আকাশে চাঁদ নেই। অন্ধকারে চেহারা দেখা যাচ্ছে না ঠিক করে। আমরা অবশ্য দেখার
চেষ্টাও করছি না। সাগরের জলে পা দিয়ে বসে আছি শুধু। একেকটা ঢেউ আসে আর
ভিজিয়ে দেয় আমাদের। মধ্যরাতে আমরা সাগরের গর্জন শুনতে বসে আছি।
‘ছোটবেলায় একটা গোয়েন্দা গল্প পড়েছিলাম। এক লোক আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছিল রাতে সে একজনকে খুন করতে দেখেছে। গায়ে তার লাল কোট। বিপক্ষ উকিল সাথে সাথে ধরে ফেলেছিল সে মিথ্যে বলছে। আচ্ছা, চাঁদের আলোয় লাল রঙকে কেমন দেখায় বলতো’?
‘আজ তো চাঁদ নেই। এই গল্প কেন বলছ’?
‘চাঁদ কেন, দিনের আলোতেও তো তোমাকে চিনতে পারিনা সময় সময়’।
জলে ভেজা বাতাস আমাদের আদ্র করে দিচ্ছে। ভাগ্যিস চাঁদটা নেই। থাকলে চোখের কোনে জমা জল লুকিয়ে রাখা কষ্ট হত খুব। সুমি’র হাতটা ধরতে ইচ্ছে করছে খুব। হাতটা কি এখনও শীতল হয়ে আছে? মৃত্যুর মত শীতল?
এক সপ্তাহ আগের কথা। মুখ থেকে ফেনা বের হচ্ছে। জামাটা ভেজা। হাত ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। জরুরি বিভাগের ওয়ার্ডে সুমি’র সেই মুখ আমি ভুলতে পারছি না এখনও। বিষ খাওয়া রোগী আসলে কি পুলিশ কেস হয়? কারা যেন আমাকে জেরা করছিল। কঠিন কঠিন প্রশ্ন।
‘সুমি বিষ খায়নি। আত্মহত্যার চেষ্টা করেনি। ওকে আমি হত্যা করতে চেয়েছিলাম’।
বিবেকের গহীনে চিৎকার করতে থাকা শব্দগুলো ওঠেনি কোনো রেকর্ডারে, কোনো ফাইলে, কোনো টিভি ক্যামেরায়। পরাজিত মানুষের কণ্ঠস্বর ভেঙে দেন নাকি বিধাতা।
সুমি’র সাথে ঘর বাঁধি দুই বছর আগে। তখন আমি রীতিমত বিধ্বস্ত। পাঁচ বছরের প্রেমটার সাথে ভেঙে গেছে আত্মবিশ্বাস। প্রকৌশলের সনদটা শুধুই একটা সাদা কাগজ হয়ে পড়ে আছে আলমারিতে। অহনা নাকি বিয়ে করেছে আয়কর বিভাগের জাঁদরেল এক অফিসারকে। আর বেকার আমাকে পরিবার ‘বেঁধে দিল বন্ধনহীন গ্রন্থি’র সাথে। ‘চলতি হাওয়ার পন্থী’ আমি হতে পারিনি সেদিনও, আজও। বিয়ের রাতে ম্যসেঞ্জারে অহনার মেসেজ, ‘সুখে থেকো। ভালো থেকো, আমাকে ছাড়াই’ ওলট পালট করে দেয় আমাকে। সেই ঝড়ে টালমাটাল হতে বসে আমার সংসার। ‘সবাই কি তোমার মত এত নিপুণ আর বিশ্বস্ত নাবিক হয়, সুমি?’ এই কথাটা বলা হয়নি কোনদিন।
আমি কবিতা পড়িনি কোনদিন। কিন্তু একদিন দেখি সুমি আবৃত্তি করছে, ‘তবু জানি, নারীর হৃদয়-প্রেম-শিশু-গৃহ- নয় সবখানি; অর্থ নয়, কীর্তি নয়, সচ্ছলতা নয়-‘। আমি চমকে উঠি।
‘কি বলছ এসব’?
‘কবিতা পড়ছি। জীবনানন্দের কবিতা। পড়নি কোনোদিন’?
