জনগণের উন্নয়ন প্রসঙ্গ

জনগণের উন্নয়নের স্বার্থে সরকারের ব্যয় কমিয়ে আনতে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। এ নিয়ে বৈঠক হয়েছে গত বৃহস্পতিবার (৫ জুলাই)। বৈঠকে তিনি ঘোষণা দেন, একজন মন্ত্রী একটি গাড়িই ব্যবহার করতে পারবেন। একাধিক গাড়ি ব্যবহার করা যাবে না। সরকারি কোষাগারের ওপর চাপ কমানোর জন্য মন্ত্রী ও দফতরের অফিসাররা কীভাবে খরচ কমাতে পারেন সে ব্যাপারে বেশ কিছু নির্দেশনাবলী জারি করেন মমতা। নির্দেশনায় বলা হয়, বেসরকারি হোটেলের বদলে সরকারি হল বা স্টেডিয়ামে করতে হবে সভা-সমাবেশ। সরকারি অনুষ্ঠানের আয়োজন হবে সাদামাটা। অফিস রুম, গেস্ট হাউস সাজানোর খরচ কমাতে হবে। সরকারি অনুষ্ঠানে উপহার ও খাওয়ার খরচ কমানোরও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সব অতিথিকে ফুলের তোড়া দেয়ার প্রথাও বন্ধ হচ্ছে। রাজ্য ও জেলা সদরে বৈঠকে গাড়ির খরচ কমাতে ভিডিও কনফারেন্সের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। নতুন গাড়ি কেনা ও গাড়ি ব্যবহারের খরচেও লাগাম টানার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এসি লাগানো ও ব্যবহারের ক্ষেত্রেও দেয়া হয়েছে সতর্কবার্তা। সরকারি অফিসারদের বিদেশ সফরেও জারি হচ্ছে বিধিনিষেধ। সরকারি কর্মকর্তাদের প্লেনে ইকোনমি ক্লাসে যাওয়ারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয়ে নবান্নে ডাকা বৈঠকেও ছিল ব্যয় সংকোচনের ছাপ। দুপুরের খাওয়ার মেন্যু থেকে বাদ দেয়া হয় ইলিশ, চিংড়ি, মাটন, ফিশ ফ্রাই, কাবাব। লাঞ্চে এদিন পোনা মাছ ছাড়া আর কোনো আমিষ পদ ছিল না।
জি নিউজ পরিবেশিত খবরটিতে ভেবে দেখার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। আমরা জানি, যে কোনো সরকারেরই প্রধান কর্তব্য হলো দেশ ও জনগণের উন্নয়ন। দেশের উন্নয়নও আসলে জনগণের স্বার্থেই। কাঙ্খিত উন্নয়ন না হলে জনগণের জীবনমানের উন্নয়ন সম্ভব নয়। এই কাজটি না হলে সরকারের তেমন কোনো গুরুত্ব থাকে না। অথচ নানা অপচয় ও গণস্বার্থবিরোধী কার্যক্রমের কারণে প্রতিনিয়ত সরকার ও সরকারি কর্মকর্তারা নিন্দিত হচ্ছেন বিভিন্ন দেশে। দুঃখের বিষয় হলো, বর্তমান সময়ে খুব কম সরকারই এই নিন্দাবাদকে গুরুত্ব দিচ্ছে। তবে একসময় গুরুত্ব দিতে হয়, কিন্তু শেষ সময়ের ওই বোধোদয়ে পতন রোখা যায় না। মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সরকার হয়তো বিষয়টি উপলব্ধি করেছেন। তাই দেশ ও জনগণের উন্নয়নের স্বার্থে অপচয় রোধের পদক্ষেপ নিয়েছেন, মন্ত্রী ও সরকারি কর্মকর্তাদের খরচ কমাতে বলেছেন, বলেছেন বিলাসী মানসিকতা ত্যাগ করতে। আমরা তার পদক্ষেপকে স্বাগত জানাই এবং কামনা করি সাফল্য।
মমতা বন্দোপাধ্যায়ের আগে আমরা এমন উদ্যোগ গ্রহণ করতে দেখেছি আর এক নেতাকে। তিনি মালয়েশিয়ার মাহাথির মোহাম্মদ। শেষ বয়সে ক্ষমতায় এসে তিনি মন্ত্রীদের বেতন ১০ ভাগ কমিয়ে দিলেন। জনগণকে মুক্ত করলেন করের বোঝা থেকে। ফলে মালয়েশিয়ায় এখন পণ্যদ্রব্য এঝঞ মুক্ত। এসব বিষয় থেকে উপলব্ধি করা যায় মাহাথির মোহাম্মদের বিজয়ের রহস্য।
কিন্তু আমাদের সরকার যেন চলছে উল্টো পথে। জনগণের ওপর করের বোঝা বেড়েই চলেছে। গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। জনগণের ক্রয় ক্ষমতা কমছে অথচ সুবিধা বাড়ছে মন্ত্রী ও সরকারি কর্মকর্তাদের। কর্মকর্তাদের গাড়ি ক্রয়, ব্যবহার এবং ফোন চর্চার ক্ষেত্রে যে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে তাতে জনগণ বিস্মিত। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সামর্থের সাথে তা মানায় না। জনগণের উন্নয়ন গতির সাথেও তা মানায় না। সরকার বিষয়টি উপলব্ধি করলেই মঙ্গল।

Post a Comment

0 Comments