কালিয়াকৈরে মাওলানা এমদাদুল হকের বিরুদ্ধে পৌর ছাত্রলীগের আহব্বায়ক ও শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ

 


নিজস্ব প্রতিবেদক : বনের জমি দখল করে গরুর খামার, বসত বাড়ি নির্মাণ, দোকানপাট নির্মাণ, মাদরাসার ছাত্র দিয়ে গাড়ি ভাংচুর, জোরপূর্বক অন্যের জমির উপর দিয়ে রাস্তা নির্মাণ, ছাত্রলীগ নেতা ও শিক্ষককে হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর, দোকানদারদের মারধরসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডের অভিযোগ পাওয়া গেছে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা এলাকার দারুল উলুম মাহামুদ নগর মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা এমদাদুল হকের বিরুদ্ধে। তার অপরাধ কার্মকান্ডের সাথী হিসেবে রয়েছে তারই দুই ভাই মাওলানা লিয়াকত ও মাওলানা আশরাফুল ইসলাম। তারা দু’জনেই ওই মাদ্রাসায় চাকুরী করেন। তবে এলাকাবাসির অভিযোগ মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল ও একজন মাওলানা হয়ে কিভাবে একের পর এক অপরাধমূলক কর্মকান্ড করে বহাল তবিয়তে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।  

মাওলানা এমদাদুল হক (৩৮)। গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার ডাইনকিনি এলাকার সিরাজুল ইসলাম ওরফে খোদা বক্সের ছেলে। তিনি কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রাস্থ এলাকার দারুল উলুম মাহামুদ নগর মাদ্রাসার প্রিন্সিপালের দায়িত্ব পালন করছেন। তার নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে তার অপর দুই ভাই মাওলানা লিয়াকত ও মাওলানা আশরাফুল ইসলামকে এবং মাদ্রাসার ছাত্রদের ব্যবহার করে থাকে। 

কালিয়াকৈর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে তার নির্যাতনের শিকার বেশ কয়েকজন ভোক্তভোগীর সাথে কথা বলে চাঞ্চল্যকর তথ্য মিলে তার বিরুদ্ধে। গত ২০ অক্টোবর সকালে কালিয়াকৈর পৌর ছাত্রলীগের আহব্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন (সবুজ) ও তার চাচা জাতির পিতা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারি শিক্ষক মো: আখতার হোসেন গংদের জমির উপর দিয়ে জোরপূর্বক রাস্তা নির্মাণ করতে যায় চন্দ্রাস্থ দারুল উলুম মাহামুদ নগর মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা এমদাদুল হক। এসময় পৌর ছাত্রলীগের আহব্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন ও তার চাচা শিক্ষক মো: আখতার হোসেন বাঁধা দিতে গেলে মাদ্রাসার ছাত্রদের দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হামলা করে। হামলায় তারা চাচা ও ভাতিজা দুজনেই গুরুতর আহত হন। তাদের বাঁচাতে গিয়ে হামলার শিকার হন চন্দ্রাস্থ হাজী মোহাম্মদ আলী সুপার মার্কেটের বেশ কয়েকজন দোকানদার। 

হামলার শিকার গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে কালিয়াকৈর পৌর ছাত্রলীগের আহব্বায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন (সবুজ) ও তার চাচা জাতির পিতা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারি শিক্ষক মো: আখতার হোসেনকে প্রথমে কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য সফিপুর মডার্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ঘটনায় কালিয়াকৈর থানায় ওই মাওলানাকে প্রধান আসামী করে ৮জনের নাম উল্লেখ্য করে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। 

বিগত ২০০৪ সালে রাস্তা নির্মাণকে কেন্দ্র করে মাওলানা মালেক ফারুকী নামের এক ব্যক্তিকে মারধর করে। পরে স্থানীয়ভাবে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়। 

মাওলানা মালেক ফারুকী এ প্রতিবেদককে মোঠোফোনে জানান, যেহেতু বিষয়টি মীমাংসা হয়ে গেছে ওই ব্যপারে আর কোন কথা বলতে চাই না। তবে রাস্তার বিষয় নিয়ে তার সাথে ২০০৪ সালে মাওলানা এমদাদুল হকের সাথে ঝামেলা হয়েছিল।  

৫/৬ বছর আগে চন্দ্রাস্থ জেবিএ টাওয়ার ভবন নির্মাণের সময় স্থানীয় শামসুল হক ও তার ভাতিজা জাকির হোসেনের জমি জোরপূর্বক জবর দখল করে সেখানে ঘর তুলে। এসময় শামসুল হক ও তার ভাতিজা জাকির হোসেন বাঁধা দিতে গেলে মাওলানা এমদাদ তার মাদ্রাসার ছাত্রদের দিয়ে চাচা-ভাতিজাকে বেধম মারধর করে। এসময় স্থানীয়রা এগিয়ে এসে তাদের উদ্ধার করলে প্রাণে বেঁচে যান তারা। 

হামলার শিকার জাকির হোসেন এ প্রতিবেদককে মোঠোফোনে বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। 