আমি তখন পড়ছিলাম ম্যসেঞ্জারে পাঠানো অহনার কথা। ওর সুখের কথা, ঐশ্বর্যের কথা। একাকীত্বের কথা। একাকীত্ব নাকি তীব্র এক আগুনের নাম। ও নাকি সেই আগুনে পুড়ে পুড়ে যাচ্ছে। ও এখন আমাকে মলম ভাবতে চাচ্ছে।
সুমি’র ভালোবাসা, বিশ্বস্ততা, ত্যাগ বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আমি খুব ভালো মলম হতে চেয়েছিলাম। আচ্ছা, আমি যখন রাতের পর রাত ছাদে ফোনে কথা বলতাম, আর সুমি’কে বলতাম জরুরি কাজ, ও কি কিছু আঁচ করতে পেরেছিল? কেন কোনদিন আমাকে বলেনি কিছুই?
তারপর হঠাৎ যেদিন চলে গেলাম সেন্ট মার্টিন দ্বীপে, তখনও চুপ করে ছিল মেয়েটা। আমার ফোন কখনই হাতড়াতো না সুমি। কিন্তু যখন তখন ইমো, ম্যসেঞ্জারের টুংটাং কি শুনতে পেত? পড়ুয়া মেয়েটা গোয়েন্দা গল্প পড়ে বড় হয়েছিল। এত বড় একটা অপরাধি এত বিশাল বিশাল অপরাধ করে বসে আছে, আর সে কিছুই বুঝছে না, এও সম্ভব?
কয়েক সপ্তাহ আগের কথা। টিভিতে হঠাৎ একটা খবর দেখে আমি চমকে উঠি। দুর্নীতির দায়ে অনেক বড় বড় রাঘব বোয়াল নাকি ধরা পড়ছে। একটা লোক নাকি হাতে নাতে ঘুষের টাকা সহ ধরা পড়েছে। অনেক চেষ্টা করছে সে ক্যামেরার সামনে থেকে মুখটা লুকিয়ে রাখতে। কিন্তু আমি চিনে ফেলেছি তাকে। সাথে সাথে ফোন দিই অহনাকে। কান্নায় ভেঙে পড়া মেয়েটা স্বামীর অপরাধে মুষড়ে পড়েছে। এক ভয়ঙ্কর পাশবিক ‘ভালো লাগা’ ভর করে আমার উপর। মলম থেকে আমি তখন উত্তরীয় হতে চেয়েছিলাম। একটার পর একটা খবর আমাকে আনন্দে ভাসিয়ে দেয়। ওর স্বামী নাকি খুব খারাপভাবে ফেঁসে যাচ্ছে। জেল হয়ে যাবে অনেকদিনের। ডিভোর্সটা হলেও হয়ে যেতে পারে।
সেদিন রাত বারোটা পর্যন্ত কথা হয় ফোনে। পরেরদিনই আমরা আবার কথা বলব বিচ্ছেদের উকিলের সাথে। একসাথে দুইটা কেস পেয়ে যেতে পারে লোকটা। ফাইল তৈরি হয়ে আছে। আমার ভিতরে কি কোন অপরাধ বোধ কাজ করছিল? কিংবা ভয়? ঘরে ঢুকতেই সুমি’কে দেখে আমি মাথা ঘুরে পড়ে যাই। নির্বাক একটা মুখ, ফেনা বের হচ্ছে জিহ্বা বেয়ে, শাড়িটা ভেজা। সামলে নিয়ে হাতটা ধরতেই দেখি বরফ শীতল কয়েকটা আঙুল। আর একটা চিরকুট।
বাসর রাতেই একটা মেসেজ পেয়ে তুমি চলে গিয়েছিলে বারান্দায়। তোমার বারান্দাটায় আমাকে কখনো নেবে তুমি?
একটা হাসিমাখা মুখের ছবি ঘণ্টায় ঘণ্টায় আছড়ে পড়ে তোমার ফোনের কাঁচে। এই কাঁচের দেয়ালটা ভাঙবে তুমি? শুধু আমার জন্য?
দিবস পালন করা শিখিনি আজও। তবু বিয়ের পর আমার প্রথম জন্মদিন, বারোটায় আমার জন্য নিয়ে আসবে অনেকগুলো গোলাপ, লাল গোলাপ, তুমিই বলেছিলে। একটা পর্যন্ত বসেছিলাম। তুমি এলে খালি হাতে। তোমার ওয়ালেট থেকে একটা কাগজ বের হয়েছিল। একটা পিজ্জার দোকানের বিল। পিজ্জা, সূপ, আইসক্রিম সব একলা খেয়েছিলে তুমি? এত পেটুক তো তুমি নও।
স্কুলের বান্ধবীরা মিলে একবার গিয়েছিলাম সিনেমা দেখতে। টিকিট কাটার লাইনে দাঁড়িয়ে আমি চমকে উঠি। দূরে চলে গিয়ে ফোন করি একজনকে। সে বলল অফিসে মিটিং করছে। বান্ধবীদের চোখের জল দেখাতে খুব লজ্জা করছিল। আমার কোনো বান্ধবী তোমাকে চিনে না। তোমার সাথের মেয়েটা কি শুধুই বান্ধবী তোমার?
