। এতে অন্যদের কাজের অসুবিধে হচ্ছে কি-না তা নিয়ে তার মাথাব্যথা নেই। কাজের বাইরেও নানা বিষয় নিয়ে চেঁচামেচি করেন অযথাই। অন্যের জীবনের ব্যক্তিগত ব্যাপারে নাক গলাতেও তিনি সিদ্ধহস্ত। নিজের ক্ষতি তো তিনি করেনই, এনার বেশি কাছাকাছি থাকলে আপনারও ক্যারিয়ারে খারাপ প্রভাব পড়বে।
বিশ্বাসঘাতক সহকর্মী
কর্মক্ষেত্রে ভুল-ত্রুটি হতেই পারে। আর গ্রুপে কাজ করতে গেলে সেই ভুল ত্রুটি মেনে নিয়েই কাজ করতে হয়। কিন্তু গ্রুপের ভুলের মাশুল যদি শুধু আপনাকেই গুনতে হয় তবে বুঝতে হবে আপনার গ্রুপে আছেন এমন একজন সহকর্মী যিনি নিজে কোনো রকমের ভুলের ভার না নিয়ে আপনাকে ফাঁসিয়ে দিয়েছেন। খুব সাবধান থাকুন এদের ব্যাপারে। Passive Aggressive Saboteur নামেও এদের অভিহিত করা যায়। আপনার সামনে খুব মিষ্টি মিষ্টি কথা বললেও বসের অফিসে বসে আপনার নামে কুৎসা রটাতে এদের একটুও বাঁধবে না।
হতাশাবাদী সহকর্মী
এমন মানুষ অনেক আছেন যারা সবকিছুকেই নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখতে ভালোবাসেন। অফিসেও এর ব্যতিক্রম হবে না। পৃথিবীর সবকিছুর প্রতি হতাশ এবং বীতশ্রদ্ধ এই সহকর্মী এবং তিনি ছোটখাটো ব্যাপার নিয়ে ঘ্যানঘ্যান করতে ভালোবাসেন। এনার আচরণ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আপনিও যদি নিজের জীবন নিয়ে হতাশায় ডুবে যান তাহলে কিন্তু অনেক বড় সমস্যা। কাজ বাদ দিয়ে দুজনে মিলে কেবল দুঃখবিলাসই করা হবে তখন।
সমালোচক সহকর্মী
অফিসে এমন মানুষ থাকেই যারা নিজের কাজ হোক না হোক, অন্যের সমালোচনা তার করা চাই-ই চাই। সেটা সহকর্মীর সামনে হোক বা পেছনে হোক। এমন সহকর্মী থাকলে কাজের পরিবেশ অবধারিতভাবেই হয়ে ওঠে দূষিত। আপনি যে কতটা কষ্ট করে নিজের কাজটা করেন সেটা অন্য কেউ বুঝবে না, সুতরাং সেটা নিয়ে সমালোচনা করারও অধিকার নেই তাদের।
অকর্মা সহকর্মী
ইনি হলেন সে ব্যক্তি যিনি সুযোগ পেলেই কাজ ফাঁকি দেন এবং তার অতিরিক্ত কাজের বোঝা আপনাকেই নিতে হয়। আগে থেকে না জানিয়েই গুরুত্বপূর্ণ মিটিং এর দিন অনুপস্থিত থাকাতেও তিনি পটু। তার সঙ্গে কাজ করতে গেলে প্রচণ্ড রকম বিরক্ত হতে হবে আপনাকে আর কলুর বলদের মতো কোনো রকমের প্রতিদান ছাড়াই তার কাজ করতে হবে আপনাকে।
ক্রেডিট-চোর সহকর্মী
আপনার কর্মক্ষেত্রকে দুর্বিষহ করে তোলার জন্য এই এক জনই যথেষ্ট। আপনি রাত জেগে খেটেখুটে কাজ করলেন এবং তার জন্য প্রাপ্য বাহবা ছিনিয়ে নেবেন এই সহকর্মী এবং আপনার কিছুই করার থাকবে না। এদের সঙ্গে একই গ্রুপে কাজ করাটা খুবই বিরক্তিকর কারণ এরা সব কাজ আপনার ওপর চাপিয়ে দেবে আর কাজ শেষ হলে ক্রেডিট নেয়ার বেলায় থাকবে সবার সামনে।
অহঙ্কারী সহকর্মী
সে সব সময়েই আপনাকে শোনাতে থাকবে সে কতটা ভালো কাজ করছে, পরবর্তী পদোন্নতিটা তারই পাওয়া উচিত ইত্যাদি। সে নিজে কাজ করছে কি করছে কি-না তা ব্যাপার না। কিন্তু তার এসব কথা শুনে আপনি নিজেকে ছোট মনে করা শুরু করবেন এবং কাজের প্রতি আগ্রহ উবে যাবে।
অতি-প্রতিযোগী সহকর্মী
আপনার প্রতি এই সহকর্মীর থাকতে পারে গোপন অথবা প্রকাশ্য বিদ্বেষ এবং তিনি যে কোনো মূল্যে আপনাকে টপকে ওপরে ওঠার চেষ্টা করবেন। কর্মক্ষেত্রে সুস্থ প্রতিযোগীতা খুবই ভালো কিন্তু এই সহকর্মীর থেকে অসুস্থ প্রতিযোগিতাই পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ছলে-বলে-কৌশলে তিনি আপনাকে ছোট করার চেষ্টা চালিয়েই যাবেন।
রাজনীতিবিদ সহকর্মী
কাজ করে পদোন্নতি পাওয়ার চাইতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে তৈলমর্দন করে ওপরে ওঠার দিকে বেশি মনোযোগ এসব ব্যক্তির। ভালো কাজের দায়িত্ব পাওয়ার জন্য এদের যতটা আগ্রহ সেই কাজ ঠিকমতো করার পেছনে তাদের আগ্রহ ততই কম। এদের থেকে দূরে থাকুন এবং গ্রুপে এমন কোনো সহকর্মী আছে কি-না লক্ষ্য রাখুন।

Post a Comment

0 Comments