বেশ কিছুদিন আগে মাওলানা এমদাদুল হকের নেতৃত্বে মাদ্রাসার ছাত্রদের দিয়ে তাকওয়া পরিবহনের কয়েকটি বাস ভাংচুর করা হয় এবং ড্রাইভারদের ধরে নিয়ে গিয়ে বেধম মারধর করা হয়। কিন্তু প্রাণ ভয়ে ওই ঘটনায় পুলিশে কেউ কোন অভিযোগ দেননি। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তাকওয়া পরিবহন বাসের এক চালক জানান, সেদিন মাওলানা এমদাদ তার ব্যক্তিগত গাড়ী নিয়ে আসছিলেন। কোন কারণ ছাড়াই আমাদের গাড়ীর সামনে এসেই তার গাড়ী থামিয়ে রাখেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রায় শতাধিক মাদ্রাসার ছাত্ররা এসে আমাদের গাড়ী ভাংচুর করতে থাকে এবং আমাদের ড্রাইভারদের ধরে নিয়ে গিয়ে বেধম পিটাতে থাকে। ঘটনায় কোন মামলা বা পুলিশকে জানালে তারা প্রাণে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেন। তাই প্রাণের ভয়ে কোন অভিযোগ দরা হয়নি।  

বছর দুই আগে দারুল উলুম মাহামুদ নগর মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা এমদাদুল হকের নেতৃত্বে ওই মাদ্রাসার ছাত্ররা শ্যামলী পরিবহণের একটি বাসে হামলা করে ভাংচুর চালায়। ঘটনায় চন্দ্রায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা তাকে আটক করে। পরে চন্দ্রা এলাকার ব্যবসায়ীদের অনুরোধে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপরও তার বেপরোয়া থেমে থাকেনি। 


গত এক বছর আগে চন্দ্রা এলাকায় ষাটোর্ব্ধ এক বৃদ্ধা নারী মনোয়ারার একটি গাভী পিটিয়ে পা এবং ঘাড় ভেঙ্গে দেয়। পরে দেড় লাখ টাকার ওই গাভী মাত্র ২০ হাজার টাকায় কসাইয়ের কাছে বিক্রি করে দেন। ঘটনায় থানায় একটি অভিযোগ দিয়েছেন ওই বৃদ্ধা।

কান্নাজড়িত কন্ঠে ওই বৃদ্ধা জানান, থানায় অভিযোগ করার পর মাওলানা এমদাদ ও তার ভাই মাওলানা আশরাফ সহ বেশ কয়েকজন তার বাড়িতে আসেন এবং তার হাতে-পায়ে ধরে একটি গাভী কিনে দেওয়ার কথা বলে আশ্বাস দেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত তার গাভী কিনে দেননি। তিনি এর বিচার দাবী করেন। আল্লাহ এর বিচার করবেন। একটি বোবা প্রাণি এভাবে নির্মমভাবে হত্যা করতে পারে। তারা কিভাবে মাওলানা হয় আবার মাদ্রাসা চালায়। বিষয়টি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন ওই বৃদ্ধা। 

মাদরাসাকে পুজি করে প্রায় এক একর বনের জমিতে থাকা শত শত গজারি গাছ কেটে বনের জমি দখল করে বসত বিটা, গরুর খামার ও বেশ কয়েকটি দোকানপাট গড়ে তুলেছেন। 

কালিয়াকৈর উপজেলার ভাতারিয়া মৌজায় জাল-জালিয়াতি করে জমি বিক্রিরও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। 

এছাড়া গত গত ১২ আগস্ট ২০২০ তারিখ রাত ৯টার দিকে এমদাদুল হকের নেতৃত্বে তার ভাই ইয়াকুব, মোহাম্মদ আলী, আশরাফুল ইসলাম এবং লিয়াকত সংঘবদ্ধভাবে তাদের ছোট ভাই ইছহাকের স্ত্রী সুমিকে এলোপাতারিভাবে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। পরে অজ্ঞান অবস্থায় অন্যত্র ফেলে রেখে চলে যায়। ঘটনায় কালিয়াকৈর থানায় সুমি বাদী হয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। শুধু তাই নয় এই ঘটনায় সুমি বাদী হয়ে বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ সিরাজগঞ্জ আদালতে তাদের নাম উল্লেখ্য করে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি বর্তমানে চলমান রয়েছে। 

এসব ব্যাপারে অভিযুক্ত দারুল উলুম মাহামুদ নগর মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা এমদাদুল হকের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। 

বনের জমি দখল করে গরুর খামার, বসতবাড়ি নির্মাণ ও দোকানপাট গড়ে তোলার ব্যাপারে কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা বন বিট কর্মকর্তা মঞ্জুরুল ইসলাম জানান, বিষয়টি জানা ছিল না। তবে খোঁজ নিয়ে দেখব। 

কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোনায়ার হোসেন চৌধুরী জানান, পৌর ছাত্রলীগ নেতা ও এক শিক্ষককে মারধরের ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ হয়েছে। তদন্ত চলছে। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Post a Comment

0 Comments