সেই বান্ধবীদের একজনের স্বামী বিচ্ছেদের উকিল। আজ সন্ধায় ফোন করেছিল আমাকে। তার স্বামীর ফাইলগুলোতে আমার একটা ছবি দেখেছিল সে। তুমি আমাকে ডিভোর্স করবে? কই, বলনিতো? কি করেছি আমি? আমার কি অপরাধ ছিল? তোমাকে ভালোবাসি, শুধু এজন্যই আমাকে চলে যেতে হবে? আমাকে ছাড়া ভালো থাকবে তুমি?
তুমি তাহলে ভালোই থেকো। আমি জলে যাই। এক মহাসমুদ্র জল ডাকছে আমায়।
আঁধার কাটছে একটু একটু করে। কান্নার রঙ আমি লুকাতে পারি, কিন্তু শব্দ পারিনা। এমনকি সাগরের গর্জন ছিঁড়ে সেই শব্দ সুমির কানে চলে যায়।
‘কাঁদছ তুমি। কাঁদতে থাকো। শুধু একলা আমিই কাঁদব নাকি! টিস্যু লাগবে’?
‘তোমার হাতটা ধরতে ইচ্ছে করছে খুব। দিবে, ধরতে’?
‘ধর, যদি না দিই’?
‘তুমি কি আর কোনদিন ভালোবাসবে আমাকে? পারবে’?
‘যদি, না বাসি আর’?
‘আমি মরে যাব’।
‘তুমি তাহলে মরেই যাও। তোমার মরে যাওয়াই ভালো’।
কিছুক্ষণ মৌনতা।
‘আচ্ছা, একটা গান শুনবে’? আমি জানি সুমি ভালো গান করে। তবু ভনিতা করলাম।
‘যদি না শুনি’?
‘বুঝি গো রাত পোহালো,
বুঝি ওই রবির আলো,
আভাসে দেখা দিল গগন পারে।
সমুখে ওই হেরি পথ, তোমার কি রথ পৌঁছাবে না মোর দুয়ারে’।
‘কি সাহেব, রথ পৌঁছবে এবার’?
‘কোথায়’?
‘জলে। সাগরের জল ডাকছে আমাদের। জলে চলো
‘ছোটবেলায় একটা গোয়েন্দা গল্প পড়েছিলাম। এক লোক আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছিল রাতে সে একজনকে খুন করতে দেখেছে। গায়ে তার লাল কোট। বিপক্ষ উকিল সাথে সাথে ধরে ফেলেছিল সে মিথ্যে বলছে। আচ্ছা, চাঁদের আলোয় লাল রঙকে কেমন দেখায় বলতো’?
‘আজ তো চাঁদ নেই। এই গল্প কেন বলছ’?
‘চাঁদ কেন, দিনের আলোতেও তো তোমাকে চিনতে পারিনা সময় সময়’।
জলে ভেজা বাতাস আমাদের আদ্র করে দিচ্ছে। ভাগ্যিস চাঁদটা নেই। থাকলে চোখের কোনে জমা জল লুকিয়ে রাখা কষ্ট হত খুব। সুমি’র হাতটা ধরতে ইচ্ছে করছে খুব। হাতটা কি এখনও শীতল হয়ে আছে? মৃত্যুর মত শীতল?
এক সপ্তাহ আগের কথা। মুখ থেকে ফেনা বের হচ্ছে। জামাটা ভেজা। হাত ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। জরুরি বিভাগের ওয়ার্ডে সুমি’র সেই মুখ আমি ভুলতে পারছি না এখনও। বিষ খাওয়া রোগী আসলে কি পুলিশ কেস হয়? কারা যেন আমাকে জেরা করছিল। কঠিন কঠিন প্রশ্ন।
‘সুমি বিষ খায়নি। আত্মহত্যার চেষ্টা করেনি। ওকে আমি হত্যা করতে চেয়েছিলাম’।
বিবেকের গহীনে চিৎকার করতে থাকা শব্দগুলো ওঠেনি কোনো রেকর্ডারে, কোনো ফাইলে, কোনো টিভি ক্যামেরায়। পরাজিত মানুষের কণ্ঠস্বর ভেঙে দেন নাকি বিধাতা।
সুমি’র সাথে ঘর বাঁধি দুই বছর আগে। তখন আমি রীতিমত বিধ্বস্ত। পাঁচ বছরের প্রেমটার সাথে ভেঙে গেছে আত্মবিশ্বাস। প্রকৌশলের সনদটা শুধুই একটা সাদা কাগজ হয়ে পড়ে আছে আলমারিতে। অহনা নাকি বিয়ে করেছে আয়কর বিভাগের জাঁদরেল এক অফিসারকে। আর বেকার আমাকে পরিবার ‘বেঁধে দিল বন্ধনহীন গ্রন্থি’র সাথে। ‘চলতি হাওয়ার পন্থী’ আমি হতে পারিনি সেদিনও, আজও। বিয়ের রাতে ম্যসেঞ্জারে অহনার মেসেজ, ‘সুখে থেকো। ভালো থেকো, আমাকে ছাড়াই’ ওলট পালট করে দেয় আমাকে। সেই ঝড়ে টালমাটাল হতে বসে আমার সংসার। ‘সবাই কি তোমার মত এত নিপুণ আর বিশ্বস্ত নাবিক হয়, সুমি?’ এই কথাটা বলা হয়নি কোনদিন।
আমি কবিতা পড়িনি কোনদিন। কিন্তু একদিন দেখি সুমি আবৃত্তি করছে, ‘তবু জানি, নারীর হৃদয়-প্রেম-শিশু-গৃহ- নয় সবখানি; অর্থ নয়, কীর্তি নয়, সচ্ছলতা নয়-‘। আমি চমকে উঠি।
‘কি বলছ এসব’?
‘কবিতা পড়ছি। জীবনানন্দের কবিতা। পড়নি কোনোদিন’?
আমি তখন পড়ছিলাম ম্যসেঞ্জারে পাঠানো অহনার কথা। ওর সুখের কথা, ঐশ্বর্যের কথা। একাকীত্বের কথা। একাকীত্ব নাকি তীব্র এক আগুনের নাম। ও নাকি সেই আগুনে পুড়ে পুড়ে যাচ্ছে। ও এখন আমাকে মলম ভাবতে চাচ্ছে।
সুমি’র ভালোবাসা, বিশ্বস্ততা, ত্যাগ বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আমি খুব ভালো মলম হতে চেয়েছিলাম। আচ্ছা, আমি যখন রাতের পর রাত ছাদে ফোনে কথা বলতাম, আর সুমি’কে বলতাম জরুরি কাজ, ও কি কিছু আঁচ করতে পেরেছিল? কেন কোনদিন আমাকে বলেনি কিছুই?
তারপর হঠাৎ যেদিন চলে গেলাম সেন্ট মার্টিন দ্বীপে, তখনও চুপ করে ছিল মেয়েটা। আমার ফোন কখনই হাতড়াতো না সুমি। কিন্তু যখন তখন ইমো, ম্যসেঞ্জারের টুংটাং কি শুনতে পেত? পড়ুয়া মেয়েটা গোয়েন্দা গল্প পড়ে বড় হয়েছিল। এত বড় একটা অপরাধি এত বিশাল বিশাল অপরাধ করে বসে আছে, আর সে কিছুই বুঝছে না, এও সম্ভব?
কয়েক সপ্তাহ আগের কথা। টিভিতে হঠাৎ একটা খবর দেখে আমি চমকে উঠি। দুর্নীতির দায়ে অনেক বড় বড় রাঘব বোয়াল নাকি ধরা পড়ছে। একটা লোক নাকি হাতে নাতে ঘুষের টাকা সহ ধরা পড়েছে। অনেক চেষ্টা করছে সে ক্যামেরার সামনে থেকে মুখটা লুকিয়ে রাখতে। কিন্তু আমি চিনে ফেলেছি তাকে। সাথে সাথে ফোন দিই অহনাকে। কান্নায় ভেঙে পড়া মেয়েটা স্বামীর অপরাধে মুষড়ে পড়েছে। এক ভয়ঙ্কর পাশবিক ‘ভালো লাগা’ ভর করে আমার উপর। মলম থেকে আমি তখন উত্তরীয় হতে চেয়েছিলাম। একটার পর একটা খবর আমাকে আনন্দে ভাসিয়ে দেয়। ওর স্বামী নাকি খুব খারাপভাবে ফেঁসে যাচ্ছে। জেল হয়ে যাবে অনেকদিনের। ডিভোর্সটা হলেও হয়ে যেতে পারে।
সেদিন রাত বারোটা পর্যন্ত কথা হয় ফোনে। পরেরদিনই আমরা আবার কথা বলব বিচ্ছেদের উকিলের সাথে। একসাথে দুইটা কেস পেয়ে যেতে পারে লোকটা। ফাইল তৈরি হয়ে আছে। আমার ভিতরে কি কোন অপরাধ বোধ কাজ করছিল? কিংবা ভয়? ঘরে ঢুকতেই সুমি’কে দেখে আমি মাথা ঘুরে পড়ে যাই। নির্বাক একটা মুখ, ফেনা বের হচ্ছে জিহ্বা বেয়ে, শাড়িটা ভেজা। সামলে নিয়ে হাতটা ধরতেই দেখি বরফ শীতল কয়েকটা আঙুল। আর একটা চিরকুট।
বাসর রাতেই একটা মেসেজ পেয়ে তুমি চলে গিয়েছিলে বারান্দায়। তোমার বারান্দাটায় আমাকে কখনো নেবে তুমি?
একটা হাসিমাখা মুখের ছবি ঘণ্টায় ঘণ্টায় আছড়ে পড়ে তোমার ফোনের কাঁচে। এই কাঁচের দেয়ালটা ভাঙবে তুমি? শুধু আমার জন্য?
দিবস পালন করা শিখিনি আজও। তবু বিয়ের পর আমার প্রথম জন্মদিন, বারোটায় আমার জন্য নিয়ে আসবে অনেকগুলো গোলাপ, লাল গোলাপ, তুমিই বলেছিলে। একটা পর্যন্ত বসেছিলাম। তুমি এলে খালি হাতে। তোমার ওয়ালেট থেকে একটা কাগজ বের হয়েছিল। একটা পিজ্জার দোকানের বিল। পিজ্জা, সূপ, আইসক্রিম সব একলা খেয়েছিলে তুমি? এত পেটুক তো তুমি নও।
স্কুলের বান্ধবীরা মিলে একবার গিয়েছিলাম সিনেমা দেখতে। টিকিট কাটার লাইনে দাঁড়িয়ে আমি চমকে উঠি। দূরে চলে গিয়ে ফোন করি একজনকে। সে বলল অফিসে মিটিং করছে। বান্ধবীদের চোখের জল দেখাতে খুব লজ্জা করছিল। আমার কোনো বান্ধবী তোমাকে চিনে না। তোমার সাথের মেয়েটা কি শুধুই বান্ধবী তোমার?
সেই বান্ধবীদের একজনের স্বামী বিচ্ছেদের উকিল। আজ সন্ধায় ফোন করেছিল আমাকে। তার স্বামীর ফাইলগুলোতে আমার একটা ছবি দেখেছিল সে। তুমি আমাকে ডিভোর্স করবে? কই, বলনিতো? কি করেছি আমি? আমার কি অপরাধ ছিল? তোমাকে ভালোবাসি, শুধু এজন্যই আমাকে চলে যেতে হবে? আমাকে ছাড়া ভালো থাকবে তুমি?
তুমি তাহলে ভালোই থেকো। আমি জলে যাই। এক মহাসমুদ্র জল ডাকছে আমায়।
আঁধার কাটছে একটু একটু করে। কান্নার রঙ আমি লুকাতে পারি, কিন্তু শব্দ পারিনা। এমনকি সাগরের গর্জন ছিঁড়ে সেই শব্দ সুমির কানে চলে যায়।
‘কাঁদছ তুমি। কাঁদতে থাকো। শুধু একলা আমিই কাঁদব নাকি! টিস্যু লাগবে’?
‘তোমার হাতটা ধরতে ইচ্ছে করছে খুব। দিবে, ধরতে’?
‘ধর, যদি না দিই’?
‘তুমি কি আর কোনদিন ভালোবাসবে আমাকে? পারবে’?
‘যদি, না বাসি আর’?
‘আমি মরে যাব’।
‘তুমি তাহলে মরেই যাও। তোমার মরে যাওয়াই ভালো’।
কিছুক্ষণ মৌনতা।
‘আচ্ছা, একটা গান শুনবে’? আমি জানি সুমি ভালো গান করে। তবু ভনিতা করলাম।
‘যদি না শুনি’?
‘বুঝি গো রাত পোহালো,
বুঝি ওই রবির আলো,
আভাসে দেখা দিল গগন পারে।
সমুখে ওই হেরি পথ, তোমার কি রথ পৌঁছাবে না মোর দুয়ারে’।
‘কি সাহেব, রথ পৌঁছবে এবার’?
‘কোথায়’?
‘জলে। সাগরের জল ডাকছে আমাদের। জলে চলো
0 Comments